X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অভিনেত্রী যখন ব্যক্তি-আক্রমণের শিকার

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:০৩আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:০৩

নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া বিশাল ভরদ্বাজের নতুন চলচ্চিত্র খুফিয়ার ফর্ম ও কন্টেন্ট নিয়ে যত না আলোচনা তা চেয়ে বেশি চলছে সিনেমার বাংলাদেশ অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের উপস্থিতি নিয়ে। একই সঙ্গে খুব বিশেষজ্ঞের মতো বলা হচ্ছে যে বাঁধন বাংলাদেশকে ছোট করেছেন।

সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অমর ভূষণ রচিত উপন্যাস ‘এস্কেপ টু নো হোয়্যার’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘খুফিয়া’ তৈরি করেছেন বিশাল ভরদ্বাজ। ‘খুফিয়া’, সিনেমার পরতে পরতে আছে গোয়েন্দাদের রহস্যময় আচরণ, প্রতিশোধ স্পৃহা আর বিশ্বাস-অবিশ্বাসের নানা আয়োজন। কতটা ভালো চলচ্চিত্র হয়েছে, কতটা ভালো সিনেমাটোগ্রাফি আছে এতে সেসব আলোচনা চলাটাই স্বাভাবিক। কেউ প্রশংসা করবেন, কেউ বা বলবেন কোনও সিনেমাই হয়নি।

কিন্তু একটা সিনেমাকে কেন্দ্র করে একজন অভিনেত্রীকে ব্যক্তি-আক্রমণ করাই যখন মুখ্য হয়ে ওঠে তখন সেটা নিয়ে কথা বলা জরুরি। বলিউডের এই ছবিটিতে অভিনয়ের অফার পেয়েছিলেন আরও দুজন অভিনেত্রী, তারা অফার ফিরিয়ে দেওয়ার পর গ্রহণ করেছেন বাঁধন। এই গ্রহণ করাটা নিশ্চয়ই তার অন্যায় হয়নি। কিন্তু অন্যায় বলা হচ্ছে এবং বলছেন কিছু সুশীলও।

বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রীর প্রথম বলিউড অভিষেক হওয়ায় তা দেশের মানুষের বাড়তি মনোযোগ কেড়েছে। কেন তিনি সমকামী চরিত্রে অভিনয় করেছেন–  এমন প্রশ্ন রেখে এখন তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে। বলতে গেলে ভার্চুয়াল জগতে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ের সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু যখন তাকে ব্যক্তিগতভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করা হয়, তখন আর হালকাভাবে নেওয়ার জায়গা থাকে না।

পর্দায় বাঁধন শরীর প্রদর্শন করেননি। ছবির কনটেন্ট অনুযায়ী তিনি ডাবল এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এবং সেখানে হালকা একটু ছাপ আছে সমকামিতার। আর সেটা নিয়েই মন্তব্যের স্রোত। সমকামিতা আমাদের সমাজে আছে এবং বেশ জোরালোভাবেই আছে। সেটা ছবিতে এলেই সমস্যা?

আজমেরি হক বাঁধন চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন এবং সেটা তিনি স্বাচ্ছন্দ্যেই করেছেন। একজন পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে সমকামীর চরিত্র বলে নিশ্চয়ই আলাদা করে কোনও ভয় কাজ করেনি তার, নেগেটিভিটি নিয়ে এতটা ভাবেননি। কিন্তু ছবি করার পর সেটা এখন তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

‘খুফিয়া’ স্পাই থ্রিলার ঘরানার ছবি হলেও এর ভিত্তি মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং ঘৃণা। কার্গিল যুদ্ধের পর ভারত পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের কর্মকাণ্ড, সঙ্গে বাংলাদেশের এনএসআইর একজন হিসাব কর্মকর্তা (বাঁধন-অক্টোপাসের চরিত্র)-এর আর্থিক লাভ চাওয়ার পাশাপাশি পারস্পরিক সম্পর্ক এসেছে ছবিতে।

সিনেমায় মানুষ যে চরিত্রে অভিনয় করেন ব্যক্তিজীবনেও তিনি সেরকম– এটা এক ভয়ংকর ভাবনা। দুঃখজনক হলো সামাজিক মাধ্যমে সে তর্কটাই করছেন অনেকে। বাঁধনের পোশাক থেকে পর্দায় উপস্থিতি, অভিনয় যে দুর্দান্ত হয়েছে সেই আলোচনাটা নেই। বলিউডের শক্তিময়ী অভিনেত্রী টাবুর সঙ্গে জীবনে পোড় খাওয়া এক তরুণীর দৃঢ়তার গল্পটা কেউ বলছে না।

যৌন প্রবৃত্তি এবং তার কারণে পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়েন– এগুলো তো স্বাভাবিক আমাদের সমাজে, জীবনে। যেন মনে হচ্ছে সহজ, সাবলীল ভঙ্গিতে অভিনয় করতে পারাটাই দোষ। আমি ছবি ভালো বা খারাপ সেটা বলছি না, কিন্তু আমার মনে হয়েছে, এ ধরনের ছবিতে যে মনন এবং সংবেদনশীলতা দরকার, তার মান শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ধরে রেখেছেন বাঁধন। তার স্ক্রিন টাইম কম, কিন্তু দর্শকের ওপর প্রভাব বেশি। আমাদের এই মানসিকতা বহু অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারের রেখাচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে দেয় না।

গুপ্তচরেরা যে সাধারণ মানুষের মতোই; তাদেরও জীবনে নানা ওঠানামা আছে, অসহায়ত্ব আছে, সেটা দেখানোর চেষ্টা আছে ছবিতে। সে ক্ষেত্রে পরিচালক কতটা সফল হয়েছেন সেটা দর্শক বলবে। তবে বাস্তবের সঙ্গে এই ছবির কাহিনির মিল খুঁজতে গেলে সমস্যা তৈরি হবেই। তখনই মনে হবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কি এমন? বাংলাদেশের তো আলাদা কোনও প্রতিরক্ষামন্ত্রীই নেই।

ছবিতে বাঁধনের অংশটুকুর প্রায় পুরোটাই কৃষ্ণা মেহরা তথা কেএম-এর চরিত্রে অভিনয় করা টাবুর সঙ্গে। প্রখ্যাত তারকার সঙ্গে সমান তালেই অভিনয় করেছেন তিনি। টাবুর সঙ্গে অক্টোপাস বাঁধনের রসায়নটাই তো সিনেমা। ভালো চলচ্চিত্রকারের হাতে পড়ে বাঁধনের এক্সপ্রেশন, হাঁটা, কথা বলার ভঙ্গি সবই সাধারণ বাংলা সিনেমার চাইতে আলাদা হয়েছে। ছবিতে তিনি আবেদনময়ী, আবার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে তার সংগ্রামের কারণে ডাবল এজেন্ট।

বাংলাদেশে যেন ইসলামি মৌলবাদীরা ক্ষমতায় না আসে কিংবা জঙ্গিরা যেন সারা দেশে বোমাবাজি না করতে পারে সেজন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশকে আইএসআইর প্রভাবমুক্ত রাখতে চায়। এরকম একটা কাহিনি আছে ছবিতে। দেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট নিজের দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে অন্য একটি দেশের এজেন্ট হয়ে কাজ করবে, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হয় না আমাদের কাছে। তবে সিনেমা তো সিনেমাই, বাস্তব নয়, ফিকশনের কোনও সীমা থাকে না। বাস্তব হলো বাঁধনের সাহসী দুর্দান্ত অভিনয়।

লেখক: সাংবাদিক   

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
মাধ্যমিকে ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
মাধ্যমিকে ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
সর্বশেষসর্বাধিক