X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এবং বাংলাদেশ

নাদীম কাদির
০৬ জুন ২০১৬, ১২:৫৩আপডেট : ০৬ জুন ২০১৬, ১২:৫৮

নাদীম কাদির গত এক বছরে আমি দ্য ইকোনমিস্ট-ও বেশকিছু প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি, কিন্তু তাদের প্রকাশিত পত্রিকায় এর একটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি কখনও।
এমন খ্যাতিসম্পন্ন একটি পত্রিকায় সব ইতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিনিয়ত কেবল নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে লেখা প্রকাশ করা হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ এমনকি একেবারেই সঠিক নয়।
সম্প্রতি ইকোনোমিস্টের এক সংখ্যায় ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান এবং ব্লগার হত্যা নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, “প্রকাশ্যে সমকামী অধিকারের প্রশ্নে কিংবা ‘ইসলামে সম্ভবত সকল প্রশ্নের উত্তর নেই’ এমন ধরনের মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের ভয়ঙ্করতম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে।”
কী অদ্ভূত? কোনও মুসলিম অথবা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আল্লাহ এবং তার নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অপমানে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না? উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কথা। যেখানে মুসলিমদের ‘পবিত্র গরু’ কোরবানি দেওয়াটাও হিন্দু প্রতিবেশীদের সঙ্গে দাঙ্গার জন্ম দিয়েছিল। এর পরেও দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে এমন মনে করে।
আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, সমকামী অধিকারের প্রশ্নে জুলহাজ মান্নানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা সরকারের অন্য কেউ অবজ্ঞা করেননি। ওই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। কিন্তু, এই মুসলিম অধ্যুষিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এই বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ট্যাবু রয়েছে এবং তার হত্যাকাণ্ডের পরই কেবল এই ইস্যুটি সর্বসাধারণের আলোচনায় এসেছে।
সমকামিতা সকল সমাজে, সকল যুগেই ছিল। আর তা বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু গে, লেসবিয়ান, অথবা বাইসেক্সুয়্যালরা নিভৃতে জীবন কাটালেও জুলহাজের জীবন ছিল খোলামেলা। সরকার সমকামীদের (এলজিবিটি) ধরতে চাচ্ছে না, বরং পুলিশ খুনিদের শনাক্ত করে তাদের ছবি প্রকাশ করেছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে, এমনকি যেখানে সমকামী বিয়ে অনুমোদিত, সেখানেও সমকামীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিভৃতে জীবন কাটান। পশ্চিমা বিশ্বের জনগণও কিন্তু সমকামীদের নিয়ে উপহাস করেন।
কিন্তু ইকোনমিস্ট লিখেছে, ‘দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের কথিত ধর্মনিরপেক্ষ সরকার খুনীদের ধরার থেকেও বেশি উৎসাহী নিহতদের ভর্ৎসনা করার ক্ষেত্রে।’ যা পুরোপুরি ভুল। এরপর বলা হয়, ‘সরকার এই আতঙ্কের অভিযানে মূল হোতা হিসেবে দোষারোপ করছে বিরোধী দলগুলোকে, কিন্তু ওই অভিযোগের সপক্ষে খুব সামান্যই তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পেরেছে।’
ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার। সরকার বহুবার প্রমাণ করেছে, যাদের গ্রেফতার এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তারা মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামী অথবা তাদের অংশীদার খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সদস্য।

দ্য ইকোনমিস্ট খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলাগুলোকে সম্ভবত শেখ হাসিনার প্রতিশোধ হিসেবেই দেখতে চাইছে, যা পুরোদস্তুর অ-সাংবাদিকসুলভ পর্যবেক্ষণ। বিরোধী পক্ষের প্রচারণায় এটা জানা উচিত যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং অপরাধ করে থাকলে আপনাকে বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে।

বিএনপি আজ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তার মূলে রয়েছে তারেক রহমান এবং তার অপরিণত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর খালেদা জিয়া তার ছেলে যা বলেছেন, তা-ই করেছেন। গণতন্ত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনি আপনার বিরোধীদের ভুলের সর্বোচ্চ ফায়দা নেবেন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই গুণাবলী বেশ ভালোই রয়েছে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ৫০ ব্যক্তির প্রথম ১০ জনের মধ্যে রয়েছেন তিনি। এই কৃতিত্ব অর্জন করাটা মোটেও সহজ কিছু নয়।

আরও পড়তে পারেন: দস্যুজয়ী এক সাংবাদিকের গল্প

দ্য ইকোনমিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তারা তাকে বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করেননি। বিএনপি নেতারা তাকে এভাবে পরিচিত করতে পছন্দ করেন।

বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম সাধারণত ধন্দের মধ্যে থাকে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় এবং জনগণ যার জন্য লড়াই করেছিল সেই প্রাপ্য তাদের দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন বলে তারা মনে করছে। তবে একটি দুর্বল, ছিন্ন-ভিন্ন বিএনপির জন্য অন্য কেউ নয়, তার নেতারাই দায়ী।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম সেই শেখ হাসিনার শক্তিশালী নেতৃত্ব মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে, যার পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহস আছে, সাহস আছে সাকা চৌধুরীদের মতো যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার। তারা সম্ভবত ভুলে গেছে, মাহাথিরের শক্তিশালী নেতৃত্ব ছাড়া আজকের মালয়েশিয়া যেমন জন্ম নিত না কিংবা লে কুয়ান ইয়েও-এর শক্তিশালী নেতৃত্ব ছাড়া গড়ে উঠত না আজকের সিঙ্গাপুর।

মোদ্দা কথা হলো, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগের এই কয়েকটি বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।  এই সময়েই নির্ধারিত হবে, আগামি নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষরা জিতবেন, নাকি র‍্যাডিকেল ইসলামপন্থীদের সহযোগী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবেন। ওই ধরনের প্রতিবেদন লেখার আগে তাই পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত।
লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ