কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। ভারতীয় মিশনের পক্ষে কানাডায় ভিসার আবেদন যাচাইয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, পরবর্তী নোটিশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
কানাডায় ভারতের খালিস্তানপন্থি নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হলো। এই স্থগিতাদেশের সঙ্গে চলমান বিরোধের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি।
বিএলএস জানিয়েছে, অপারেশনাল কারণে পরবর্তী নোটিশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত কানাডায় ভারতীয় ভিসা প্রদান স্থগিত থাকবে।
ভিসা স্থগিতের বার্তা বিএলএস-এর ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় মিশন থেকে জরুরি নোটিশ: অপারেশনাল কারণে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া ভারতীয় ভিসা সেবা স্থগিত থাকবে।
এই বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা শুরু হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ওই আলোচনায় মোদি কানাডায় ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
কানাডায় নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে সোমবার ভারতকে কাঠগড়ায় তোলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছিলেন, কানাডার নাগরিক নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের গুপ্তচরদের জড়িত থাকার গ্রহণযোগ্য অভিযোগ তদন্ত করছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
যদিও ট্রুডোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই অভিযোগ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একই দিনে ভারতীয় দূতাবাসের এক কূটনীতিককে বরখাস্ত করে অটোয়া। পাল্টা পদক্ষেপ নেয় ভারতও। কানাডা দূতাবাসের এক কূটনীতিককে বরখাস্ত করে দিল্লি। এ ছাড়া জারি হয়েছে পাল্টাপাল্টি ভ্রমণ সতর্কতাও।
এই বিরোধ ইতোমধ্যে দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব ফেলেছে। গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে কানাডা। অক্টোবরে এটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, কানাডার নাগরিক ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেটিএফ প্রধান নিজ্জারকে গত (১৮ জুন) গুলি করে হত্যা করা হয়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের পাঞ্জাবি অধ্যুষিত শিখদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের পার্কিংয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। দীর্ঘদিন ধরে তাকে খুঁজছিল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। তার মাথার দাম ১০ লাখ রুপি ঘোষণা করেছিল নয়াদিল্লি।
ভারতের পাঞ্জাবের অন্যতম নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী শিখ সম্প্রদায়। ভারত থেকে আলাদা হয়ে কথিত স্বাধীন রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে তারা, যা ‘খালিস্তানি’ আন্দোলন নামে পরিচিত। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
পাঞ্জাবের পর বিশ্বে কানাডায় শিখদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশটিতে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ ধর্মাবলম্বী বসবাস করছেন।
আরও পড়ুন:
- জাস্টিন ট্রুডো কি তাহলে নিজের পায়েই কুড়াল মারলেন?
- নিজ্জার হত্যা: ভারতের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা
- কানাডায় ভারতীয়দের সতর্ক থাকতে বললো নয়াদিল্লি
- কানাডা ইস্যুতে মোদি-জয়শঙ্করের জরুরি বৈঠক
- উসকানি-উত্তেজনা বাড়াতে চাই না: ভারতকে ট্রুডোর নতুন বার্তা
- ভারত-কানাডা উত্তেজনা, কে ছিলেন নিহত নিজ্জার?
- নিজ্জার হত্যায় ভারতকে কানাডার দায়ী করা নিয়ে যা বললো যুক্তরাষ্ট্র
- অটোয়ায় বহিষ্কৃত ভারতীয় কূটনীতিক র-এর কানাডা প্রধান
- কানাডার কূটনীতিককে পাল্টা বহিষ্কার করে ভারতের ‘আল্টিমেটাম’
- ভারত-কানাডার সম্পর্কে শীতলতা বাড়ছে, কূটনীতিককে বহিষ্কার করলো অটোয়া
- ভারত-কানাডার সম্পর্কে ফাটল, ‘বাণিজ্য মিশন’ স্থগিত
- ভারতের খালিস্তানপন্থি শীর্ষ নেতা কানাডায় খুন