বর্তমান সময়ে অর্থ সঞ্চয় এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন ব্যয়ের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য ব্যক্তিগত বাজেটিং অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাজেট তৈরি করা একটি কার্যকরী উপায়, যা একজন ব্যক্তিকে তার আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে নিজের আর্থিক অবস্থা সুসংহত রাখতে সাহায্য করে। সঠিক বাজেটিং আপনার আর্থিক লক্ষ্যের দিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং আপনাকে অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম।
বাজেটিং হলো আয়ের বিপরীতে ব্যয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা। অনেক সময় আমরা না বুঝেই অপ্রয়োজনীয় খরচ করে ফেলি, যার ফলে মাসের শেষের দিকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। বাজেটিং-এর মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পনা করতে পারেন এবং আপনার আয়ের সঠিক ব্যবহারে সক্ষম হতে পারেন। একজন ব্যক্তি যদি তার মাসিক আয় এবং খরচের একটি তালিকা তৈরি করেন, তবে তিনি বুঝতে পারবেন কোথায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হচ্ছে এবং কোন খরচগুলো কমিয়ে বা এড়িয়ে অর্থ সঞ্চয় করা সম্ভব।
বাজেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আর্থিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। আপনি আপনার আয় অনুযায়ী প্রতিটি ব্যয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন। এটি আপনাকে অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে সঞ্চয়ের জন্য একটি অংশ সংরক্ষণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। অর্থাৎ, বাজেটিং কেবল বর্তমান আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতেই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল আর্থিক ভিত্তি তৈরি করতেও সহায়ক।
ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় বাজেটিং-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা। অনেকেই ঋণের বোঝায় পড়ে যান, কারণ তারা আয়ের তুলনায়
বেশি খরচ করেন বা পরিকল্পনা ছাড়াই ঋণ গ্রহণ করেন। বাজেটিং আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কোন ঋণগুলো সঠিকভাবে মেটানো হচ্ছে এবং কতটুকু ঋণ নেওয়া উচিত। আপনি যদি আয়ের একটি অংশ ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ করেন, তবে দ্রুত ঋণমুক্ত হতে পারেন এবং ভবিষ্যতে ঋণগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে।
অনেক সময় আমরা সঞ্চয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। বাজেটিং-এর মাধ্যমে আপনি সঞ্চয়ের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। ছোট ছোট পরিমাণে সঞ্চয় করা হলেও তা দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় পরিমাণে পরিণত হয়।ভবিষ্যতের অনিশ্চিত খরচ, যেমন চিকিৎসা ব্যয় বা হঠাৎ আর্থিক বিপর্যয়ের সময় এই সঞ্চয় আপনার সহায়ক হতে পারে। একটি সঠিক বাজেট আপনাকে শুধুমাসিক খরচ নয়, বরং ভবিষ্যতের বড় লক্ষ্যগুলোর জন্যও সঞ্চয় করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
বাজেটিং-এর অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এটি আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করে। আপনি যখন আয়ের সঠিক ব্যবহার এবং খরচের পরিকল্পনা করতে পারেন, তখন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি অপ্রয়োজনীয় ঋণ এবং খরচের চাপ থেকে মুক্তি দেয়। ফলে, আর্থিক অবস্থান সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন এবং জীবনে একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবেন।
সংক্ষেপে, ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় বাজেটিং একটি অপরিহার্য উপায়। এটি আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে এবং অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। সঠিক বাজেটিং-এর মাধ্যমে একটি সুস্থ আর্থিক জীবনযাপন করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।
লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট; সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।