X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

অবজার্ভ, মনিটর, অ্যাডজাস্ট, অ্যাকোমোডেট

প্রভাষ আমিন
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩২আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩২

এবার নির্বাচনে বিএনপি আসবে, এমনটাই ধারণা ছিল সবার। এমনকি ক্ষসতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপি নির্বাচনে আসছে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বারবার দলীয় নেতাকর্মীদের বার্তা দিতে চেয়েছেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সবাই যেন জনগণের কাছে যায় এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়। আমার ধারণা ছিল, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর এবার অন্তত একটি ভালো নির্বাচন হবে। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের চাপে হলেও এবার অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আর সেটা নিশ্চিত করতে পারলে বিএনপিও নির্বাচনে আসবে। তারচেয়ে বড় কথা ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি আরো একবার নির্বাচন বর্জন করার ঝুঁকি হয়তো নেবে না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিএনপি আবারও নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। বিএনপি এখন সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করছে।

গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই বিএনপি একটা নির্দিষ্ট রুটিনে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার-সোমবার হরতাল/অবরোধ, মঙ্গলবার বিরতি, বুধবার-বৃহস্পতিবার হরতাল/অবরোধ, শুক্রবার-শনিবার বিরতি। একমাসের বেশি সময় ধরে এই একঘেয়ে, বিরক্তিকর ও অর্থহীন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তাদের আন্দোলনের এখন চূড়ান্ত সময়। আর একমাসের মধ্যেই নির্বাচন। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন দেখে তা মনে হচ্ছে না। তারা খুব ঢিমেতালে লক্ষ্যহীন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গোপন জায়গা থেকে রিজভী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অবরোধের আগের দিন কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। ব্যস, আন্দোলন সফলের দাবি।

মাঠে জনগণ তো দূরের কথা, নেতাকর্মীরাও নেই। সরকার যতই নির্যাতন করুক, তাদের পতন ঘটাতে হলে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করতে হয়। যে আন্দোলনে জনগণ সাথে নেই, সে আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

বিএনপি নির্বাচনে না আসায় পাল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৯টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। পরিসংখ্যানের হিসাবে ৬৫ ভাগ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু তারপরও এটিকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে না। ৪৪টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুটি দল অংশ নিলেই কার্যত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়।

আওয়ামী লীগের আসলে নির্বাচন নিয়ে অনেকগুলো পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি নির্বাচনে এলে জোট-মহাজোট মিলে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামতো। কিন্তু বিএনপি না আসায় সরকারের সামনে এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। অংশগ্রহণমূলক দেখাতে যত বেশি সম্ভব দল ও ব্যক্তিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ তার বিদ্রোহীদের ছাড় দিয়ে মাঠে নামতে উৎসাহিত করছে। যত বেশি প্রার্থী, তত বেশি ভোটার আসবে কেন্দ্রে; এমনটাই আওয়ামী লীগের ভাবনা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে আওয়ামী লীগ তার শরিকদের আলাদা নির্বাচন করতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু শরিকরা আলাদা নির্বাচনে আগ্রহী নয়। তারা নিজেদের স্বকীয়তা, নিজেদের প্রতীক বিসর্জন দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়। শরিকদের ভয়টাও অমূলক নয়। বিএনপি বর্জন করায় এখন মাঠের যে চিত্র দাঁড়িয়েছে, তাতে শরিকদের পক্ষে আলাদা নির্বাচন করে জিতে আসা মুশকিল।

একবার ভাবুন, যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, তারা সবাই যদি নিজ নিজ প্রতীকে আলাদা আলাদা নির্বাচন করে, ফলাফল কী হতে পারে? জাতীয় পার্টি হয়তো নিজেদের যোগ্যতায় গোটা পাঁচেক আসন জিততে পারে। বাকি ২৯৫ আসনই তো হয় আওয়ামী লীগ, নয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা জিতবে। পরিস্থিতি তেমন হলে শরিকদের জন্য তো বটেই, আওয়ামী লীগের জন্যও তা অস্বস্তিকর হবে। আবার সবাই মিলে এক সাথে নির্বাচন করলে সেটাও দেখতে ভালো দেখাবে না। তাই আওয়ামী লীগ এখন ১৪ এবং মহাজোটের সাথে আলাদা কৌশলে সমঝোতা করছে।

বিশেষ করে জাতীয় পার্টির সাথে ভেতরে ভেতরে সমঝোতা হলেও প্রকাশ্যে হয়তো দেখানো হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে। জাতীয় পার্টি আসলে ভয় পাচ্ছে। সমঝোতা তো বটেই, এমনকি তাদের দাবি, সমঝোতার আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদেরও বসিয়ে দিতে হবে। জাতীয় পার্টির শঙ্কা, বিদ্রোহীরা মাঠে থাকলে তাদের জন্য জেতা কঠিন হবে। তবে জাতীয় পার্টির সামনে সুযোগ ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একক শক্তিতে লড়াই করে নিজেদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। তেমনটি হলে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিএনপির ভোট ব্যাংকের সহায়তা তারা পেতে পারতো। কিন্তু মানুষ আর তাদের বিশ্বাস করছে না। তাই আওয়ামী লীগের করুণায়ই তাদের জিততে হবে।

জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে পরিস্থিতিটা আওয়ামী লীগের জন্য জটিল। যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারা সবাই আসলে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট। এখন আওয়ামী লীগকেই ঠিক করতে হবে, কাকে কী দিয়ে সন্তুষ্ট করবে। একই সঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা, উৎসবমুখর পরিবেশ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন- দেখাতে হবে। আবার শরিকদের সাথে আসন ভাগাভাগিও করতে হবে। আবার নিজ দলের বিদ্রোহীরা কে কোথায় মাঠে থাকবেন, কে থাকবেন না; তাও ঠিক করতে হবে। পুরো চিত্রটা পরিষ্কার হবে ১৭ ডিসেম্বরের পর। ৭ জানুয়ারির চেয়ে আসলে ১৭ ডিসেম্বর বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেদিনই ঠিক হবে অনেকের ভাগ্য।

নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওকায়দুল কাদের। কদিন আগে তিনি বলেছেন, ‘আমরা অবজার্ভ করবো, মনিটর করবো, অ্যাডজাস্ট করবো, অ্যাকোমোডেট করবো।’ এখন হয়তো অবজার্ভ করা আর মনিটর করা চলছে। অ্যাডজাস্ট করার জন্য ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির সাথে বৈঠকও হচ্ছে। অ্যাকোমোডেট করার বিষয়টি জানতেই অপেক্ষা করতে হবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ