X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

গণঅধিকার পরিষদ: মাঠ থেকে জন্ম নেওয়া দল কি মাঠেই মারা গেলো?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৫ জুলাই ২০২৩, ১৪:৩৪আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১৪:৩৪

দল ভাঙন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দলীয় অন্তর্কলহ ইত্যাদি আমাদের রাজনীতিতে বহু পুরোনো বিষয়। দীর্ঘদিন অবধি তার অনিবার্য পরিণতি বলে ভাবা হতো দল বা সংগঠন ভেঙে নতুন দল বা সংগঠনের উৎপত্তিকে। এক দল ভেঙে আরেক দল গড়ার রেওয়াজ বামপন্থিদের মধ্যেই বেশি  ছিল অবশ্য।

ভাঙাভাঙি আমাদের মজ্জাগত অভ্যাসের উত্তরাধিকার মাত্র। কিন্তু হালফিল সেই প্রবণতার স্বরূপে একটা গুণগত পরিবর্তন দেখা গেলো। পুরোদস্তুর দল তৈরি হওয়ার আগেই ভেঙে যাওয়ার নজির সৃষ্টি করলো গণঅধিকার পরিষদ। মতবিরোধ বা বঞ্চনাবোধ দল ত্যাগের একটা বড় কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটা আর তেমন জরুরি থাকছে না। যেমনটা ঘটেছে নুরুল নুর আর রেজা কিবরিয়ার পরিষদে। তারা দুজনেই একে-অপরকে ‘পল্টিবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বলছেন।

দলের নিবন্ধনের আগেই শীর্ষ নেতা নুরুল হক নুরের আর্থিক বিষয়াদি যেভাবে সামনে এসেছে তাতে বলা যায় এই দলের সামনে এগোনো বড় চ্যালেঞ্জ। কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের মতো মাঠের আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া একটা দল মাঠে মারা গেলো কিনা সে প্রশ্নই উঠছে রাজনৈতিক মহলে।

গণঅধিকার পরিষদ এখন তিন ভাগে বিভক্ত। একদিকে আছেন ড. রেজা কিবরিয়া, আরেক পক্ষ নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানের নেতৃত্বে একাংশ। অন্য অংশটি হচ্ছে বিভিন্ন সময় দলে যোগ দেওয়া পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের লোকজন।

হঠাৎ কোনও ইস্যু সামনে এনে মাঠের আন্দোলন জমিয়ে ফেলা আর রাজনীতি করা এক নয়। রাজনীতি অনেক কঠিন সেটা নুরুল হক নুররা বুঝতে পারছেন এখন। প্রথম সমস্যা লোভের হাতছানি। নুরুল হক নুর কি তবে সেই লোভে পড়েই টাকার পেছনে ছুটেছেন? বড় রাজনীতিক হওয়ার আগেই বড় পথে পা দিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তার সঙ্গে মিটিং করেছেন? অবস্থাটা এমন যে তার একসময়ের মিত্র ইউটিউবার এখন তাকে ‘মোসাদ নুর’ খেতাব দিচ্ছে।

নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছে গণঅধিকার পরিষদ। তার আগেই দলটি বড় হোঁচট খেলো।  ফলে আর শক্তভাবে রাজনীতিতে দলটি ফিরতে পারবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। যদি দল হিসেবে থাকেও তবে সেটি হবে অসংখ্য দলের মাঝে একটি দল মাত্র। পরিস্থিতি যা তাতে নিশ্চিত রেজা কিবরিয়া আর দলে থাকতে পারবেন না। নিজের পক্ষে যে অংশটি থাকবে সেটার নেতৃত্বও তিনি দিতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। এরমধ্যেই কয়েক দফা দল বদল করেছেন তিনি। গণফোরাম থেকে নুরুর দলে এবং এখন শোনা যাচ্ছে দক্ষিণপন্থি বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের ইনসাফ কায়েম কমিটির কার্যক্রমেও তিনি আছেন এবং তাকে কেন্দ্র করেই নুরের সঙ্গে তার দূরত্ব। তাই দল ছেড়ে বেরিয়ে নতুন দল তৈরির ঝোঁক আবার তার ভেতর আসবে কিনা, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। অতি বুদ্ধিজীবী আচরণ, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংশ্রব নেই, এমন একজন মানুষের নতুন দল তৈরির সাধ বা সাধ্য কোনোটাই থাকে না।

টাকা-পয়সার বদনামসহ যা যা বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের থাকে তা নুরুল হক নুর অর্জন করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। চরম ডানপন্থি অবস্থান নিয়ে কিছুটা রাজনীতি তিনি করতেও পারবেন। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জামায়াত-শিবির কর্মীদের যে বিশাল অংশ সমর্থন দিয়েছিল তারা এখন তার কর্মী নেই। তারা যার যার নিজস্ব দল ও সংগঠনে ফিরে গেছে। ফলে রাজনীতির মাঠে থাকলেও নুরুল হক নুর ও গণঅধিকার পরিষদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর বড় প্রসঙ্গ থাকবে না আর।  

অন্যদিকে ড. রেজা কিবরিয়া রাজনীতির পিচ্ছিল পথে আর থাকবেন নাকি কখনও কারও উপদেষ্টা পদে বসবেন বলে অপেক্ষা করবেন সেটাও দেখার বিষয়। তার জন্য একটা অপশন হতে পারে এই ভাঙা দল ছেড়ে সটান অন্য একটা দলে চলে যাওয়া। আবশ্যিকভাবে সেই দলে যাওয়া, যে দলের অবস্থা, ছেড়ে আসা দলের চেয়ে মজবুত বলে মনে হচ্ছে, ভোটের বাজারে যে দলের অবস্থা সুবিধাজনক বলে আঁচ করা যাচ্ছে। যেহেতু তিনি অর্থনীতিবিদ, তাই বলা যেতে পারে তার জন্য দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে টাকা খাটানোর মতো করে দলের সম্ভাবনার দিকটাই প্রধানত গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক অভিমুখ এবং মতাদর্শের প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নটা থাকবে পেছনে। এমনকি খাতা-কলমে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী দলেও যোগ দিতে সমস্যা থাকার কথা না। এর মধ্যেই তিনি সেটার প্রমাণও রেখেছেন। নিজের পিতা হত্যার দায়ে যারা অভিযুক্ত তিনি তাদের সঙ্গে জোট গড়েছেন, তাদের হয়ে কথাও বলেছেন।

সামনে জাতীয় নির্বাচন। নানা প্রকার মেরুকরণ ঘটবে। আমাদের রাজনীতি সামগ্রিকভাবে তার প্রকরণে, অনুশাসনে, কৌশলে এবং মূল্যবোধে একটা বড় ধরনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নানা দলীয় কার্যকলাপের মধ্যে তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা রাজনীতির পরিবেশকে সহিংস করে তুলেছে। ছলে বলে কৌশলে কলেবর বৃদ্ধি এবং বিরোধী পরিসরকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলার আকাঙ্ক্ষাই এখনকার রাজনীতি।

কোন্দল, অভিযোগ, পাল্টা আভিযোগ আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিভোর গণঅধিকার পরিষদ। দলটি এখন রীতিমতো ধুঁকছে। তবে সমাজের উঁচু তলা থেকে আগত রেজা কিবরিয়া নিজে হয়তো ধুঁকবেন না। নতুন পথে হাঁটবেন বা একেবারে আড়ালে চলে যাবেন। কিন্তু নুরুল হক নুর রাজনীতি করে যাবেন, তবে সে রাজনীতি কতটা পরিচ্ছন্ন বা অপরিচ্ছন্ন থাকবে সেটা সময়ই বলবে।

লেখক: সাংবাদিক

 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ