X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

উপস্থিত সাংবাদিকের বয়ানে আত্মসমর্পণের মুহূর্ত

উদিসা ইসলাম
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০০

মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা কলম হাতে নিয়ে ঝাঁকি দিলেন। বাড়িয়ে দিলেন নিয়াজির হাতে। আত্মসমর্পণের দলিলের দুটি কপিতে নাম স্বাক্ষর করলেন—এ এ কে নিয়াজি। সে সময় কেঁপে উঠেছিল তার হাত।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আয়োজিত আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতার সময় কেমন ছিল সেখানকার পরিবেশ? কী প্রতিক্রিয়া দেখান আত্মসমর্পণ করা জেনারেল নিয়াজি? সেসব নিয়ে ঠিক এক বছর ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেন প্রতি মুহূর্তের।

১৬ ডিসেম্বর, একাত্তরের পড়ন্ত বিকাল। বিজয়ের উল্লাসে মত্ত ঢাকা। মুক্ত হয়েছে অধিকৃত নগরী। জেগে উঠেছে লক্ষপ্রাণের কল্লোলে। বিজয়ীর বেশে ঢাকায় প্রবেশ করছে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী।

বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে জওয়ানরা ঢাকায় প্রবেশ করছে। বিজয়ধ্বনি, করতালি, উল্লাস ও আলিঙ্গনের ঢাকা। এদিকে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের দলিলে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরের আয়োজন। সেখানে রয়েছে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমরনায়ক ও জওয়ানেরা।

মাঠের বিবরণী দিতে গিয়ে সেদিনের দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদে লেখা হয়, ময়দানের মধ্যে রয়েছে একটি টেবিল ও দুটো চেয়ার—জেনারেল অরোরা ও নিয়াজির জন্য। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে রেসকোর্স ময়দানে মিত্র বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে একের পর এক গাড়ি আসছে। ময়দানের মধ্যে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে হানাদার বাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি। মুখ তার তত বিমর্ষ নয়। নিজ বাহিনীর কয়েকজন অফিসারের সঙ্গে আলাপ করছেন। ময়দানের চারদিক ঘিরে রয়েছে মিত্র বাহিনীর জওয়ানেরা।

তিন তারকাখচিত একটি গাড়িতে এলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি। নিয়াজির চোখেমুখে সন্ত্রস্ত ভাব। টসটসে আগুনের মতো মুখ শুকিয়ে কিসমিস। চোখের কোণে কালি। জেনারেল অরোরাকে ভারতীয় বাহিনীর জওয়ানরা ফৌজি সালাম জানালো। সেই সময় ধীর পায়ে তার পাশে এসে দাঁড়ালেন নিয়াজি।

গার্ড অব অনারের পর জেনারেল অরোরা এসে টেবিলের পাশে দাঁড়ালেন। সঙ্গে নিয়াজি। আত্মসমর্পণের দলিল নিয়াজির হাতে দেওয়া হলো। প্রায় মিনিট তিন-চারেক দাঁড়িয়ে কাগজটি পড়লেন নিয়াজি। তারপর কষ্টার্জিত মৃদু হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে চেয়ারে বসে পড়লেন। বাঁ পাশের চেয়ারে নিয়াজি, ডান পাশে অরোরা।

নিয়াজি তার বুক পকেটে হাত দিলো। কলম ছিল না। লে. জেনারেল অরোরা নিজের কলম বাড়িয়ে দিলেন তার দিকে। স্বাক্ষর করতে গিয়ে নিয়াজি দেখলেন কলম দিয়ে কালি আসে না। অরোরা কলমটি হাতে নিয়ে ঝাঁকি দিয়ে আবারও তার হাতে ফিরিয়ে দেন।

দলিলে স্বাক্ষরদানের পর নিয়াজি তার রিভলভারের সবকটি গুলি খুলে অরোরার হাতে দেন। ততক্ষণে নিয়াজির বিরুদ্ধে উত্তাল জনতা কটূক্তি বর্ষণ শুরু করেছে। বিকাল তখন ৪টা ৫২ মিনিট। দলিলে লেখা ছিল ‘দি পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ড এগ্রি টু সারেন্ডার অল পাকিস্তান আর্মড ফোর্সেস ইন বাংলাদেশ টু লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ ফোর্সেস ইন দি ইস্টার্ন থিয়েটার।’

সাংবাদিক হেদায়েত তখন সেখানে উপস্থিত। জেনারেল অরোরাকে তার অনুভূতি জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, আপনাদের সবার প্রাণের সঙ্গে আজ মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে আমাদের কোটি প্রাণ। বাংলাদেশ আজ মুক্ত প্রাণের মহিমায় উজ্জ্বল। আমরা আজ ভারি আনন্দিত। জয় বাংলা। এরপর তিনি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ‘এনি কমেন্ট জেনারেল? হাউ ডু ইউ ফিল?’ নিয়াজি শুধু বলেছিলেন ‘কমেন্ট? ডু ইউ নিড ইট? নাথিং।’

সেদিন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল শরণ সিং, এয়ার মার্শাল দেওয়ান, ভাইস এডমিরাল এবং আরও অনেকে। বাংলাদেশ বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার। ছিলেন এস ফোর্সের অধিনায়ক কে এম সফিউল্লাহ ও কাদের বাহিনীর কাদের সিদ্দিকী। খানিক পর সেখান থেকে গাড়িতে কড়া পাহারায় নিয়াজিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ততক্ষণে শহরে আরও মানুষে বেড়েছে। ততক্ষণে অনেকেই আত্মসমর্পণের কথা জানতে পেরেছে।

/এফএ/
টাইমলাইন: বিজয়ের ৫০
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:০০
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০০
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০০
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০০
উপস্থিত সাংবাদিকের বয়ানে আত্মসমর্পণের মুহূর্ত
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০১
সম্পর্কিত
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
সর্বশেষ খবর
আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে প্রাণ গেলো মা-ছেলের
আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে প্রাণ গেলো মা-ছেলের
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা