X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

অনির্বাণ থাকুক সম্প্রীতির মঙ্গলদ্বীপ

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:০৪আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:০৬

তুষার আবদুল্লাহ শৈশবের স্মৃতি মুছে যায়নি এখনও। গ্রামের সরিষা, মটর ক্ষেতের ভেতর দিয়ে যে বাদ্যদল যাচ্ছে, তাদের পেছনে লম্বা সারি। ছেলে-বুড়ো সবাই আছে সেই সারিতে। আছি আমিও। আমার হাতে কলমি ফুল। মধ্যপাড়া, পূর্বপাড়া, দক্ষিণপাড়া থেকে মানুষের এমন কয়েকটি সারি গিয়ে উঠলো উত্তর-পশ্চিমপাড়ায়। ওই বাড়িতে থাকেন বাবু বীরেন্দ্র কাব্য তীর্থ। বাবাদের শিক্ষক। তার সব ছাত্র-ছাত্রী একজোট হয়ে বাবু বীরেন্দ্রকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন। গ্রামে হিন্দু-মুসলিমপাড়া প্রায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই আছে। মসজিদের পুকুরে মুসল্লিরা অজু করেন, গোসল করেন। নাথপাড়ার পুরুষ-মহিলারাও একই পুকুর ব্যবহার করে। হিন্দু-মুসলমান আলাদাভাবে দেখতে শিখিনি। বাবু বীরেন্দ্র ঢাকায় এলে আমাদের বাড়িতেই উঠতেন। গ্রামে সকালের নাশতায় বরাবর তিনি আমাদের সঙ্গী। মুড়ির মোয়া খেতে শিখেছি তার স্ত্রীর হাত থেকেই। সেই বাবু বীরেন্দ্র কাব্যতীর্থকে গ্রামসুদ্ধ যেভাবে শ্রদ্ধা জানালো, তা দেখে আলাদাভাবে বিস্মিত হইনি তখন। এখন বিস্মিত হই এই ভেবে, আমাদের কয়টি গ্রামে এমন সম্প্রীতি আছে। আমার গ্রাম খাগাতুয়াতে এখনও আছে। আজই নাথপাড়া থেকে দাওয়াত এলো—কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। বাবা, চাচা, ভাইরা গ্রামের স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, কবরস্থানের মতো শ্মশানঘাট, দুর্গা, সরস্বতী ও অন্যান্য পূজা-অর্চনা নিয়ে সমান সচেতন ও মনোযোগী। 

শুধু যে আমার গ্রামেই এমন, তা নয়। শহর-গঞ্জ ঘুরে এমন গ্রামের সঙ্গে দেখা হয়। কথা হয় জনপদের মানুষের সঙ্গে। ধর্মে তারা নানা মতের। কিন্তু মনের রং এক। ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেছি সনাতন, খ্রিষ্টান বৌদ্ধ এবং আদিবাসী মানুষেরা জোটবদ্ধ হয়েছে মাহফিলের মেলায়। পূজা-অর্চনার উৎসবে মুসলমানদের মনের রং কম দেখি না। তারপরও খবর আসে সংখ্যালঘু বা আদিবাসীদের জমি দখল হচ্ছে, তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ধারণা নয়, সত্য কথা হলো, কোনও ধর্মের সাধারণ মানুষ একাজের সঙ্গে জড়িত নয়। এই ঘৃণ্য কাজ সাধারণ কোনও ধর্মবিশ্বাসী মানুষের কাজ নয়। একাজের সঙ্গে জড়িত ক্ষমতা। এই ক্ষমতা শুধু যে রাজনৈতিক তা নয়, সামাজিক ও ব্যবসায়িক ক্ষমতাও আছে।


কোনও একটি রাজনৈতিক দল এর জন্য দায়ী নয়। ক্ষমতায় আসা সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে কাণ্ডগুলো ঘটেছে, ঘটছে। রাজনৈতিক দলের ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। দখল, উচ্ছেদকারীরা এই মন ও আদর্শ নিয়েই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন।
এর দায় কোনও নির্দিষ্ট শহর, গ্রাম, এলাকা বা জনগোষ্ঠীকে যেমন নিতে হচ্ছে, তেমনি নিতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলকেও।
সমস্যা হলো আমরা দায় কাঁধে বহন করে চলেছি, কিন্তু প্রতিবাদ করছি না। বরং সয়ে যাচ্ছি। ধর্মে বিশ্বাস, অনুশীলন এবং উগ্রতা এক নয়। কাউকে জোর-জবরদস্তি করে কোনও বিশ্বাসে আস্থাশীল করা সম্ভব নয়। এটা একপ্রকার নিপীড়ন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে, আমরা নাগরিক হিসেবে এই অভ্যাসের সঙ্গে পরিচিত নই। তবে কেউ কেউ যে সুযোগ খুঁজছে না তা নয়। রাষ্ট্রের মতো পরিবার, সমাজেরও দায়িত্ব সেই সুযোগসন্ধানীদের প্রশ্রয় না দেওয়া। পলি, দোআঁশ মাটির মতোই আমরা বরাবরই উদার যেকোনও চিন্তাকে স্বাগত জানাতে। কোনও কট্টর ও প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা যেন আমাদের দিল্লির অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় না করিয়ে দেয়। অতীতে দুয়েকবার তেমন উদ্দীপনা ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। আমরা সকল ধর্মের মানুষ একযোগে তা প্রতিহত করেছি। এবার দিল্লিতে যা হচ্ছে, তার জন্য ওই দেশের জনগণের প্রতি ঘৃণা দেখানোটা ছোট মনের পরিচয় হবে। এই দায় উগ্র রাজনৈতিক চিন্তার। উভয় দেশ, সব ধর্মের জনগণের মধ্যকার যে মঙ্গলদ্বীপ, তা কেউ নেভাতে পারবে না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ২
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ২
পোশাক রফতানি থেকে এলো ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার
পোশাক রফতানি থেকে এলো ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১৬
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১৬
সর্বশেষসর্বাধিক