X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুঁজি শ্রদ্ধাশীলতা, দেখি অশনি সংকেত

শেগুফতা শারমিন
২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:২৮আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:২৯

শেগুফতা শারমিন কত মানুষ কত কিছু খোঁজে, কত রকম তার অভাববোধ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের কাছেও কত রকম তাদের চাওয়ার তালিকা। কারও চাই পদ্মা ব্রিজ, কারও মেট্রোরেল, কারও বা ফ্লাইওভার। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখেই যাদের ‘দিলখুশ’। তারা সুখে আছেন। কেউ আবার চাইছেন সুশাসন, মানবাধিকার। চাওয়ার এই হাটে আমি কেবল খুঁজি। কী খুঁজি? মানুষ। মনুষ্যত্বওয়ালা মানুষ। শ্রদ্ধাস্পদ মানুষ। উন্নয়নের এই ডামাডোলে আর যাই পাই আর না পাই, একটা জিনিস আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তা হলো শ্রদ্ধা।
খুব সহজেই সবাই সবাইকে খুব দ্রুত অশ্রদ্ধা করতে শিখে গেছি। সবাই সবাইকে অসম্মান করে কথা বলা শিখে গেছি। এর চর্চাও করছি। কী এক অদ্ভুত সংস্কৃতির মুখে চলে এসেছি! কী ভয়ঙ্কর এক অবাক বাক স্বাধীনতায় ভেসে যাচ্ছি! যেখানে যে কাউকে নিয়ে খুব সহজে অশ্রদ্ধার চর্চা করা যায়। সবাইকে গালাগালি করা যায়। সবার চরিত্রহনন করা যায়। এখানে পাপ নিয়ে কথা হয় না। এখানে পাপীর চরিত্রহনন হয়। পাপ আবার নির্ণীত হয় নিজ নিজ চশমার রঙ অনুযায়ী, ব্যক্তির ক্ষমতার পারদ অনুযায়ী। যার কাছে ক্ষমতা আছে, সে যাই করুক না কেন, ভয়েই কেউ মুখ খোলে না। অথচ ক্ষমতাহীনের সারাজীবনের অর্জিত সম্মান ভুলুণ্ঠিত হয় আমাদের অশ্রদ্ধাশীলতায়।

বিতর্ক ভালো। অন্যায় করলে কেউই আইন বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। সেটাও সত্যি। কিন্তু, অন্যায় করুক বা না করুক, প্রমাণ থাকুক বা না থাকুক,  মন চাইলেই সব কিছু নিয়ে বিতর্ক চলছে। মন চাইলেই মানুষকে অশ্রদ্ধা করা ও চরিত্রহনন করার চর্চা কোনও সমাজের জন্যই ভালো নয়, স্বস্তির নয়। কিছু মানুষ আছে, নিজ থেকে নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলে। তাদের কাজ, কথা, আচরণ, মুখোশ সব কিছু মিলে উসকে দিচ্ছে বিতর্ক। এই সব বিতর্কের আরেক পক্ষ তখন কাউন্টার অ্যাটাক হিসেবে অন্য আরও দশ জনকে বিতর্কিত করে ফেলছে। এ যেন এক খেলা, এক পাল্টাপাল্টি গুটি চালাচালি। বিতর্ক আর শুধু বিতর্কের জায়গায় থাকেনি। ব্যক্তিকে নিয়ে তখন শুরু হয়েছে গালাগালি। খুব সহজেই যেন সবাই সবাইকে গালি দিতে পারে। এদেশে এখন যেন সব কিছু গালির পাত্র, গালির যোগ্য। সবকিছু মানে সবকিছু।

হ্যাঁ, খুব কষ্টকর সত্য হলেও সত্য ’৭১-এর শহীদ থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা, ৭০ ও ৮০ দশকে দেশগঠনে ভূমিকা রাখা বাতিঘররা, এদেশের ইতিহাসের অংশ যারা, এদেশের সংস্কৃতির অংশ যারা, এদেশের সাহিত্যর অংশ যারা, সবাই প্রায় সবাইকে কখনো না কখনো কারও না কারও কাছে অশ্রদ্ধা পেতে দেখি, অসম্মানিত হতে দেখি! এককভাবে অথবা যৌথভাবে।

কারও বিষয়ে সমালোচনা করতে চাও, তথ্য যুক্তি দিয়ে সেটা হতেই পারে। কিন্তু এইযে যুক্তি-তর্কহীন গালাগালি অসম্মানের চর্চা আমাদের কোন অন্ধকারের দিকে টেনে নিচ্ছে, কে জানে!

যে সমাজে দলাদলির বাহানায় উঠে পড়ে সবাইকে খারাপ বলে প্রচার করতে হয়। সেই সমাজে কিন্তু আসলে ভালোমানুষের বড্ড আকাল। এই আকালের দিনে তুমিও খারাপ, সেও খারাপ। আর সত্যি হলো আমিও খারাপ। আমি, তুমি, সে—সবাই মানে আমরা সবাই যখন খারাপ, তখন আলো আসবে কোত্থেকে? বাতিটাই বা ধরবে কে? আর দৈবাৎ কেউ যদি হাত পুড়িয়ে বাতি ধরতে রাজিও হয়, তাহলে তাকেও অসম্মান করে বাতি নিভিয়ে দিতেই বা কতক্ষণ?

এইযে অসম্মান, অশ্রদ্ধা, ধাক্কাধাক্কি, টানাটানিতে বাতি না জ্বালা বা জ্বললেও নিভিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা, একেই বুঝি অশনি সংকেত বলে! কে জানে!

লেখক: উন্নয়নকর্মী

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
‘ভারত কিংবা অন্য কোনও দেশে এমনটি দেখিনি’
‘ভারত কিংবা অন্য কোনও দেশে এমনটি দেখিনি’
পশ্চিম তীরে ১০ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
পশ্চিম তীরে ১০ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ