X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা: রাজনৈতিক আদর্শ সত্তার এক ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৭ মে ২০২০, ১৪:১৩আপডেট : ১৭ মে ২০২০, ১৪:১৮

হায়দার মোহাম্মদ জিতু জাহাজের বয়লারে কয়লা দিতে থাকা কর্মচারী হঠাৎ সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে, এ ঘটনা বেশ পুরনো। বলা হয় তীব্র গরম এবং অনেকটা মানসিক অস্থিরতায় এসব ঘটনা ঘটে থাকে। আর এই মৃত্যু বাস্তবতায় তাকে কেউ আটকাতে গেলে তখন সে ব্যক্তি হাতের কাছে যা পান তা দিয়েই আক্রমণ করে বসেন। একে এমাক (Amuck) বলে। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে অবস্থানকে কেন্দ্র করে এরকম কিছু বিচ্ছিন্ন চিত্র দেখা গেছে। দীর্ঘ লকডাউনের পর কিছু মানুষ যেভাবে ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাতে তাদের অবস্থা জাহাজের কয়লা প্রদানকারী শ্রমিকদের মতোই মনে হয়েছে।
তবে ধারণা করা যায় এই শিথিলতা বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জোগান। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই ঈদ কিংবা দীর্ঘদিন বাসায় ছিলেন, এখন বাইরে ঘুরতে যাবেন, সে জন্যে নয়। শুধুই প্রয়োজনে। তার মানে গহনার দোকানে জুতার দোকানসহ ফ্যান্সিং ক্ষেত্রগুলোতে ভিড় করবেন সে উদ্দেশ্যে নয়। কাজেই প্রয়োজনের এই বোধ কী হতে পারে সেটা রচনা করতে হবে নিজেদেরই। তা না হলে সৃষ্টি হবে মৃত্যু প্রতিযোগিতার বিস্তীর্ণ নৈরাজ্য বাস্তবতা।

আর এই নৈরাজ্য রুডলাফ রকারের এনার্কিজম বা নৈরাজ্যবাদ চিন্তার সাড়া জাগানো ফলাফল কিংবা সেরকম বাস্তবতায় টড ফিলিপস পরিচালিত জোকার সিনেমার মতো হবে না। কারণ, প্রকৃত বাস্তবতা হলো শিল্প বা আর্টে নৈরাজ্যবাদ যতই নান্দনিক এবং উপভোগ্য হোক না কেন, বাস্তবে তা ততটাই বীভৎস এবং পরিহারযোগ্য। কাজেই সামাজিক বাস্তবতায় একে নিমন্ত্রণ না জানানোই হবে বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক।

তবে এই বোঝা এবং বোঝানোর চ্যালেঞ্জ নেওয়া জরুরি জনপ্রতিনিধিদেরই। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক হওয়ার কথা বোঝাপড়ার। কাজেই এই দায়িত্ববোধ তাদেরই। যদিও বৈশ্বিক বাস্তবতায় তাদের জীবন এখন জন ভন নিউম্যানের গেইম থিউরি নির্ভর। কারণ, ওই থিউরিতে যেমন একজনের বেড়ে ওঠার মাধ্যমে আরেকজনের ক্ষয়ে যাওয়া নির্ভরশীল অর্থাৎ ব্যস্তানুপাতিক রাজনীতিকদের জীবনেও এখন সে হাওয়া বইছে।

এখানকার রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলো বেশ এলোপাতাড়ি চুরি হয়ে যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের হাত থেকে এবং গিয়ে উঠছে অন্য পাতে। তবে এই দায় সবারই। কারণ, ক্ষমতায় থাকলে নেতাদের ঘিরে রাখে ‘তোয়াজকারী পঙ্গপাল’। আর বিরোধী পক্ষে থাকলে ক্ষমতায় যাওয়ার আসক্তি। তাছাড়া এখানে একটা প্রচলিত রীতি প্রত্যক্ষ আছে যে ইলেকশন বা কমিটিতে থাকতে পারলেই জাতে উঠে যাওয়া যায়। ফলাফল, এর প্রতি দুর্বার আকর্ষণে পুরুষ-নারী প্রত্যেকে নিজেদের সর্বস্ব বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেন না। কারণ, তারা মানেন ওইখানে গেলেই মিলবে আলাদিনের চেরাগ!

তাছাড়া বলতে হয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখানকার প্রতিনিধিরা কিছুটা হলেও বিশ্বস্ততা হারিয়েছেন এবং সেটা নিজেদের ও তাদের পূর্বসূরিদের আচরণের কারণেই। কারণ, এখন নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু একক রাজনৈতিক বিশ্বস্ততা মানা হয় না। বরং সামনে আনা হয় পারিবারিক সূত্রসহ আরও কিছুদিক, শুধু তা-ই নয়, আঞ্চলিক সিনিয়র নেতাদেরও একক সবুজ সিগন্যাল এখন যথেষ্ট নয়। বিষয়টাকে একটু নিরীক্ষণ দৃষ্টিতে দেখলে বিশ্বস্ততার সংকটই এই প্রথার জন্মের কারণ। অর্থাৎ অযোগ্যদেরও এগিয়ে দেওয়ার রেকর্ড আছে তাদের।

অথচ রাজনীতি বিষয়টা কখনোই এমন ‘বড়লোকি ঘরজামাই’ সূত্রের ছিল না। এটা বরাবরই ছিল প্রগাঢ় দায়িত্ববোধ এবং জবাবদিহির। কিন্তু বর্তমান সময়ে কমিটির পাইকারে আড়ম্বরে একক বেশ্যাপাড়া ছাড়া মনে হয় প্রায় সর্বত্র অবস্থা এমন যে কোথাও না কোথাও, কোনও না কোনও কমিটির সঙ্গে যুক্ত হতেই হবে। আর কোথাও না পারলে নিজেই কিছু না কিছু খুলে বসছেন।

এ যেন এক নব্য ফিল্মি প্রতিষ্ঠান। প্রাসঙ্গিক উদাহরণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্থার কথাই বলা যাক। বিগত দশ বছরে তাদের বিশটি ভালো ছবি নির্মাণের রেকর্ড নেই কিন্তু ঠিকই ‘কমিটি-কমিটি’ খেলায় সংবাদ শিরোনামের রেকর্ড আছে।

অথচ তাদের সামনেই আছে রাজনীতি কীভাবে করতে হয়, কী করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয় তার অনন্য উদাহরণ। সেই উদাহরণের নাম শেখ হাসিনা। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়ে নিজের জীবন নিয়ে ভালো থাকার সংজ্ঞা ছেড়ে পরিবার হত্যার ন্যায্য বিচার এবং পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন এবং এখনও এ পর্যন্ত সরাসরি বুলেট-গ্রেনেড এবং চক্রান্তের বিভীষিকায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এসব কিছু হবেই, তা জেনেও ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বৃষ্টিস্নাত বাংলায় পদার্পণ করেছিলেন। প্রকৃতিও তাকে বরণ করেছিল আনন্দাশ্রু দিয়ে। এত বাধা এত ফন্দি ফিকির, তবু তাঁর আগমন মুহূর্তেও মানুষের ঢল নেমে এসেছিল রাজপথে। সেই কন্যাই আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কিন্তু তবু কত প্রজ্ঞায় সব সিদ্ধান্তে হেঁটে চলা।

বাংলার পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে যেকোনও জায়গায় একটা ধাক্কা দিলেও আক্রান্ত ব্যক্তি সুযোগ পেলে তাকে ছাড়েন না অথচ পুরো পরিবারকে যারা হত্যা করেছে সেই তাদের পেয়েও যেভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করেন সাধারণ জনগণের মতো,  এতে তাঁর প্রতি জনগণের বেড়েছে শ্রদ্ধাবোধ এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইনের শাসন। এরকম আরও বহু উদাহরণ আছে তাঁর থেকে শেখার।

আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বিশ্বাসঘাতকতা বেশ গোপন বিনিময়ে বিক্রি হয়ে চলেছে। সেই বিক্রি এখন এতই ভয়াবহ যে যারা শেখাবেন তাদের মাঝের কিছু শিক্ষকও শৃঙ্গার রসের বিনিময়ে স্বাভাবিক এবং সর্বোচ্চ সনদও দিয়ে ফেলছেন। সে হিসেবে বলতে হয় ‘জীবনের বাস্তবতায়’ রাজনীতিকে বুঝতে অ্যারিস্টটলের পোয়েট অব পলিটিক্স ততটা প্রয়োজন নেই যতটা শেখ হাসিনার জীবন নদী বোঝা প্রয়োজন।

কারণ, ত্যাগ-সংযম-বিনয়-নেতৃত্ব-বুক ভরা সাহস, এককথায় রাজনৈতিক আদর্শ সত্তার এক ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ আমাদের শেখ হাসিনা। যে প্যাকেজে ডুব দিলে চোখে পড়বে শুধুই মানুষের জন্য দরদ, দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতা।

 

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ