X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রয়োজন

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
৩০ জুলাই ২০২০, ১৩:৫৮আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:৪৫

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী একটা প্রবাদ আছে– দুর্ভাগ্য কখনও একা আসে না। ২০২০ সালে বাংলাদেশ সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। কোভিড-১৯ বাংলাদেশের জন্য একক কোনও অভিশাপ নয়, এটা ছারখার করে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। কমবেশি বিশ্বের সব দেশ করোনার অভিঘাতের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও করোনা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্রথমে বিশ্ববাসী মনে করেছিল করোনা হয়তোবা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হবে না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে করোনা কোন দিন বিদায় নেবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।
সুতরাং বিশ্বে প্রায় দেশ লকডাউন প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যাচ্ছে। এছাড়া কোনও উপায় নেই। দীর্ঘ সময়ব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ করে দেশ যদি বসে থাকে তাহলে অনাহারে দলে দলে লোক মারা যাবে। আমাদের সরকারও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেনি। নিজের আয়ত্তের মধ্যে যা আছে তা দিয়ে মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো কোভিড-১৯ একা নয়, করোনার মধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় আর এখন চলছে প্রবল বন্যা। এসব দুর্যোগ আকারে প্রকারে ছোট নয়। দুর্যোগগুলোর প্রতি জাতির সামগ্রিকভাবে দৃষ্টি দিতে হচ্ছে।

দীর্ঘ ৫ মাসব্যাপী সরকার ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছে। শুকরিয়া যে দেশের মানুষ যার যা কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আছে তা দিয়ে দুস্থ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছে। তবু দেশব্যাপী মন্দার চাপ পড়েনি, তা নয়। এখন বন্যা মন্দাকে আরও কঠিন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যা মোকাবিলার জন্য খাদ্যসামগ্রী সরকারের মজুত আছে। এত অফুরন্ত ত্রাণ মজুত রাখা বিতরণ করাও তো কঠিন ব্যাপার। গত চার-পাঁচ মাস ত্রাণের কাজ সন্তোষজনকভাবে চলেছে। 

সেনাবাহিনীর লোকেরা যেভাবে গভীর পাহাড়ের ঘরে ঘরে পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে তার নজির সত্যিই বিরল। ত্রাণ বিতরণে সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি যে ছিল না তা নয়, তবে তা শূন্যের কোঠায় নেওয়া এই দেশে অসম্ভব, যে দলের সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন।

করোনা শুরু হওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রী তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য এক লাখ কোটি টাকার বেশ কিছু প্রণোদনা প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলে মানুষ হয়তো কর্মহীনতা থেকে রক্ষা পাবে। আর মানুষের হাতে পয়সা যাবে। জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা থাকবে না। অবশ্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যেন অর্থের অপচয় বন্ধ করা যায় তার সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। এই বিষয়ে যেকোনও শিথিলতা সমগ্র কর্মসূচিকে হতাশাগ্রস্ত করে ফেলবে। এই নিয়ে যেন সরকার শতভাগ সতর্ক হন।

এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ লাখ লোক, আর তার মধ্যে বাড়িঘর হারিয়েছে পাঁচ লাখ লোক। আবার নদীর ভাঙন বিলীন করে দিচ্ছে মাইলের পর মাইল জায়গা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে। প্রধানমন্ত্রীও বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন এবং তিনি সরকারি প্রস্তুতির কথাও বলেছেন।

বন্যা পরিস্থিতি এমন সময় সৃষ্টি হলো যখন আমরা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কাজ করছিলাম। এই বন্যায় ব্যাপক আমন, আউশের ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং সরকারের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিছু খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা উচিত, যেন কোনও হাহাকার মোকাবিলা করতে না হয়। অবশ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক গৃহিণীর মতো সেই অভ্যাস রয়েছে।

বাংলাদেশ হচ্ছে ভাটির দেশ। প্রাচীনকাল থেকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে আসছে। এখন উজানে বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় ঘন ঘন বন্যা না হলেও যখন হয় তখন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৬৫ সালে যখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এক হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা ছিল বলে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়নি। তখন সমগ্র পাকিস্তানের বাজেট হতো ৩০০ কোটি টাকা।

এখন ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে মিলেমিশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের একটা পরিকল্পনা করার কথা চিন্তা করা দরকার। বাংলাদেশের ৫৪ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারত। সুতরাং উজানের দেশকে বাদ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কথা সম্ভবত চিন্তা করা যাবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ভারতের হাতে কোনও বিষয় থাকলে তা নিয়ে ভারত খেলা করে বেশি। গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর আলোচনা হয়েছে, দুটি স্বল্পমেয়াদি চুক্তি হয়েছিল আর শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও দেবগৌড়ার সময় ৩০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়েছিল, যার মেয়াদকাল এখনও চলছে।

ফারাক্কা বাঁধের কারণে বিহারে প্রতিবছর বন্যা হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর হয়তো এই বাঁধের অস্তিত্ব না থাকতে পারে। বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ডেল্টা উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনায় কারও সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার সমন্বয় করা যায় কিনা, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পর্যালোচনা করে কোনও সমাধানে পৌঁছা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। নয়তো ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা দরকার। বছর বছর বন্যা হলে দেশ উন্নতির শিখরে যেতে পারবে না।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

 

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে ঘরের চাল, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে ঘরের চাল, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ