X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমরা কি দৌড় শুরু করতে পেরেছি?

তুষার আবদুল্লাহ
১১ এপ্রিল ২০২০, ১৬:১৬আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২০, ১৬:১৮

তুষার আবদুল্লাহ আমরা কি দৌড় শুরু করেছি, নাকি হেঁটে চলছি এখনও? হাফ ম্যারাথন, ফুল ম্যারাথন আমাদের সৌখিনতা, সচ্ছলতার প্রতীক। যাপিত জীবনে লেপ্টে থাকা অভ্যেস ভেঙে দৌড় দেই কী করে? তাই ঢিমেতালে হেঁটেই চলেছি আমরা। তাও আবার কালো ছায়া অনুসরণ করে। ছায়াকে টপকে যেতে দৌড় দেবো সেই শারীরিক, মানসিক শক্তিও যেন আমরা হারিয়ে বসে আছি। তাই ছায়া টপকে যাওয়ার কোনও তাড়া বা তাগিদ বোধ করছি না। কোভিড-১৯ পুরো বিশ্বকে অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। পরাশক্তি পুবের চীন থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমের ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রও কোভিড-১৯ এর কাছে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। এবং তারা এখনও বুঝতে পারছে না এই মহামারি থেকে কবে রেহাই মিলবে। কোভিড-১৯-এর সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর সাহস তারা দেখায়নি। বরং সমীহের সঙ্গে মুক্তির পথ খুঁজছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। বাঘের মতো বুক চিতিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যেন। কোভিড-১৯ বাংলাদেশকে মোটেও টলাতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশে মক্কা-মদিনার মানুষের চেয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ আছে। এমন দশহাতি মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক নেতাকর্মী তো অন্য কোনও দেশে নেই। তাই বাংলাদেশে এসে কোভিড-১৯ ভড়কে যাবে। সেই আকাশ কুসুম ভাবনায় যার যার দফতরে এলিয়ে ছিলাম আমরা। চীনে কোভিড-১৯ যখন প্রথম আত্মপ্রকাশ করে, তখন থেকে আমাদের সচেতন হওয়ার দরকার ছিল। কারণ পণ্য, অর্থ ও বিশেষজ্ঞ লেনদেনে চীনের সঙ্গে আমাদের নিত্য দিনের সম্পর্ক। আমরা ভাবলাম চীনের পণ্যের মতোই ভাইরাসও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না! করোনা লাফ দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা পাড়ি দিলো। যাওয়ার আগে পা রেখে গেছে মধ্যপ্রাচ্যে। ওই দেশগুলোতে আমাদের জনশক্তির একটি বড় অংশ থাকে। ইউরোপ, আমেরিকাতেও প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন লাখ লাখ। তাদের নিয়মিত যাতায়াত আছে বাংলাদেশে। কোভিড-১৯ এ ওই দেশগুলোতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দেশে ফিরতে শুরু করলেন। চীনের উহান থেকে নিয়ে আসা বাংলাদেশিদের নিয়ম মেনে যেভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা গেলো, সেভাবে আমরা বাকি দেশগুলো থেকে আসা প্রবাসীদের বিচ্ছিন্ন রাখতে পারিনি। বিমানবন্দর বন্ধ করতে আমরা প্রায় তিন সপ্তাহ দেরি করে ফেলি। ততক্ষণে প্রবাসীরা দেশজুড়ে গোলাপজলের মতো কোভিড-১৯ ছড়িয়ে দিলেন।

৮ মার্চ সরকারিভাবে দেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলো যখন, তখন থেকেই আমরা জানি অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর নাম। বিশেষ করে মাদারীপুরের শিবচর, মানিকগঞ্জের শিবালয় এবং নারায়ণগঞ্জের কথা জানা ছিল। তখনই পুরো দেশ থেকে এই এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যেতো। দিলে এখানকার মানুষগুলো অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো না। কিন্তু লোকে কী ভাবে, এর মধ্যদিয়ে আবার প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায় কিনা, এই ভাবনায় এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন করা হলো না। এখন দেখা যাচ্ছে ওই এলাকাগুলোর মানুষ যে এলাকাগুলোতে গিয়েছে সেখানেও কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

সময়মতো এলাকাগুলো লকডাউন না করে, ১১ এপ্রিল এসে স্বীকার করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী—ওই এলাকাগুলো করোনা বিস্তারের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কিন্তু সময়ের কাজ সময়ে না করায় এখানে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই।

পশ্চিমের দেশগুলোতেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল প্রার্থনা কেন্দ্র। তাই শুরু থেকেই মসজিদে জুমার নামাজ জামাতের সঙ্গে না পড়ার নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। গণমাধ্যমের দিক থেকেও বারবার বিষয়টি নজরে আনা হচ্ছিল। কিন্তু ইনিয়ে বিনিয়ে দেওয়া এই নির্দেশনা যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন সরকার বাধ্য হয় সরাসরি মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার নির্দেশনা দিতে। কিন্তু ততক্ষণে সামাজিক সংক্রমণ ঘটে গেছে। মীরপুর, বাসাবো অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রূপ নেয়। গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে কী থাকবে না, এই সিদ্ধান্ত নিতেও সময়ক্ষেপণ হয়। সারাদেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক এসে ঢাকায় জড়ো হয়। শ্রমিকদের স্রোত কতটা সংক্রমণ ঘটিয়ে গেলো, তার ফল পেতে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

কোভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা ধীরগতিতে চলেছি। পরীক্ষা যত কম শনাক্তও ততো কম। এভাবে হেঁটে যেতে যেতে বসন্ত বাতাস শরীরে লাগিয়ে ভেবেছি—কোভিড-১৯ বিশ্বের প্রতাপশালী দেশে কাঁপন ধরাতে পারলেও, আমাদের পারেনি। কিন্তু ফাগুন পেরিয়ে চৈত্রে এসে দেখলাম সর্বনাশ। পরীক্ষা যত বাড়ছে, তত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা।

অপরিচিত এই সময়টাকে মোকাবিলা করতে যেভাবে সম্মিলিত লড়াইয়ের প্রয়োজন, সেই লড়াইয়ে আমরা নামতে পারিনি এখনও। এলাকাভিত্তিক ঝাঁপি নামানো, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার দিকে তাকিয়েই আমরা বুঝতে পারছি কত অসমন্বিতভাবে কাজ করছি আমরা। ১১ এপ্রিলে এসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলছেন—পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। নিতে হবে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত। কিন্তু দশদিন আগেও অধিদফতরের কণ্ঠে ছিল ভিন্ন সুর। কিন্তু যখন আমরা ভাবছি কোভিড-১৯কে পরাজিত করবো দৌড়ে, ততক্ষণে কিন্তু কোভিড-১৯ অনেক দূরে চলে গেছে। জানি না এই সমন্বয়হীন শক্তি নিয়ে ‘ট্র্যাক অ্যাড ফিল্ডে উসাইন বোল্টের ভূমিকায় পৌঁছাতে পারবো কিনা।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ