বাংলা ছবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা নির্ভর ছবি ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নির্ভর ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। বড় বাজেট এবং তারকা বহুল ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। বাঙালির সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি নিয়ে নির্মিত বহুদিন মনে রাখার মতো শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এক ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।
ছবি শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দীশালা থেকে ইংল্যান্ড ও ভারত হয়ে (যদিও ছবিতে নেই!) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। বিমান থেকে নেমে বাংলার মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে শুরু হয় মহামানবের যাত্রা। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তিনি ঘোষণা করেন বাংলাকে পুনর্গঠনের বার্তা। এরপর বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুননেসা (রেনু) মুজিবের বয়ান বা স্মৃতিচারণে ক্রমশ উঠে আসে তার স্কুল জীবন, নেতাদের সামনে স্কুলের ছাদ থেকে পানি পড়ার ঘটনা, কলকাতার বেকার হোস্টেলের জীবন, তাদের বিয়ে, শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য সন্তানদের জন্ম, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, সোহরাওয়ার্দীর সাথে ঘনিষ্ঠতা, বার বার গ্রেফতার হওয়া, ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ি, ছয় দফা ঘোষণা ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি হায়েনাদের আত্মসমর্পণ এবং এবং স্বাধীন বাংলাদেশে তার ফিরে আসার ঘটনা।
ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে ১৩ অক্টোবর, ২০২৩-এ এবং ভারতে মুক্তি পাবে ২৭ অক্টোবর।
এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন শ্যামা জায়েদি ও অতুল তিওয়ারি। এতে বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিব্যজ্যোতি আর বড়বেলার চরিত্রে আরিফিন শুভ। বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনজন। একবারে শিশু বয়সে একজন শিশুশিল্পী, ১২ থেকে ১৭ পর্যন্ত প্রার্থনা ফারদীন দীঘি এবং পরের জীবনে নুশরাত ইমরোজ তিশা। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং শেখ রেহানার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের চরিত্রে শহীদুল ইসলাম সাচ্চু, খন্দকার মোশতাকের চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, আবদুল হামিদ খান ভাসানীর চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমেদের চরিত্রে রিয়াজ, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মাতা সায়েরা খাতুনের চরিত্রে দিলারা জামান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, তোফায়েল আহমেদের চরিত্রে সাব্বির আহমেদ, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খান, মানিক মিঞার চরিত্রে তুষার খান অভিনয় করেছেন। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের শতাধিক মানুষ এই ছবিতে অভিনয় করেছেন। সবাই কমবেশি ভালো অভিনয় করেছেন।
এই ছবিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, রণসঙ্গীত ছাড়াও একাধিক গান ব্যবহৃত হয়েছে। ‘কী কী জিনিস এনেছো দুলাল’ গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন শান্তনু মৈত্র এবং গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন উর্মি চৌধুরী। ‘অচিন মাঝি কোন সে পাড়ের বন্ধু’ শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রথীজিৎ। গানটি লিখেছেন জাহিদ আকবর, সুরে শান্তনু মৈত্র। এছাড়া ছবির শেষে আরেকটি বিয়োগান্তক গান ব্যবহৃত হয়েছে।
ছবিটির পরিবেশক জাজ মাল্টিমিডিয়া।
তারপরও বলার মতো, দেখার মতো, খুব ভালো আয়োজন আর অভিনয়সমৃদ্ধ এক ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।
জয় হোক বাংলা ছবির।
রেটিং: ৮/১০
সমালোচক: রম্যলেখক, সাংবাদিক ও কবি
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।
আরও সমালোচনা:
খুফিয়া: বাংলাদেশ নিয়ে ‘শঙ্কা ও ভাবনার’ ভারতীয় ছবি!
অন্তর্জাল: সাইবার থ্রিলার নিয়ে স্মার্ট ছবি
এমআর-৯: ‘মাসুদ রানা’ আছে ‘মাসুদ রানা’ নেই!
১৯৭১ সেই সব দিন: ৫৩ বছর আগের বাস্তবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
আম কাঁঠালের ছুটি: দুরন্ত শৈশব মনে করিয়ে দেয়া এক ছবি
প্রিয়তমা: পরিচিত গল্প আর ‘তাড়াহুড়ো’য় নির্মিত ছবি!
প্রহেলিকা: ছবিটি দেখলে কিছু প্রশ্ন উঠবেই
‘পরাণ’-এর আরেক ভার্সন ‘সুড়ঙ্গ’!
সুলতানপুর: ফর্মুলায় আক্রান্ত ধারাবাহিকতাহীন ছবি
আদিম: ‘বস্তি ঘনিষ্ঠ’ এক অপরূপ ছবি!
পাপ: শেষ না হওয়া এক থ্রিলার গল্পের ছবি
কিল হিম: বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন অনন্ত, কিন্তু সেটা নড়ে না!
লিডার: স্বস্তি আর অস্বস্তির পাঁচ-ছয়