X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুই মুক্তি, মৃত্যুই পোস্টার-স্লোগান

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১০ নভেম্বর ২০২২, ১৮:২১আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২২, ১৮:২১

কখনও কখনও মৃত্যু হয়ে ওঠে প্রেরণা, ঝঞ্ঝা পাড়ি দেওয়ার সাহস, মুক্তির মুক্তমঞ্চ। শহীদ নূর হোসেন সেই প্রাণ, যার মৃত্যুই হয়ে উঠেছিল স্বৈরাচারবিরোধী পোস্টার, অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের ফিনিক্স পাখি। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র ও হত্যার রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। গভীর নিরীক্ষার দৃষ্টিতে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল অবরুদ্ধ গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র সম্পন্ন ক্যানসারমুখী রাজনীতির কবলে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বৈশ্বিক কারণ হেরে যাওয়ার জ্বালা, আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন খর্ব হওয়া ও খবরদারির কফিনে শেষ পেরেক লাগা। যা বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে শুরু হলেও ইন্দিরা গান্ধী, রাহুল গান্ধীসহ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বহু মানুষ পর্যন্ত ঠেকেছে।

জনশ্রুতি ও লোককথায় আছে, ঈশ্বর যার সহায় কোনও অপশক্তি তাকে দাবায়ে রাখতে পারে না। বাঙালির জীবনে সেই ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বৈশ্বিক শান্ত সাহস শেখ হাসিনা। পরদেশে থাকাকালীন সপরিবারে মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাকরুদ্ধ শেখ হাসিনা মৃত্যুঝুঁকি তুচ্ছ করে দেশে এসেছেন, তিলে তিলে সংগ্রাম করে ক্ষমতার হাল ধরেছেন। অথচ তখনও দেশ বেগম রোকেয়ার অবরোধবাসিনী অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। শেখ হাসিনা তাঁর লড়াকু সাহস দিয়ে দশ ও নয় বছরের দুই শিশু সন্তানকে বুকে আঁকড়ে জনগণের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্তির আনন্দে নিয়ে এসেছেন।

এ পথে পৌঁছতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ বার তাঁকে হত্যাচেষ্টা মোকাবিলা করতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-বিএনপি জোটকে মোকাবিলা করতে হয়েছে, হচ্ছে। স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের অবশিষ্ট মনোভাবকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার লড়াই অসীম। এই অসীম লড়াইয়ের এক সাহসী যোদ্ধা ছিলেন নূর হোসেন। স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে, পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ এই শিরোনামে মিছিলে স্লোগানে মৃত্যুকে করেছেন গণতন্ত্র উপহার।

তামাশার বিষয় হলো, সেই সময় বিএনপিও স্বৈরাচারীবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। অথচ তাদের নিজেদের জন্ম হয়েছিল স্বৈরাচারী পন্থায়। স্বভাবতই সেই মানস রক্ত-রন্ধ্রে তাদের উত্তরসূরিদের মাঝে বইছে, বইবে এটাই স্বাভাবিক। ভিন্নভাবে বললে, কমিউনিটি সেন্টিমেন্ট বলে যে বিষয় আছে তাতে তারা বেনিফিসিয়ারি। কারণ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করলেও শুধু ক্ষমতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি সন্ধি করেছিল। যার জবাব এই প্রজন্মের মানুষ ভোটের বাক্সে দিয়েছে। বিস্তৃত অর্থে, তৎকালীন সময়ও তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। যার কারণেই তাদের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করতে হয়েছিল।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সব স্তরের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটার সুযোগ থাকে। শেখ হাসিনা সেই প্রতিফলিত শক্তিকে বয়ে যাওয়ার প্রেরণা। ঠিক এ কারণেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব বুলেট বেয়নেট ও ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করেও গণতন্ত্রকে সমুন্নত ও ধারাবাহিক রাখতে লড়াই জারি রেখেছেন। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নূর হোসেন তেমনি এক বিস্ময়কর সারথী ছিলেন। শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষের মুখের কথা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে জীবনকে তুচ্ছ করে পায়ে ঠেলেছেন। সাহসের প্রতীক, জীবন্ত পোস্টার বনে গেছেন।

ঘটনাপ্রবাহের সেই দিনে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা নূর হোসেনের মৃত্যুঝুঁকি অনুধাবন করেছিলেন। এ কারণে মায়ের আঁচল বুকে শেখ হাসিনা তাকে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু সংগ্রাম যার ধমনীতে, স্পর্ধা যার শিরায় শিরায়, তাঁকে রুখে এমন জলোচ্ছ্বাস আছে কোথায়। একক মৃত্যুই তাঁকে মুক্তি দিয়েছে, ধারাবাহিক গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রেরণা, পোস্টারের মর্যাদায় নিয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক সময় তা অনুভবও করে।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যেই ক্ষমতায় থাকুক, সমালোচনার জন্য বিরোধী পক্ষ থাকে, থাকবে এটাই এই কাঠামোর সৌন্দর্য। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় অনেকেই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন, চেষ্টা করছেন, এও স্বাভাবিক। এজন্যই এখন পলিটিক্যাল সোসাইটি এবং সিভিল সোসাইটিকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্ষমতায় যাবার জন্য কেউ যেন ভেতর-বাইরে কোথাও অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে জনগণ ও দেশকে নিলামে তুলতে না পারে। ঘুমন্ত মানুষের ওপর পেট্রোলবোমাসহ ভোট দেওয়ায় হাতের দশটি আঙুল কেটে নেওয়া নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। এই তৎপরতা রুখে দিতে হবে। এই আচরণই নূর হোসেনের প্রতি বর্তমান গণতন্ত্র চর্চাকারীদের নিবেদন হবে। ভবিষ্যতের প্রতি রেখে যাওয়া আমানত।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ