X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জার্মানির একত্রীকরণ, ৩০ বছর

দাউদ হায়দার
০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৪:১৪আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৪:১৬

দাউদ হায়দার ‘দুই জার্মানি এক হলে ভয়ের যথেষ্ট কারণ আছে, অতীত ইতিহাস সাক্ষী। পশ্চিম জার্মানি ইউরোপের অর্থনৈতিক মাতব্বর, ইউরোপে সবচেয়ে ধনী। পশ্চিম পূর্ব জার্মানির একত্রীকরণে পশ্চিম ইউরোপে বড়ো দেশই নয় কেবল, কথায়-কথায় ছড়ি ঘোরাবে। উঠবস করাবে। চোখ রাঙাবে। সূক্ষ্ম কারসাজিতে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবে। রাজনীতির নানা মারপ্যাঁচে। ঠোঁট কামড়ে কিছু বলতে পারবো না। চোখ বুজে (ব্লাইন্ডলি) দেখব।’
হুবহু মনে পড়ছে না (৩০ বছর আগে লন্ডনের দ্য অবজারভার-এ পড়া), এরকমই বলেছিলেন তবে (ভুল হলে মার্জনাপ্রার্থী), ব্রিটেনের টোরি সরকারের একজন মন্ত্রী। ক্ষমতায় তখন মার্গারেট থ্যাচার।
মন্ত্রীর আগামবাণী ফলেছে কী? আংশিক তো বটেই। কোনও কোনও রাজনৈতিক পণ্ডিত অবশ্য বলছেন, আংশিক কেন, আপাতদৃষ্টিতে প্রায় সবটাই।
আজ ৩ অক্টোবর। ১৯৯০ সালে পূর্বপশ্চিম জার্মানির একত্রীকরণ। ৩০ বছর পর শুরু হচ্ছে। এই উপলক্ষে গোটা জার্মানি জুড়ে অনুষ্ঠানাদি, করোনাকালেও।
প্রথম এক যুগ জার্মানি (ডয়েচল্যান্ড) সুবোধ বালক (জার্মানি মাতৃভূমি নয়, পিতৃভূমি, ‘ফাটারলান্ড’), অতঃপর, বিদ্যেসাগর মহাশয়ের গোপাল আর সুবোধ নন, বেয়াড়া। গোঁ ধরেছে জাতিসংঘে পার্মানেন্ট সদস্য হবে। চেষ্টাও করেছে দু’বার। শিকে ছেড়েনি। বাদ সেধেছে রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স। ভারতের বেলায় যেমন চীন। পার্মানেন্ট সদস্য পাঁচ দেশ। কোনও একটি দেশ ভেটো দিলেই বাতিল। যদিও জাতিসংঘ আরো দুটি দেশের (ইউরোপ থেকে একটি, এশিয়া থেকে একটি) অন্তর্ভুক্তি চায়। এই চাওয়ায় হুক্কাহুয়া। মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল, আফ্রিকাও স্থায়ী সদস্যের দাবিদার। নয় কেন? ইউরোপের ব্রিটেন, ফ্রান্স স্থায়ী সদস্য, জার্মানির যোগদান মানে তৃতীয় দেশ।
জার্মানি গোঁ ছাড়েনি। তৎপরতায় ক্লান্তিহীন। যুক্তি, ইউরোপের বড়ো দেশ, সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি, ইউরোপে পয়লা, বিশ্বে চতুর্থ ধনী, গণতন্ত্র, মানবাধিকার মজবুত। ইউরোপের মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু, বিদেশি (পূর্ব ইউরোপ, তুরস্ক। ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়া, লিবিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া)। গত সত্তর বছরে কোনও যুদ্ধে অংশ নেয়নি। (ন্যাটো’র হয়ে ইরাকে, আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণ কী ভুলে গেছে?), বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্যে মরিয়া। ইত্যাদি। এইসব যুক্তি দেখিয়ে স্থায়ী সদস্য হওয়ার কসরত, লেগে থাকতে দোষ কী? বাংলায় প্রবাদ, সবুরে মেওয়া ফলে।
সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয়নি ঠিকই, কিন্তু ন্যাটো (NATO)-র ন্যাওটা, অর্থাৎ সদস্য, শান্তি রক্ষার নামে আফগানিস্তানে, ইরাকে, যুগোশ্লাভিয়ায় সৈন্য প্রেরণ, লড়াইয়ে শামিল কখনও কখনও।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জার্মানি সাবমেরিন (যুদ্ধ জাহাজ) থেকে ভারী অস্ত্র, ট্যাঙ্ক, অত্যাধুনিক বোমারু বিমান, সর্বশেষ প্রযুক্তির ড্রোনও সাপ্লাইয়ার। ব্যবসার নামে। প্রকাশ্যে নয় তবে, ওপেন সিক্রেট। যেমন ইসরায়েলকে প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো প্রদান, হিটলারের নিধনযজ্ঞের প্রায়শ্চিত্ত। মাশুল দিচ্ছে। কেউ টুঁ শব্দ করলে বিপদ। বাঘা-বাঘা রাজনীতিকেরও রেহাই নেই। পাপের গুরুভার মুছে ফেলা সহজ নয়। যেমন নয় বাংলাদেশে রাজাকার, আল বদর, পাক সেনার অপরাধ, হত্যাযজ্ঞ।
বার্লিন দেওয়াল পতন চোখের সামনে, দুই জার্মানির একত্রীকরণও। ডয়েচে ভেলে (বাংলা)-র জন্যে দিনের পর দিন রিপোর্টও করেছি। সাক্ষী ইতিহাসের।
দেওয়াল পতন, জার্মানির পুনর্মিলনে-প্রেমে ধরে নেয় অনেকেই, ভাইয়ে-ভাইয়ে জিগের আঁটা, গাঁট ছাড়া হবে না আর, ধারণায় ভুল প্রমাণিত।
একত্রীকরণের চার বছর পরে প্রথম জাতীয় নির্বাচনে কমিউনিজম ধ্বংস তো হয়ইনি, পূর্বাঞ্চলের (পূর্ব জার্মানির) কমিউনিস্ট প্রার্থীরা বহু আসনে জয়ী। বার্লিন থেকেও। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংসদে আসীন। শক্তিশালী বিরোধী দলও। পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্যে এখন ‘কমিউনিস্ট’ সরকার। সবুজ দলও (গ্রিন পার্টি)।
দিনে-দিনে বাড়ে কালকেতু। বেড়েছে। নিউ নাৎসি দল (নাৎসি মতাদর্শে) এ এফ ডি (অলটারনেটিভ ফ্যুর ডয়েচলান্ড) এখন গোটা জার্মানি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উত্থান গত দশ বছরে। জাতীয় সংসদেও ঠাঁই, রাজ্য সংসদেও (বিধান সভায়)।
শতাব্দী প্রাচীন সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এস পি ডি) এবং একদা প্রতাপশালী এফ ডি পি (ফ্রি ডেমোক্রাটিক দল) ক্রমশ ক্ষীয়মান। অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়।
ক্ষমতাসীন সি ডি ইউ (ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রাটিক ইউনিয়ন)-এর বাড়বাড়ন্ত। সি ডি ইউ-র অ্যাঙ্গেলা মেরকেল আগামী নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বী নন। রাজনীতি থেকে বিদায়। ‘ভ্যাকুয়াম’ শুরু হবে সি ডি ইউ-য়ে।
দুই জার্মানির একত্রীকরণে অর্থনীতির জোয়ার, কিন্তু পূর্বাঞ্চলে বেকার হু হু বাড়ছে। বৈষম্য বাড়ছে। পূর্বাঞ্চলে এখনও কোনও ভারী ইন্ডাস্ট্রি-শিল্প গড়ে ওঠেনি। এও বাহ্য। গত ত্রিশ বছরে পূর্বাঞ্চল (পূর্ব জার্মানি থেকে পাঁচজন মন্ত্রীও) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পায়নি।
ব্রিটিশ মন্ত্রীর আগাম কথা স্মরণীয়। দুই জার্মানির একত্রীকরণে জার্মানি ইউরোপে সূক্ষ্মকৌশলে সর্বেসর্বা। ই ইউ-র পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা বেশি। ই ইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জার্মানি। ধমকধামকির কমতি নেই। শর্ত দিচ্ছে। মানছে ই ইউ-র বাকি দেশ। না মেনে উপায় নেই।
৩ অক্টোবর জার্মানির একত্রীকরণের ৩০ বছর। উৎসব বার্লিনে, নানা অনুষ্ঠান। আমরা দর্শক।


লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ