X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
সিনেমা সমালোচনা

হুব্বা: সামথিং লাইক আ ক্রিমিনাল’স অটোবায়োগ্রাফি!

আহসান কবির
আহসান কবির
২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৪আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৩

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার এক সময়ের ত্রাস হুব্বা শ্যামলের জীবন নির্ভর ছবি ‘হুব্বা’। অনেকবার দেখা গ্যাংস্টার নির্ভর  কিংবা ‘ডন’ টাইপের আরেক নতুন ছবি ‘হুব্বা’। ব্রাত্য বসু পরিচালিত ও মোশাররফ করিম অভিনীত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মানুষের নজরে আসা এক ছবি ‘হুব্বা’। ফিল্মি বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব এক ছবি ‘হুব্বা’। প্রিয়তম মানুষের বেঈমানি আর সন্ত্রাসের সমান্তরালে পুলিশি জীবনের ছোট্ট কিন্তু বাস্তবতার এক ছবি ‘হুব্বা’। সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং ব্যবহার করা হয়ে গেলে টিস্যু পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলার যে বাস্তবতা সেই বাস্তবতার আরেক ছবি ‘হুব্বা’। খানিক যৌন সুড়সুড়ি, গান আর মারপিট নির্ভর পুরোদস্তুর এক কমার্শিয়াল ছবি ‘হুব্বা’। ‘ডিকশনারী’র পর ব্রাত্য বসু ও মোশাররফ করিম জুটির দ্বিতীয় ছবি ‘হুব্বা’।

প্রথমেই বলা হয়েছে হুগলীর কোন্নাগর আর রিষড়া এলাকার এক সময়ের সন্ত্রাসী যার নাম ছিল হুব্বা শ্যামল, তিনি যেন এই ছবির হুব্বা বিমল। সন্ত্রাসী বা গড ফাদারদের উত্থান যেমন সিনেমাটিক, হুব্বার বেড়ে ওঠা তার বিপরীতে অনেকটাই বাস্তব ঘেঁষা। স্কুল জীবন থেকেই তার বখে যাওয়া। প্রথমে ছিঁচকে চুরি, তারপর চাকু বা ড্যাগারবাজি, বাসা আটকে কেউ বেড়াতে গেলে তার বাসা লুট, বাবার মিলের ক্যাশিয়ারকে ছুরি মেরে টাকা ছিনতাই এবং ট্রেনের বগি লুট। হুব্বার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কাহিনি এমনই। হুব্বার অপরাধের সাথী তার কিশোর বেলার বন্ধুরাই, যারা তার সাথে বড় হয়ে ওঠে।
 
হুব্বা খুবই ধূর্ত। সে পঞ্চাশটা সিম ব্যবহার করে। পুলিশ তার নাগাল পায় না। হুব্বার পিছু নেয় পুলিশ অফিসার (আইপিএস অফিসার) দিবাকর সেন। পুলিশ বার বার ব্যর্থ হবার পরেও এক সময় ধরা পড়ে হুব্বা। তাকে ঝুলিয়ে পেটানোর পর জানা যায় তার অপরাধ জগতে আসার কাহিনী। বাংলাদেশে যেমন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধ প্রমাণের জন্য সাক্ষী মেলে না, ঠিক তেমনই সাক্ষীর অভাবে বছর খানেক পরে ছাড়া পেয়ে যায় হুব্বা। এরপর শুরু হয় তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের যুগ। পুলিশও বসে থাকে না। একসময় খালের জলে পাওয়া যায় হুব্বার মৃতদেহ! 

‘হুব্বা’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। কিশোর বা স্কুলের অংশ বাদ দিলে পরিণত হওয়ার আগে হুব্বার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন গম্ভীরা ভট্টাচার্য। পুলিশ অফিসার দিবাকর সেনের ভূমিকায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এবং হুব্বার বন্ধু বাপী ও উমেশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন লোকনাথ দে এবং অনুজয় চ্যাটার্জি। হুব্বার প্রথম স্ত্রী তাপসী এবং দ্বিতীয় স্ত্রী মিতালীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিনিয়া রায় এবং অস্মিতা মুখার্জি। হুব্বার চরিত্রে দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। 

হুব্বাময় এই ছবিতে মোশাররফের অভিনয়ের বাইরে বাড়তি কী আছে সেই প্রশ্নও তুলতে পারেন কোনও কোনও দর্শক। সারা ছবিতে বাংলাদেশি বাংলাটান ছিল না তার উচ্চারণে। হুব্বার কিশোর কাল ও খানিক পরিণত বয়সের অংশে গম্ভীরাও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। ভালো অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীলও। তেমন পরিচিত মুখ না হলেও লোকনাথ, অনুজয়, জিনিয়া ও অস্মিতা ভালো অভিনয় করেছেন। জিনিয়া রায়ের অভিনয় চোখে লাগার মতো।

হুব্বা ও তার বন্ধুরা ছবির গানগুলোও বিনোদন মূলক। ‘সব নষ্ট লোক, সব দুষ্ট লোক’ শিরোনামের গানটা মজার। ছবির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ব্রাত্য বসু ও সুপ্রতিম সরকার। এই ছবির শুটিং হয়েছে হুগলি, দমদম ও রাজারহাটে।

এ ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হুব্বার জীবনের সাথে পুলিশ অফিসার ইন্দ্রনীলের জীবনের মিল খোঁজা। যদিও সেটা করা হয়েছে খুব ছোট পরিসরে। যেমন জীবন বাঁচাতে হুব্বা তার বাবা ও মাকে জলাঞ্জলি দিতে কার্পণ্য করে না। ঠিক তেমনি ইন্দ্রনীলও তার ভাইয়ের সংলাপ বিনিময়ে জানা যায়, তাদের দুজনই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে এবং কেউ তাদের মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর কথাও বলে তারা। একইভাবে হুব্বার দুই বিয়ের কথা ও নায়িকা কেন্দ্রিক বান্ধবীদের কথা শুনে নিজের পরকীয়ার কথাও মনে পড়ে ইন্দ্রনীলের।

বিশেষ দ্রষ্টব্য 

ছবি দেখে মনে হতে পারে ‘ডন’ এক বা দুইকে মাথায় রেখে এই ছবি বানানো হয়েছে। যদিও ‘ডন’ এর গল্প ফিল্মি এবং মনে হতে পারে অতিরঞ্জিত। সেই তুলনায় হুগলীর হুব্বার জীবন বাস্তবতা পূর্ণ। মনে হবে, সামথিং লাইক আ ক্রিমিনাল’স অটোবায়োগ্রাফি এটি। ছবির নাচ আর গান বাদ দিলে যৌনতা ও সংলাপ প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। গালি বা খিস্তি সরাসরি রাখা হয়েছে এবং যৌন সুড়সুড়িমূলক দৃশ্যগুলো সমালোচনা বা পরিবারকেন্দ্রিক দর্শক হারানোর কারণ হতে পারে। আহসান কবির

হুব্বা: ৬/১০
পরিচালনা: ব্রাত্য বসু
মুক্তির তারিখ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪
প্রযোজনা: ফিরদৌসুল হাসান ও ব্রাত্য বসু
প্রযোজনা সংস্থা: ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন
পরিবেশক: জাজ মাল্টিমিডিয়া

সমালোচক: রম্যলেখক, সাংবাদিক ও কবি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

আরও সমালোচনা:

খুফিয়া: বাংলাদেশ নিয়ে ‘শঙ্কা ও ভাবনার’ ভারতীয় ছবি!

অন্তর্জাল: সাইবার থ্রিলার নিয়ে স্মার্ট ছবি

এমআর-৯: ‘মাসুদ রানা’ আছে ‘মাসুদ রানা’ নেই!

১৯৭১ সেই সব দিন: ৫৩ বছর আগের বাস্তবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা

আম কাঁঠালের ছুটি: দুরন্ত শৈশব মনে করিয়ে দেয়া এক ছবি

প্রিয়তমা: পরিচিত গল্প আর ‘তাড়াহুড়ো’য় নির্মিত ছবি!

প্রহেলিকা: ছবিটি দেখলে কিছু প্রশ্ন উঠবেই

‘পরাণ’-এর আরেক ভার্সন ‘সুড়ঙ্গ’!

সুলতানপুর: ফর্মুলায় আক্রান্ত ধারাবাহিকতাহীন ছবি

আদিম: ‘বস্তি ঘনিষ্ঠ’ এক অপরূপ ছবি!

পাপ: শেষ না হওয়া এক থ্রিলার গল্পের ছবি

কিল হিম: বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন অনন্ত, কিন্তু সেটা নড়ে না!

লিডার: স্বস্তি আর অস্বস্তির পাঁচ-ছয়

লোকাল: রাজনীতির ব্যানারে প্রেম ও প্রতিশোধের ছবি!

জ্বীন: ‘জিন ছাড়ানো’র কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছবি!

মুজিব: ইতিহাস হয়ে থাকার মতো ছবি

/এমএম/
সম্পর্কিত
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
ওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
সিনেমা সমালোচনাওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
রাজকুমার: ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক বিয়োগান্তক ছবি
সিনেমা সমালোচনারাজকুমার: ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক বিয়োগান্তক ছবি
কাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সিনেমা সমালোচনাকাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…