X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৯ মার্চ ২০২৩, ১৯:৫৫আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ২০:২১

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক ঐশ্বরিক ও অনন্য আগুন মন নিয়ে জন্মেছিলেন। জীবনের যতটা সময় জেগে ছিলেন, বেঁচে ছিলেন, তার পুরোটাই বাঙালি ও তার গণতন্ত্রের জন্য আলো জ্বেলে গেছেন। তাঁর জেলজীবন, সংগ্রাম জীবন এককথায় পুরো জনম ও দর্শন ছিল শুধুই বাঙালির তরে।

এরপরও তাঁর জীবনের যবনিকা সুখকর ছিল না। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। নিরীক্ষার বিষয়, তাঁকে হত্যার ফলাফল এই অঞ্চলসহ গোটা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষকে ভুগতে হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তৎকালীন পাকিস্তানের ভুট্টো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতন্ত্রের লড়াইয়ে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই তো করেননি বরং সামরিক শাসকদের সঙ্গে মিতালি করে ষড়যন্ত্রের বাগানে জলকেলি করেছেন। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে লড়াই করতে হয়েছে দুই ফ্রন্টে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেও বঙ্গবন্ধু ও তাঁর বাংলাদেশকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। বরং পাকিস্তানেই এখন পর্যন্ত সামরিক শাসন কায়েম রয়ে গেছে। ভুট্টোকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিকভাবেও ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। সেটা না হলে আজ এই এশিয়াই হতো শক্তিমত্তার আকর।

পৃথিবীর তাবৎ ব্যবসা মানুষকে কেন্দ্র করে। যা কিছু উদ্ভাবন, বিপণন, মজুত সবই মানুষের জন্য। হিসাব করলে দেখা যায়, এশিয়ায় গোটা বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষের বসবাস। কাজেই যেখানে এত বড় বাজার আছে সেখানে ব্যবসা, মুনাফা এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক লোভ জাগবে সেটাই স্বাভাবিক। তিনি বেঁচে থাকলে এতদিনে এশিয়ায় একটা নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠতো। কারণ, তিনি আন্তবাজার ব্যবস্থা ও উন্নয়নে আগ্রহী ছিলেন। এর পাশাপাশি সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়েও আন্তরিক ছিলেন। কারণ, শুধু পারস্পরিক বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারলেই এশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেটকে সামাজিক, মানবিক কল্যাণে ধাবিত করা যেত। আর এটা করতে পারলে ১০ বছরেই এশিয়ার মানুষ সর্বোচ্চ উন্নত জীবনের অধিকারী বনে যেত পারতো।

বঙ্গবন্ধুকে উপেক্ষা ও হত্যার পরিণাম পাকিস্তানের গণতন্ত্রকামী জনগণ এখন বুঝতে পারছে। স্বৈরাচারী মনোভাব ও সামরিক ব্যবস্থার কারণে সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা এখন তলানিতে। বৈষম্যমূলক সমাজ ভেঙে পিতা মুজিব যে একটা ভারসাম্যসম্পন্ন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন সেটা এখন সেখানকার সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের মুখে মুখে। মজার বিষয় হলো, ধূর্ত ভুট্টো পাকিস্তানি সামরিক সরকারকে বঙ্গবন্ধুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বঙ্গবন্ধু ও সামরিক বাহিনী উভয়কে চিরতরে ক্ষমতার কাছ থেকে নাই করে দিতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ দুই পক্ষকে চিরতরে নাই করে দিয়ে ক্ষমতাকে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন করতে চেয়েছিলেন। সেটাও এখন তাদের বিশ্লেষণে উঠে আসছে।

ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না। আজ পিতা মুজিব তাঁর স্বীয় সংগ্রাম, গুণে বিশ্বব্যাপী ভাস্কর। অন্যদিকে ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে এবং পাকিস্তানের এখন অবস্থা কি তা তো বিশ্ব দেখছেই।

তামাশার বিষয়, এরপরও জেনে না জেনে কিছু উন্মাদ পিতা মুজিবকে নিয়ে বিভ্রান্তমূলক বিবৃতি দেয়। এসব আসলে নিজেদের জাতে উঠাবার কৌশল। আলোচনায় আসবার তরিকা। কিছু দিন হলো একটি ভিডিও ক্লিপ দেখা গেছে, যেখানে বলা হয়েছে শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন করেনি। অথচ দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ইত্তেফাক পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু বিবৃতি দিয়েছিলেন আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। অত্যাচারের নিগর থেকে বাঁচিবার সংকল্প নিতে হবে।

আরও বিস্তৃত অর্থে, বঙ্গবন্ধু ১১ মার্চ ভাষার পক্ষে জনমত গড়তে গিয়ে গ্রেফতার হন ও ১৫ মার্চ মুক্তি পান। এরপর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে দেশব্যাপী জনমত গড়তে গিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তিলাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দেন। ১৯ এপ্রিলে গ্রেফতার হয়ে জুলাইয়ে মুক্তিলাভ করেন। এরপর ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর আরমানিটোলা থেকে ভুখা মিছিল বের করে গ্রেফতার হয়ে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। আন্দোলন সংগঠিত করবার ও নেতৃত্ব দেবার জন্যই কারাবরণ করেন। অর্থাৎ সত্য জানলে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে মিথ্যাচার টিকে না।

প্রকৃতি বড় নির্মম।

বঙ্গবন্ধুর জন্য তৎকালীন ষড়যন্ত্রকারীরা ও সামরিক সরকার যে ফাঁদ পেতেছিলেন তা জয় করা গেছে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা আজ দেউলিয়া। অথচ বঙ্গবন্ধু বারবার ভুট্টোকে আহ্বান করেছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসবার জন্য। ষড়যন্ত্রের পাকিস্তান আজ দেশভাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনও গণতান্ত্রিক সরকার তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। মৌলবাদ, সন্ত্রাস এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।

১৭ মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। এই দিন বিশ্বব্যাপী আনন্দের সঙ্গে পালিত হচ্ছে, বিশ্ব বাঙালি যতদিন আছে ততদিন তা হবেও। অন্যদিকে গণতন্ত্র, উন্নয়নের কথা এলেই পাকিস্তানের মানুষ এখন বঙ্গবন্ধুর কথা মনে করে আফসোস করে, আগামীতে আরও করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের পরিসংখ্যান, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান তাদের তা করতে বাধ্য করবে।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিএনসিসির কাওরান বাজার আঞ্চলিক অফিস যাচ্ছে মোহাম্মদপুরে
ডিএনসিসির কাওরান বাজার আঞ্চলিক অফিস যাচ্ছে মোহাম্মদপুরে
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
সরকারি চাকরির আশ্বাস ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
সরকারি চাকরির আশ্বাস ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ