X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিবিদদের লেখাপড়া করা জরুরি

আবদুল মান্নান
১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:০৪আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:০৪

আবদুল মান্নান কালের বিবর্তনে স্বাভাবিক নিয়মেই পৃথিবীর অনেক কিছু বদলে গেছে। তবে বদলটা যত না ভালোর দিকে হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপের দিকে হয়েছে। সম্ভবত এটা বেশি হয়েছে রাজনীতির ক্ষেত্রে। সব দেশেই এমনটি ঘটেছে। একসময় যারা রাজনীতি করতেন তাদের বেশিরভাগই হয় পেশাদার আইনজীবী, শিক্ষক বা দানবীর হতেন। তাদের রাজনীতি ছিল জনকল্যাণ। যারা রাজনীতিতে আসতেন তারা পড়ালেখা করতেন। ব্রিটেনের যুদ্ধকালীন সময়ের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই উপমহাদেশে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর রচিত Discovery of India I Letters from Father to Daughter অসাধারণ সাহিত্য কর্ম। একসময়ের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট, স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মওলানা আবুল কালাম আযাদের পাণ্ডিত্য কিংবদন্তিতুল্য। তাঁর লেখা একাধিক বইয়ের মধ্যে India Wins Freedom, Tarzuman al-Quran, Azad on Pakistan, Insaniyat Maut Key Darwaze Per, Ideas of a Nation সহ তাঁর লেখা অনেক বই উর্দু ও ইংরেজি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। আরেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম তো নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করতেন। ভারতের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ আরও অনেক দেওয়া যায়। বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু পড়াশোনা করতেন না, লিখতেনও। তাঁর ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে একটি ছোটখাটো লাইব্রেরি ছিল, যেটি মুক্তিযুদ্ধের সময় লুট হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সময় পেলে পড়ালেখা করেন। তাঁর সাথে দুই একবার একান্তে আলাপচারিতায় আমার সুযোগ হয়েছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার। তাঁর জানার আগ্রহ প্রচণ্ড। বাংলাদেশে আরও বেশ কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, যারা পড়ালেখা করেন বলে জানি। সকলের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। এটি বললে অত্যুক্তি হবে না যে বর্তমানে সে যুগ পাল্টে গেছে। অনেক রাজনীতিবিদ তো এখন দৈনিক পত্রিকাই পড়েন না। এখন রাজনীতি করতে হলে দুটো জিনিসের প্রয়োজন, পেশী আর অর্থের। আর প্রয়োজন সঠিক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ। এই অবস্থা শুধু বাংলাদেশের তা কিন্তু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্কুলের পড়ার বই ছাড়া জীবনে অন্য কোনও বই পড়েছেন কিনা সন্দেহ আছে। অথচ একসময় যুক্তরাষ্ট্রে যারা রাজনীতি করতেন বা প্রেসিডেন্ট হতেন তাদের পাণ্ডিত্য ছিল অগাধ। আমার কাছে Basic Readings in US Democracy নামে একটি বই আছে। সেই বইয়ে সেই দেশের সাবেক একাধিক প্রেসিডেন্টসহ অনেক রাজনীতিবিদের বক্তৃতা বা লেখা আছে। এই লেখাগুলো পড়লে বোঝা যায় একসময় সেই দেশেও প্রাজ্ঞজনেরা রাজনীতি করতেন। গত কয়েক দশকে যে ক’জন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তাদের মধ্যে সম্ভবত বারাক ওবামার পাণ্ডিত্য ছিল। অন্যরা শিক্ষিত ছিলেন ঠিক তবে শিক্ষিত হওয়া আর জ্ঞানী হওয়া এক জিনিস নয়।

ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মোটামুটি নিজ নামেই সারা ভারতবর্ষে পরিচিত তার পাণ্ডিত্যের জন্য নয়, লাগামহীন কথাবার্তার জন্য। তিনি আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একেবারেই ঘনিষ্ঠজন। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি ছিলেন। গুজরাটে যখন নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী তখন অমিত শাহ’র উত্থান। তারা আগে তিনি ভারতের চরম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আরএসএস-এর সদস্য ছিলেন। তিনি মোদির শাসনামলে গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজ্যসভার সদস্য হয়ে পরবর্তীকালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে তিনি নিজ দেশে নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তার জন্য অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সম্ভবত অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মতো তিনি মনে করেন, লাগামহীন কথাবার্তা না বললে মিডিয়ায় থাকা যায় না। এ’দিক দিয়ে তিনি সফল বলতে হবে।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যবিধান সভার নির্বাচন হচ্ছে। ভারতের যেকোনও নির্বাচন বেশ দীর্ঘ সময় ধরে কয়েক কিস্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় কংগ্রেস পার্টি করতেন। সেই দল থেকে নির্বাচিত হয়ে রেলমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কংগ্রেস থেকে বের হয়ে মমতা ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। পশ্চিমবঙ্গে তিনি সর্বাধিক পরিচিত দিদি অথবা পিসি হিসেবে। এই দল থেকে ২০১১ সালে নির্বাচিত হয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গে বাম ফ্রন্টের দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটান। বর্তমানে চলমান রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে ২রা মে। এই নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাজিত করতে বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বলতে গেলে একটি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে চষে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে অমিত শাহও আছেন। মমতার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন প্রায় অন্য সব দল। বাম দলগুলোও বাদ যায়নি। মুসলমানদের একাংশও চাইছে মমতা এবার পরাজিত হোক।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে আমার তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই। সেই রাজ্যের ভোটাররা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচন এলে রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলে যার কোনও কোনোটা আবার লাগামহীন হয়ে যায়। যেমন, বাংলাদেশে একসময় বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে মসজিদে আজানের বদলে উলুধ্বনি শোনা যাবে। এমন সব কথা দলের তৃতীয় সারির নেতা কর্মীরা বললে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যখন উপরের সারির নেতানেত্রীরা বলেন তা তখন হয় চরম শিষ্টাচারবহির্ভূত আর বক্তব্যটা যখন অন্য আর একটি দেশকে নিয়ে হয় তখন তা দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক নষ্ট করে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কারণে-অকারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব অবান্তর, অসত্য, লাগামহীন কথাবার্তা বলে আসছেন, তা মোটেও কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তির কথা হতে পারে না। শুধু অমিত শাহ নয়, ভারতের আরও কিছু ছোটখাটো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আছেন, তারা সুযোগ পেলেই এই কাজটি করেন এবং তা করে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের চরম অজ্ঞতার পরিচয় দেন, বাংলাদেশকে অপমান করেন। তাদের কথা শুনে মনে হয় তারা দুনিয়াদারি সম্পর্কে কোনও খোঁজ রাখার প্রয়োজন মনে করেন না আর নির্ঘাৎ তারা কখনও বাংলাদেশে আসেননি। বাংলাদেশ সম্পর্কে বাংলাদেশের মিডিয়া বা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা বা দুই দেশের গবেষকরা কী বলেন, কী লেখেন তারা খোঁজ-খবর রাখলেও এসব ব্যক্তি বাংলাদেশ নিয়ে এমন সব বেপরোয়া লাগামহীন কথা বলতেন না। আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মিডিয়াকেও বাদ দিলাম, নিজ দেশের নোবেল লরিয়েট অমর্ত্য সেনের বক্তৃতা বিবৃতি শুনলে বা পড়লেও তারা উপকৃত হতেন।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রচার করতে গিয়ে অমিত শাহ বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্প্রতি তার পূর্বের কিছু বক্তব্যের অপ্রাসঙ্গিকভাবে পুনরাবৃত্তি করেছেন। বলেছেন বাংলাদেশে খেতে না পেয়ে দলে দলে সেই দেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে অনুপ্রবেশকারীদের (পড়ুন মুসলমানদের) হটিয়ে শরণার্থী-উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, এই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা উইপোকার মতো। এমন বক্তব্য শুধু উসকানিমূলক অসত্য বক্তব্যই নয়; বরং চরম সাম্প্রদায়িকও বটে। আর এ ধরনের সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের রেশ বাংলাদেশে এসে যে লাগতে পারে তা কি অমিত শাহ বা তার অনুসারীরা বুঝতে পারেন?

এর আগে বাংলাদেশ নিয়ে এমন ধরনের কথা বললে তার সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তিনি বলেছিলেন, অর্থনৈতিক প্রয়োজনে বাঙালিরা সাঁতার কেটে ইউরোপ যাবেন কিন্তু ভারতে যাবেন না। দরিদ্রতা বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে একটি সমস্যা, যেমন সমস্যা ভারতে। তারপরও বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (Global Hunger Index)-এ ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম আর ভারতের ৯৪তম। এই সূচক জার্মানিভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতি বছর প্রস্তুত করে এটা দেখানোর জন্য কোন দেশের মানুষ কী পরিমাণের ও মানসম্মত খাদ্য প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ সোজা কথায় বললে বলা যায় কত সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। এই যদি ভারতের অবস্থা হয় তাহলে কোন দুঃখে বাংলাদেশের মানুষ পেটে অন্ন দেওয়ার জন্য ভারতে যাবে? কিছু দিন আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের পরিসংখ্যানে বলেছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে আঠার ডলার বেশি। গত শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশের লাগোয়ো ভারতের সাতটি রাজ্যের মাথাপিছু আয়ের সূচক প্রকাশ করেছে, যার সূত্র ছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। দেখা গেছে এসব রাজ্যের কোনোটাই বাংলাদেশের ধারে-কাছে নেই। যে রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে এত হট্টগোল সেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫৬৬ ডলার আর বাংলাদেশের ১ হাজার ৯০৫ ডলার। এই হিসাব ২০১৮-১৯ অর্থবছরের, (দৈনিক বণিক বার্তা, ১৬ এপ্রিল)। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার আর পশ্চিমবঙ্গের ১ হাজার ৬০০ ডলার। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে এখন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। মাছ, সবজি, ডিম, দুধ, আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের হতদরিদ্র মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষ রাস্তার পাশে ঘর সংসার পাতেনি। তারা বস্তিতে থাকে ঠিক কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান মোটামুটি ভালো। তাদের প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। অনেকের বাড়িতে টিভি ফ্রিজও আছে। তারা বেশ পরিশ্রম করে। তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠায়। কারণ, বাংলাদেশ সরকার সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অনেক রকমের প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যা ভারতে অনেকাংশে অনুপস্থিত। বিশ্বব্যাংকসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ সামাজিক সূচকে ভারতের চেয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। কী দুঃখে বাংলাদেশিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করবে।

যারা একটা রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে এমন সব সস্তা কথা বলেন তারা কি জানেন বাংলাদেশ ভারতের অর্থনীতিতে কতভাবে অবদান রাখছে? ভারতে প্রতি বছর প্রায় ২২ লক্ষ পর্যটকের আগমনে ঘটে, যার মধ্যে প্রতি পাঁচ জনের একজন বাংলাদেশি। ভারতের হাইকমিশনের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ১৫ লক্ষ বাংলাদেশিকে ভারতে যাওয়ার ভিসা ইস্যু করা হয়। এদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যায় পর্যটনে ও বাজার করতে। চিকিৎসার জন্য যায় তার সংখ্যাও কম নয়। প্রতিজন যদি কমপক্ষে পাঁচশত ডলার ভারতে ব্যয় করে কত হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে তার কি কোনও হিসাব আছে এই বক্তৃতাবাজদের? সামনে ঈদ। প্রতি ঈদে প্রায় দেড় লক্ষ বাংলাদেশি শুধু কলকাতায় যায় ঈদের বাজার করতে অথবা ছুটি কাটাতে। করোনাকালে তা-তো বন্ধ থাকবে। তখন বিশেষ করে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার দোকানপাট হোটেল রেস্তোরাঁর কি হাল হয় তা বুঝা যাবে। কলকাতার মানুষ কেনাকাটা করতে নিজের এলাকার শপিং মলে যায়, নিউ মার্কেটে নয়।

বাংলাদেশে কত ভারতীয় বৈধ বা অবৈধভাবে কাজ করে তার কোনও সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল। ২০১৯ সালে রামরু নামক একটি গবেষণা সংস্থা এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ বলে হিসাব করেছে এবং এও বলেছে তারা বছরে বাংলাদেশ হতে কম পক্ষে চার বিলিয়ন ডলার নিজ দেশে প্রেরণ করে (দৈনিক প্রথম আলো, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯)। বর্তমান মোদি সরকার আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক কয়েকগুণ বেড়েছে। উভয় দেশ দুই দেশের মধ্যে সংযোগ (connectivity) বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ তার সমুদ্রবন্দরগুলো ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ব্যবহার করতে দিয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নদীপথে ভারতের পণ্য আসা যাওয়া করছে। রেল যোগাযোগ বেড়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র তৎপরতা বন্ধ হয়েছে। এর চেয়ে ভারতের পাওনা আর কি হতে পারে?

ভারতের রাজনীতি নিয়ে তাও একটি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের কোনও মাথা ব্যথা নেই, থাকারও কথা নয়। সুতরাং ভারতের দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা না বললে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। এতে ভারতের লাভ কয়েকগুণ বেশি। ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যা করেছে তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাছে সব সময় ঋণী। সেই জন্যই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক নিরন্তর উন্নত হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতে বেআইনি পথে যায়। তার কারণ নানাবিধ। কেউ ব্যাংক থেকে টাকা মেরে সেখানে আশ্রয় নেয়। কেউ আবার বড় কোনও ফৌজদারি অপরাধ করলে তারাও সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আবার বেশ কিছু পরিবার আছে যারা ছেচল্লিশের দাঙ্গার পর আর বাংলা ভাগ হওয়ার সময় পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাদের অনেকেই মনে করে তারা আবার পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে তাদের পরিবারের সাথে একসাথে থাকতে পারলে একটু ভালো থাকবেন। বাস্তবে তা সব সময় ঠিক হয় না। ছিটমহল বিনিময়ের সময় যারা ভারতে যাওয়ার অপশন দিয়েছিল তারা কেউ ভারতে গিয়ে ভালো নেই বলে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংবাদ মাধ্যম খবর দিয়েছে। যে দেশ ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিতে পারে সেই দেশের মানুষ অন্য দেশে খাদ্যের সন্ধানে যাবে তা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের কথাবার্তা আরও সংযত হওয়া ভালো।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে মানতে হবে এই ৮ টিপস
গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে মানতে হবে এই ৮ টিপস
দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন
দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ