X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ রাসেল: প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই বৃন্তচ্যুত জান্নাতি ফুল

মো. জাকির হোসেন
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:৫০আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:৫০

ইতিহাসের মহান কিংবদন্তি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শেখ রাসেল। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে গভীর রজনীতে জন্মগ্রহণ করেন মুজিব পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল। শেখ রাসেল যেদিন জন্মগ্রহণ করেন, পিতা শেখ মুজিব সেদিন চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছোট বোন ফাতেমা জিন্নাহ। সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনি জনসভায় যোগ দিতেই শেখ মুজিব চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ও পারিবারিক শেখ উপাধি যোগ করে সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের নাম রাখা হয় শেখ রাসেল। 

বঙ্গবন্ধুর অন্য চার সন্তানের নাম বাঙালি-মুসলমানি হলেও কনিষ্ঠ সন্তানের নামের ভিন্নতা রয়েছে। আজীবন-অনুক্ষণ বাংলা ও বাঙালির প্রতি অতল ভালোবাসায় মোহাচ্ছন্ন বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলের নাম ভিন্ন হওয়ার কারণ ও পটভূমি আছে। বঙ্গবন্ধু পশ্চিমের ইংরেজ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত ছিলেন। মানবতাবাদী, শান্তির দূত রাসেলের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করতেন। রাসেল পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বৈশ্বিক নেতা ছিলেন। বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্যে বার্ট্রান্ড রাসেল গঠন করেছিলেন কমিটি অব হানড্রেড। শেখ রাসেলের জন্মের দুই বছর আগে ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেভের মধ্যে চলমান স্নায়ু ও কূটনৈতিক যুদ্ধ একপর্যায়ে ভয়ংকর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নেয়। পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পৃথিবী। এমন এক ধ্বংসোন্মুখ সময়ে বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল। 

মানবসভ্যতা-বিধ্বংসী সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থামাতে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন রাসেল। যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলে ছিলেন তিনি। কেনেডি-ক্রুশ্চেভ একপর্যায়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাসেলের লেখা পড়তেন। স্ত্রীকে রাসেলের রচনার বাংলা অনুবাদ শোনাতেন। কাজেই রাসেলচর্চা একক ছিল না; ছিল দ্বৈত, দাম্পত্যিক। বার্ট্রান্ড রাসেল চেতনায় এমনভাবে আচ্ছাদিত মানসিকতার দম্পতির সন্তানের নাম রাসেল হবে- সেটাই স্বাভাবিক ছিল।

রাজনীতির ব্যস্ততা আর মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব ও পরবর্তী বাস্তবতার কারণে জাগতিক জীবনে খুব বেশি সময় বাবার সাহচার্য পাননি শেখ রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মাত্র ১০ বছর বয়সে শিশু রাসেলকে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতকরা। রাসেলকে যখন হত্যা করা হয় তখন তাঁর বয়স ছিল ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন। রাজনীতি করা, ক্ষমতার দম্ভ দেখানো বা কারও ক্ষতি বা অনিষ্ট করা দূরে থাক, কোনও পাপ করার বয়সও তখন হয়নি শেখ রাসেলের। অথচ নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করে চরম প্রতিহিংসাপরায়ণতার নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছে ঘাতকেরা। শুধু তাই নয়, শিশু হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ যারা করলো তাদের বিচারের পথও রুদ্ধ করা হয়েছিল দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য সংগ্রামের নানা পর্যায়ে পিতা মুজিবকে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। 

রাসেলের জন্মের বছর ’৬৪ সাল ও পরের বছর ’৬৫ সালে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন মেয়াদে ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন। ছয় দফা দেওয়ার পর জাতির পিতা যেখানে সমাবেশ করতে গেছেন, সেখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। ওই সময়ে তিনি ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ৬৬ সালের ৮ মে আবারও গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তি পান। এ সময় তিনি ১ হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকিস্তানি জান্তা তাঁকে গ্রেফতার করে। এ দফায় তিনি কারাগারে ছিলেন ২৮৮ দিন। তার মানে শেখ রাসেল জন্মের পর প্রায় ২১৬৪ দিন তথা ৬ বছর পিতা শেখ মুজিবের অপত্য স্নেহের সাহচার্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

শিশুরা যখন কথা বলতে শিখে তখন বাবা, মা কিংবা আব্বু, আম্মু সবার আগে শিখে। কিন্তু রাসেলের বাবা তো নয়নের সম্মুখে নাই, আব্বু বলে কোলে ঝাঁপ দেওয়ার সুযোগ নেই। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ভালোবেসে পিতা মুজিব বাঙালির একটি স্বাধীন আবাস ভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য জেলখানাকে বসতবাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন। ১১ বছরের কম সময়ের জাগতিক জীবনে শিশু রাসেল অর্ধেকেরও বেশি সময় পিতার বুকের সাথে লেপ্টে থাকা, পিতাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো কিংবা পিতার হাত ধরে হেঁটে যাওয়ার শারীরিক সাহচার্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আব্বু বলে সম্বোধন করে আহ্লাদ ভরে গলা জড়িয়ে ধরে পিতার কাছে যখন তখন আইসক্রিম, লাঠিলজেন্স কিংবা খেলনা কিনে দেওয়ার মতো শিশুসুলভ বায়না ধরার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। বাঙালির জন্য একটি রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগার হয়ে উঠে বঙ্গবন্ধুর বাড়িঘর। 

ফলে ১১ বছরের কম সময়ের জীবনে রাসেল বারবার পিতার সাহচার্য বঞ্চিত হয়। রাসেলের হাসু আপা শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে আর আসতে চাইতো না। খুবই কান্নাকাটি করতো। ওকে বোঝানো হয়েছিল আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা আমাদের বাসায় ফেরত যাবো। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফেরত আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা যে কী হতো, আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকতো।’ 

কারাগারের রোজনামচায় ১৯৬৭ সালের ১৪-১৫ এপ্রিলের অন্যান্য প্রসঙ্গ ছাড়াও রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “জেল গেটে যখন উপস্থিত হলাম, ছোট ছেলেটা আজ আর বাইরে এসে দাঁড়াইয়া নাই দেখে আশ্চর্যই হলাম। আমি যখন রুমের ভিতর যেয়ে ওকে কোলে করলাম আমার গলা ধরে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে কয়েকবার ডাক দিয়ে ওর মার কোলে যেয়ে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে ডাকতে শুরু করল। ওর মাকে ‘আব্বা’ বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ব্যাপার কি?’ ওর মা বলল, “বাড়িতে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে কাঁদে, তাই ওকে বলেছি আমাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকতে।” রাসেল ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকতে লাগল। যেই আমি জবাব দেই সেই ওর মার গলা ধরে বলে, ‘তুমি আমার আব্বা’ আমার উপর অভিমান করেছে বলে মনে হয়। এখন আর বিদায়ের সময় আমাকে নিয়ে যেতে চায় না।” 

শিশুপুত্র রাসেল আর পিতা মুজিবকে কী দুঃসহ অবস্থা আর কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু তা ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন- “২ বছরের ছেলেটা (রাসেল) এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো। কী উত্তর আমি ওকে দেবো! ওকে ভোলাতে চেষ্টা করতাম। ও তো বোঝে না, আমি কারাবন্দি। ওকে বলতাম, তোমার মার বাড়ি তুমি যাও আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ও কী বুঝতে চায়! কী করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটাকে, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলেমেয়ে বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।”

যে শিশু বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর শিশু বয়সের সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিলো, অতি সংক্ষিপ্ত জীবনে পিতাকে কেন্দ্র করে তাঁর স্বপ্নগুলোর মৃত্যু মেনে নিলো, সেই শিশু রাসেলকে হত্যা করে তার প্রতি কি ভয়ংকর অকৃতজ্ঞতা আর বিশ্বাসঘাতকতা করেছি আমরা। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান কারাগারে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মা আর বড় দুই বোনের সাথে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে সাড়ে ছয় বছরের শিশু রাসেলের বন্দিজীবন শুরু হয়। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি মেলে দেশ স্বাধীনের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর। একটি স্বাধীন দেশের জন্য শিশু রাসেলকেও প্রায় ৯ মাস বন্দি থাকতে হয়েছে। 

’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সর্বপ্রথম হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালকে এবং সবার শেষে হত্যা করা হয় পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য শেখ রাসেলকে। তার মানে পিতা, মাতা, দুই ভাই, ভাইদের স্ত্রী, চাচাসহ অন্যদের আর্তচিৎকার শুনতে হয়েছে, প্রিয় মানুষদের মৃতদেহ দেখতে হয়েছে শিশু রাসেলকে। আহা! মৃত্যুর পূর্বে কী বীভৎসতা ও বর্বরতা সহ্য করতে হয়েছে রাসেলের ছোট হৃৎপিণ্ডে। একে একে পিতা, মাতা, ভ্রাতাসহ পরিবারের সবাইকে যখন হত্যা করা হচ্ছে, আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কেঁদে কেঁদে বলছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো।’ এক ঘাতক এসে বলে, ‘চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি।’ 

তৃষ্ণার্ত হয়ে পানি খেতেও চেয়েছিল রাসেল। ঘাতকরা ওই সময়ও শঠতা-মিথ্যাচার করেছে তার সঙ্গে। বলেছে, চল মায়ের কাছে। এরপর মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে পানি খাওয়াবে বলে নিয়ে যায় আরেক রুমে। মায়ের লাশ দেখার সময়ই অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তার মিনতি ছিল, ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দাও।’ 

ঘাতকরা তাকে পাঠিয়েছে ব্রাশফায়ারে পরপারে। রাসেলের নিথর দেহটি পড়ে থাকে ভাবি সুলতানা কামালের লাশের পাশে। ১১তম জন্মদিনের দুই মাস আগে রাসেলের ছোট্ট বুকটা ঝাঁঝরা করে দিতে বর্বর ঘাতকের হৃদয় এতটুকু কাঁপেনি। একটি ছোট শিশুকে হত্যার পূর্বে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতারণা করেছে। কতটা জঘন্য হলে মানুষ এমন করতে পারে ভাবতেই ঘৃণায় গা শিউরে উঠে। শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘শিশুরক্ত’ কবিতায় যথার্থই বলেছেন-

‘তুই তো গল্পের বই, খেলনা নিয়ে
সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বয়সেতে ছিলি!
তবুও পৃথিবী আজ এমন পিশাচি হলো
শিশুরক্ত পানে তার গ্লানি নেই?
সর্বনাশী আমার ধিক্কার নে!
যত নামহীন শিশু যেখানেই ঝরে যায়
আমি ক্ষমা চাই, আমি সভ্যতার নামে ক্ষমা চাই।’

শিশু রাসেলকে হত্যা করেই খুনিদের বর্বরতার যবনিকাপাত হয়নি। খুনিদের দোসর মোশতাক ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার করা যাবে না মর্মে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছিল। অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাকের এই অধ্যাদেশ আইনের দৃষ্টিতে কেবল অবৈধই নয়, আইনের পরিভাষায় এটি ছিল অস্তিত্বহীন। ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর খুনিরা সামরিক আইন জারি করলেও সংবিধান বাতিল করেনি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। খন্দকার মোশতাক মন্ত্রী ছিলেন, উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকার ছিলেন না। সে সময় উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর স্পিকার ছিলেন আব্দুল মালেক উকিল। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোশতাকের দায়িত্বগ্রহণ ছিল সংবিধান লঙ্ঘন। কাজেই সংবিধান লঙ্ঘন করে জোর করে রাষ্ট্রপতি বনে যাওয়া অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাক কর্তৃক খুনিদের বাঁচানোর জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। 

তদুপরি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইচ্ছাখুশি যে কোনও বিধান জারি করতে পারেন না। সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত, কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিতে পারিবেন এবং জারি হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোন অধ্যাদেশে এমন কোন বিধান করা হইবে না, (ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না;…..’। 

কোন বিধান সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না সে বিষয়ে সংবিধানের ৭ ও ২৬ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন আইন যদি সংবিধানের সাথে অসমঞ্জস হয়, তাহলে সে আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হবে। অন্যদিকে, ২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস আইন বাতিল। ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস কোন আইন আইন প্রণয়ন করবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হলে তা মৌলিক অধিকারের কোন বিধানের সাথে যতখানি আসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক আইন জারি হলেও সংবিধানকে বাতিল করা হয়নি বিধায় সংবিধানের প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ বিদ্যমান ছিল। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রত্যেকের আইনের আশ্রয়লাভ নিশ্চিত করা হয়েছে, সে বিধানসমূহ তখন বলবৎ ছিল। 

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি হওয়ায় তা শুরু থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল ছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায়, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হিসাবে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং সুবিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারলাভের নিশ্চয়তার সাথে সুস্পষ্টভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুরু থেকেই অসাংবিধানিক ও বাতিল ছিল। খুনি মোশতাকের অসাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা দখল করায় সে ছিল অবৈধ রাষ্ট্রপতি। একজন অবৈধ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত সংবিধানবিরোধী অধ্যাদেশ ছিল আইনের ভাষায় অস্তিত্বহীন ও অবৈধ।

পরবর্তীতে জিয়া সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে মানবতা, মানবাধিকার, সভ্যতা, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচাবিরোধী এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংবিধানে সংযোজন করে নজিরবিহীন রক্তমূল্য ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে কলঙ্কিত করেন। জিয়া কেন, কার স্বার্থে অবৈধ রাষ্ট্রপতির অবৈধ আইন যা অসাংবিধানিক ও আইনের ভাষায় অস্তিত্বহীন ছিল, যা সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল, সেই আইনকে সংসদে নিয়ে সংসদের আইনের মর্যাদা দিলেন ও পরে তা সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অংশে পরিণত করলেন? খুনিদের বাঁচাতে হত্যার বিচার চাওয়ার পথ সাংবিধানিকভাবে রুদ্ধ করতে কী স্বার্থ ছিল জিয়ার? কী কারণে খুনিদের প্রতি জিয়ার এ ভালোবাসা? 

খুনি রশিদ ও ফারুক জিয়ার জীবদ্দশায় লন্ডনে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রিন্ট মিডিয়ায় ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়ার সম্পৃক্ত থাকার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। ইসলাম ধর্মে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “…যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করলো সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করলো, আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো।……” (সুরা মায়িদা: ৩২)। 

অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন” (সুরা নিসা: ৯৩)। কোরআনের বিধান অনুসারে হত্যাকারীকে আইনের সহায়তায় ঠিক সেভাবেই হত্যা করা হবে, যেভাবে সে হত্যা করেছে যদি না নিহতের নিকটজন হত্যাকারীকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়। কোরআনে হত্যার বিচার বিষয়ে বলা হয়েছে, “মুমিনরা, তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রতিশোধ নিতে” (সুরা বাকারাহ: ১৭৮-১৭৯)। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: 'দুনিয়া ধ্বংস করার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতর কাজ হলো মানুষ হত্যা করা' (তিরমিজি, ১৩৯৫)।

অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি আসমান ও জমিনের সব অধিবাসী একজন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যার জন্য একমত হয়, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’ (তিরমিজি, ১৩৯৮)। ইসলামে যুদ্ধক্ষেত্রেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করা নিষিদ্ধ।’(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ: ষষ্ঠ খণ্ড, পৃ: ৪৮৭-৪৮৮)। অথচ ১৫ অগস্ট নিরীহ, নিরস্ত্র নারী ও শিশু হত্যাকে দায়মুক্তি দেওয়া হলো জিয়া-মোশতাকের জারি করা আইনে। জিয়া একদিকে ইসলাম দরদি সেজে মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও এক আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন যুক্ত করেছেন। আর অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) আদেশ-নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটিকে সংবিধানে সংযোজন করেছেন। ইসলাম ধর্মের নামে কত বড় জোচ্চুরি এটি।

রাসেল, আপনি সম্পূর্ণ নিষ্পাপ অবস্থায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কোরআন, হাদিসের বিধান অনুযায়ী আপনি মহান রবের অনুগ্রহে জান্নাতের নাজ-নিয়ামত ভোগ করছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘শিশু (অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) মুসলিম সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে (মেশকাত, ১৭৫২)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানেরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তারা যখন বাবা অথবা বাবা-মায়ের উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধেয় কাপড় কিংবা হাত ধরবে।…… এরপর সেই কাপড় বা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন (মুসলিম, ৬৩৭০)। 

হাদিসের বিধান অনুযায়ী আপনি এখন সপ্তম আসমানে নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর সাথে অবস্থান করছেন। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে রাসুল (সা.) মিরাজের ঘটনার বর্ণনায় বলেছেন, ‘আমরা চলতে চলতে একটা সজীব শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। তাতে বসন্তের বিচিত্র ফুলের সমাহার আছে। বাগানের মধ্যে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তাঁর মাথা আমি দেখছিলাম না। তাঁর চতুর্পাশে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ে দেখলাম। এত বেশি ছেলেমেয়ে আমি কখনও দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের বললাম, উনি কে? আমাকে বলা হলো, ইনি ইবরাহিম (আ.)। আর তাঁর আশপাশের ছেলেমেয়েরা ওইসব শিশু, যারা শৈশবের নিষ্পাপ অবস্থা মারা গেছে’ (বুখারি, ৪২৯)।

আপনি জান্নাতের নাজ-নিয়ামত ভোগ করে আনন্দে থাকুন। যারা আপনার হত্যাকারীদের বাঁচাতে বিচারের পথ রুদ্ধ করতে চেয়েছিল, আপনার হাসু আপা তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেনে। বিচারে তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। কয়েকজন মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দুনিয়ার জীবনে যাই বিচার হোক, তাদের আসল বিচার তো অপেক্ষা করছে আখিরাতের ময়দানে। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন” (সুরা নিসা: ৯২-৯৩)।   রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রোজ কিয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে ... (তিরমিজি, ১৩৪৫)। রাসেল, আপনাকে হত্যার বিচার আপনি নিজ চোখেই দেখতে পাবেন। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘হত্যার শিকার ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এমনভাবে নিয়ে আসবে যে হত্যাকারীর গলার রগসমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। তখন হত্যাকৃত ব্যক্তি এ কথা বলতে বলতে হত্যাকারীকে আরশের কাছে নিয়ে আসবে- ‘হে প্রভু! সে আমাকে হত্যা করেছে’ (ইবনে মাজাহ ২৬৭০; মুসনাদে আহমদ, ২৫৫১; তিরমিজি, ২৯৫৫)। 

১৯৮৫ সালে অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস খুনি রশিদকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ছোট শিশুকেও আপনাদের কেন হত্যা করতে হয়েছিল?’ দাম্ভিক উত্তর ছিল, ‘শেখ মুজিবকে সবংশে নির্মূল করার জন্য রাসেলকে হত্যা করা দরকার ছিল।’ খুনির এই উত্তর থেকে হাদিসের বরাতে আখিরাতে মহান আল্লাহর দরবারে আপনার হত্যাকারীদের বিচারের রায় সম্পর্কে ধারণা পওয়া যায়। মু’আবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি: ‘প্রতিটি গুনাহ আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিবেন। তবে দুটি গুনাহ আছে যা আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোন মু’মিনকে হত্যা করলে’ (নাসায়ী ৩৯৮৪; আহমাদ ১৬৯০৭; হাকিম ৪/৩৫১)।

স্মরণাতীতকাল থেকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বিশ্বে অনেকবার হয়েছে। বিশ্বের বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কয়েকটি দেশে জাতির পিতাকেও হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসে এমন আরেকটি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না, যেখানে একটি জাতির স্থপতিকে হত্যার পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে জনকের শিশুপুত্রকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শিশু রাসেলের প্রতি নৃশংসতা অমোচনীয় ইতিহাস- বাঙালির কলঙ্কের ইতিহাস। সেদিন রাসেলসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে হত্যার পেছনে একটাই কারণ ছিল, আর তা হলো তারা সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকটজন। 

বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারী। রাসেলকে হত্যা করা হত্যাকারীদের জন্য বিকল্পহীন প্রয়োজন ছিল। বঙ্গবন্ধুকে বিনাশ করতে হলে শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে বিনাশ করলে চলতো না, বিনাশ করতে হতো গোটা পরিবারসুদ্ধ। কারণ, খুনিরা জানতো বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরিরা একদিন লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করবে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি তার সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর মতোই বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতেন, বিশ্বের শোষিত মানুষের নেতা হতেন। রাসেলকে হত্যা করার পর খুনিদের একজন বলেছিল, ‘অল আর ফিনিশড।’ 

খুনিরা জানে না মানুষের ভালোবাসায় যুগ যুগ যারা বেঁচে থাকে, মৃত্যু তাদের স্পর্শ করতে পারে না। অল আর ফিনিশড বলে খুনিরা ভেবেছিল তাদের মিশন সফল হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাদের দম্ভ ধূলিসাৎ হয়েছে; তারা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, রাসেলসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ অমর। আর আত্মস্বীকৃত খুনিদের স্থান ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। শহীদরা পান আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা; আর খুনিরা পায় ঘৃণা, নিরন্তর ঘৃণা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ থাকবে, ততদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাথে জান্নাতের ফুল শেখ রাসেলও বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হবিগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত বেড়ে ৩
হবিগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত বেড়ে ৩
চাকরির শুরু এবং শেষ হোক আনন্দময়
চাকরির শুরু এবং শেষ হোক আনন্দময়
প্রথম প্রান্তিকে এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১৭ শতাংশ
প্রথম প্রান্তিকে এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১৭ শতাংশ
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ