X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় লিঙ্গ ও শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিতর্ক 

সেগুফতা দিলশাদ
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪০আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪০

একটি দেশের বা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা হলো মানুষ গড়ার কারিগর। প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক শিক্ষা আমাদের বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করে। যা পরে আমাদের জীবনে পথ প্রদর্শনে কাজ করে, জীবনকে স্বাধীন ও পরিপূর্ণ মানুষরূপে বিকশিত হতে সাহায্য করে। শিক্ষার উপকরণগুলো সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল, কারণ প্রতিনিয়ত আপডেটেড নলেজ আসছে বিজ্ঞান ও গবেষণার বদৌলতে। 

সমাজের মৌলিক একটি উপাদান ‘মানুষ’। শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের লিঙ্গ বা সেক্স সম্পর্কে কনটেন্ট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে জেনেটিক্যাল ডিসফাংসন বা পরিবেশগত কারণে এই আইডেন্টিটি পরিবর্তনের মুখে, তখন এই শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তন আজকের নয়, কিন্তু আমাদের হাতে কোনও সায়েন্টিফিক ইভিডেন্স ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যশিক্ষা না থাকায় সমাজে সচেতনতা ছিল সীমাবদ্ধ। আমরা তাদের ঘৃণার চোখে দেখা শুরু করি, আর তারাও সমাজ ও পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নেমে পড়ে। 

দেখুন, আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি, যেখানে অনেকে কোনও কিছু বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই আবেগ তাড়িত হয়ে নিজের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান, ধর্মবোধ, মূল্যবোধ ও দায়িত্ব  ভুলে কাজ করছি, অনুসরণ করছি পাশের জনকে। ভুলে যাচ্ছি নিজের ব্যক্তিত্ব, ভুলে যাচ্ছি নিজের সন্তান বা সন্তানসম বাচ্চাদের পথ প্রদর্শন করতে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক বাবা-মা, সন্তান, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্য শিক্ষাতে স্টিগমাটাইজড ‘লিঙ্গ শিক্ষা’ ও তার ভবিষ্যত পরিণতি নিয়ে বিভ্রান্ত।

আবার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী জনগণের মনে প্রশ্ন, কেনইবা এই সংবেদনশীল বয়সে লিঙ্গ শিক্ষা? বিষয়টি হলো, আমরা কিন্তু সহজলভ্য ইন্টারনেটের যুগে সন্তানদের থামিয়ে রাখতে পারিনি এবং পারবো না। বরং তারা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল তথ্য পাচ্ছে সঠিক সোর্স অব ইনফরমেশনের অভাবে। এজন্য তাদের সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞানসম্মত ও সুচিন্তিত তথ্য জানানো জরুরি। 

মানুষের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তার সেক্স বা লিঙ্গ আইডেন্টিটি, যা কিনা তথাকথিত সেক্স ফ্যান্টাসি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়। এই আইডেন্টিটি নির্ভর করে আমাদের হরমোন, ও যৌনাঙ্গের উপস্থিতির ওপর। আমাদের দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণরূপে নিয়েই জন্মাবো, কোনও ব্যতিক্রম থাকতে পারবে না- এমনটি কিন্তু নয়।

আমাদের চারপাশে অনেকেই রয়েছেন বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল ইমব্যাল্যান্স নিয়ে, ঠিক তেমনই একটি বিষয়ের কারণে এই “তৃতীয় লিঙ্গ” হিজড়াদের জন্ম। 

এখন প্রশ্ন হলো, কারা এই ট্রান্সজেন্ডার গোষ্ঠী? ট্রান্স মানুষ তারাই যারা মানসিক ও সামাজিকভাবে নিজেদের জন্মগত সেক্স বা লিঙ্গ থেকে ভিন্ন মনে করছেন, উনি ছেলে হয়ে জন্মালেও মনে করেন উনি একজন মেয়ে, বা মেয়ে হয়ে জন্মালেও মানসিকভাবে মনে করেন উনি একজন ছেলে। এটা একটি মানসিক অবস্থা, যা ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ নামে পরিচিত। যেখানে তিনি জন্মগত বাহ্যিক লিঙ্গতে আর মানসিকভাবে থাকতে পারছেন না। তিনি পুরুষ হয়েও মেয়েলি আচরণ, পোশাক বা সেক্সচুয়ালিও তাড়িতবোধ করছেন। নিজের মানসিক ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে, এদের প্রয়োজন মানসিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া। একজন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞই পারবেন, এই বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করতে এবং সমাধানের পথ দেখাতে। 

কিন্তু ভয়ংকর বিষয় হলো, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে অনেকে খুব সহজে পর্ন ও বিভিন্ন দেশের সমকামী সেলিব্রেটিদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমকামিতায় পা দিচ্ছেন। এখানেই সমস্যাটি ব্লেন্ড হয়ে গেছে হেল্থ সায়েন্স বেইজড ইভিডেন্স ও পারিপার্শ্বিকতার গন্ডিতে বিদ্যমান ইনফ্লুয়েন্সের সাথে। আর এ জন্য সমাজে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। এই একবিংশ শতাব্দীতে অনেকেই নিজের সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মকে উপেক্ষা করে সমকামিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ছেন। কোনও হরমোনাল ক্লিনিক্ল্যাল বিশেষজ্ঞ বা মানসিক বিশেষজ্ঞের মতামত ও চিকিৎসা ছাড়াই তারা নিজেদের সমকামীর খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলছেন। এটি একটি সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ট্রেন্ডের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে সেই সব মানুষ যাদের প্রকৃতপক্ষে হরমোনাল সমস্যা রয়েছে। আমাদের ভাবা উচিত, বিষয়টি তাদের জন্য কী পরিমাণ ভয়ঙ্কর রকমের বেদনাদায়ক! 

সেক্স, সেক্সচুয়াল ওরিয়েনটেশন, জেন্ডার- এই বিষয়গুলো নিয়ে সমাজ, জাতি, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব আছে। আর এ জন্য প্রয়োজন বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা। আমাদের উচিত যারা প্রকৃত থার্ড জেন্ডার বা হিজড়া সম্প্রদায়ের, তাদের ভয় না পেয়ে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া। অপরদিকে, প্রকৃত ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ তৈরি করে সেই সব ট্রেন্ডধারীদের প্রতিরোধ করা। আর যারা সেক্স বা লিঙ্গ ক্রাইসিসে মানসিকভাবে ভুগছেন তাদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে উদ্বুদ্ধ করা। 

বাংলাদেশের মতো দেশে, প্রতিষ্ঠানিকভাবে “স্বাস্থ্যশিক্ষা” বা সেক্স এডুকেশনকে ত্বরান্বিত করা দরকার। এই লক্ষ্যে স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাইকে প্রস্তুত করতে হবে এবং সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিকে রোধ করতে, সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতন করে আশ্বস্ত করা যেতে পারে। এছাড়াও শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে স্কুল ভিত্তিক সেমিনার ও মিটিং করে তাদের প্রস্তুত করে আশ্বস্ত করতে হবে। অন্যথায়, উস্কানিমূলক আচরণের মাধ্যমে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা সহজ হয়ে যায়। যেহেতু তৃতীয় লিঙ্গ আইনত স্বীকৃত বিষয়, তাই আমাদের সকলের সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সুস্থ সিদ্ধান্ত নিয়ে একজন প্রকৃত মানুষের পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষক, ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি;  গবেষক, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পান্ত, দুবে, স্যামসনকে নিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ দল
পান্ত, দুবে, স্যামসনকে নিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ দল
সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ গেলো দুজনের
সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ গেলো দুজনের
রুনা লায়লার নতুন গান, সঙ্গে দুই তরুণ
রুনা লায়লার নতুন গান, সঙ্গে দুই তরুণ
নারী ফুটবল লিগে দলগুলো ভোটাধিকার চায়
নারী ফুটবল লিগে দলগুলো ভোটাধিকার চায়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ