X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

হায় অবতার!

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫৬আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫৬

আগামী জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। লন্ডন থেকে বার্তা আসলে তারা সে মোতাবেক ‘লম্ফঝম্ফ’ শুরু করেন, হুমকি-ধামকি দেন।

নানান দফার চক্রে বিএনপি আবদ্ধ, দলের নেতারাও হয়তো ঠিকমতো বলতে পারবেন না সবগুলো দফার মধ্যে কী কী আছে বা এসব দফার মূলে কী। ইদানিং তারা গুজবের পাশাপাশি অসত্য, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছাড়ছে যেগুলো দেখলে সহজেই বোঝা যায় তাদের এসব দলীয় প্রচারণার অংশ।

গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সহিংসতা করতে গিয়ে পিছু হটতে হয়েছে বিএনপিকে। মানুষ এসব সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজপথ দখল রাখার মতো অবস্থা বিএনপির ছিল না। কিন্তু তাদের হুমকির কোনও শেষ নেই–এসব হুমকি হাস্যরসে পরিণত  হয়েছে। কথায় আছে, যত গর্জে তত বর্ষে না। বিএনপির হলো সে অবস্থা।

জনগণের সমর্থনের চেয়ে দূতাবাসগুলো ও পশ্চিমা বিশ্বে যোগাযোগ ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। সেজন্যই হয়তো তাদের মুখে-আচরণে বিরাট আত্মবিশ্বাস। কিন্তু ভেতরে অন্য সুর। তাদের নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে যে রাজনীতি বিএনপি করলো তাতে বোঝা যায় খালেদা জিয়ার অসুস্থতাও তাদের রাজনীতির অংশ। নেতাকর্মীদের আবেগকে কাজে লাগাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তারা রাজনীতি করেছে।

বিএনপির সবাই জানে দণ্ডিত বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা বিষয়ে আইনি বিষয়গুলোর প্রয়োগিক অবস্থা, তবুও তারা এটা নিয়ে জলঘোলা করার অপচেষ্টা করেছে। অথচ বিএনপি যখন ক্ষমতায় তারা প্রয়াত আইভী রহমানকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়নি, একেক জন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে আড়াইশো/তিনশো মামলা দিয়েছিল। দশ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, একরাতে অনেক নারীকে ধর্ষণ– এসব তাদের অপকর্ম।

তখন বাংলাদেশকে পশ্চিমা বিশ্ব ‘ঝুঁকিপূর্ণ দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সেই ভয়াল দিনগুলো বিএনপি ভুলে গেলেও মানুষ ভুলেনি।

বিএনপি নেতারা কয়েকবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ‘স্লো পয়জনিং’ করা হচ্ছে বা তার খাবারে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব অসত্য বলা বা প্রচার একমাত্র বিএনপিকে দিয়েই সম্ভব। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাচ্ছে তার পরিবার। এখানে সরকারের কোনও কাজ নেই, সরকার শুধু শাস্তি স্থগিত রেখে চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের ইচ্ছামতো হাসপাতালে ভর্তি করাসহ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন, এমনকি চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল বিষয় বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপিপন্থী ডাক্তাররাই দেখভাল করছেন। সেখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন কোনোভাবেই জড়ায়নি। খালেদা জিয়ার পরিবার তাদের ইচ্ছামতোই চিকিৎসা করাচ্ছে। তাহলে বিএনপি নেত্রীকে স্লো পয়জনিং কে করবে? আর কেনইবা করা হবে স্লো পয়জনিং?

বিএনপির এমন বিবৃতি তো ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত করে। ‘ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না’ -এমন অবস্থাকেই মনে করিয়ে দেয়। খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি করে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনও লাভ নেই– এটা সবাই বোঝে, কিন্তু বিএনপি এসব বলে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে চায়। এই কূটকৌশল আবার সরকার বা আওয়ামী লীগ বোঝে যা হয়তো বিএনপি বোঝে না। বিএনপি সচেতনভাবে এমন অসত্য বলছে।

‘ঈদের পর আন্দোলন’ এ স্লোগান হাস্যরসে পরিণত হবার পর বিএনপি বলছে পূজার পর চূড়ান্ত আন্দোলন। নভেম্বরে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। ২০২৪ এর জানুয়ারিতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চূড়ান্ত আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বিএনপি বোঝাতে চাইছে যে হয়তো তারা নির্বাচনে আসবে না বা নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচনে আসা বা না আসা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত কিন্তু নির্বাচন বানচাল করার অধিকার তাদের নাই। আগের মতো হরতাল-অবরোধ, যানবাহনে আগুন-মানুষ পুড়িয়ে মারার সুযোগ বিএনপিকে কেউ দেবে না। যতই পশ্চিমা বিশ্বকে কাছে টানার চেষ্টা করুক এটা নিশ্চিত হরতাল অবরোধ, মানুষ পুড়িয়ে মারার বিষয়ে দেশে-বিদেশে কারও সমর্থন বিএনপি পাবে না। এতে দল হিসেবে বিএনপির ক্ষতিই হবে।

বিএনপি বলে জনগণের সরকার বানাবে, জনগণের সঙ্গে তো অতীতেও বিএনপি থাকেনি, আমরা দেখেছি করোনা ভাইরাসের অতিমারিতে বিএনপি মানুষের পাশে থাকেনি, টিকা নিয়ে সমালোচনা করেছে পরে তারাও টিকা নিয়েছে। সকল উন্নয়ন প্রকল্পের সমালোচনা করে তারাও এসব বাস্তবায়িত প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছে, ব্যবহার করছে যেমনটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেও এখন স্বাধীন দেশের নাগরিকের সকল সুবিধা নিচ্ছে বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধররা।

বিএনপি যদি মনে করে যে তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে আর না আসলে হবে না– এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। নির্বাচন কমিশন এখন স্বাধীন ও শক্তিশালী।

নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা মুখে করলেও বিএনপির ৩৪ জন বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করে ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। বিএনপি বহিষ্কার করেও তাদের দমাতে পারেনি। তার মানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলেই বিএনপির পদধারী ৩৪জন নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিএনপির নেতারা বলবেন অন্য কথা যা তাদের দলগত বৈশিষ্ট্য।

বিদেশিদের কাছে নালিশ করা সম্প্রতি বিএনপির অন্যতম প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, বহির্বিশ্বে প্রথম দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছিল অবৈধ সেনাশাসক জিয়া। জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিদেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়। সে ধারাবাহিকতা খালেদা জিয়াও অব্যাহত রাখেন।

খালেদা জিয়া ৯১ সালে  ক্ষমতায় এসে দিল্লি সফর গিয়ে গঙ্গা পানি চুক্তির কথা ভুলে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরলে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, পানি চুক্তি নিয়ে কথা বলতে তিনি ভুলে গেছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল পদে বাংলাদেশ নির্বাচন করে হেরে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৪ সালে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা, ওআইসির মহাসচিব পদে যুদ্ধাপরাধী, ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মনোনয়ন  দিয়ে নির্বাচনে তুরস্কের কাছে হেরে যায়।

বিরোধীদলে থাকাকালে বিএনপির নেতৃত্ব কূটনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত আচরণ ও কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছিল। ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ কর্মসূচি বাতিল করেছিলেন খালেদা জিয়া। আবার ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে এজন্য শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে বিএনপির নেতারা ভারতীয় দূতাবাস অফিস খোলার আগেই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। এমনকি, ২০১৪ সালে সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে আসলে সব প্রটোকল ভেঙে হোটেল লবিতে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া।

পরবর্তীতেও ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে তা প্রচার করেছিল বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সেজন্য পরে এ স্বাক্ষর জালিয়াতিতে জড়িত বিএনপির দুই বৈদেশিক উপদেষ্টা ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার ও জাহিদ এফ সরদারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। (সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫)

কয়েকদিন আগে বিএনপির এক নেতা বললেন এক দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের জন্য অবতার হয়ে এসেছেন। সঙ্গে এও বলেছেন, ’৯১ সালে জামায়াতের কুমন্ত্রণা শুনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে বিএনপি। ওই নেতা সম্মানিত রাষ্ট্রদূতকে ‘ভগবান’ বলেও সম্বোধন করেছেন। এসব উপমা-সম্বোধন নিজেদের দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চরম ঘাটতিকেই প্রকাশ করে। কূটনৈতিক পর্যায়ের কাউকে কৌশলে নিজেদের আপন কেউ বানানোর লক্ষ্য খুবই অসৌজন্যমূলক। রাজনীতিতে এমন বক্তব্য দলের অবস্থানকে মানুষের কাছে হেয়ভাবে উপস্থাপন করে। এখন বিএনপি যদি এমন ‘মোটো’ নিয়ে চলে তবে ভিন্ন কথা। তাদের আচরণে মনে হয় ভিন দেশিরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

বিএনপির উচিত কোনও স্যাংশন বা অবতারে ভর না করা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে কেউ তাদের ডেকে আনবে না। নিজের পায়ে কুড়াল মারা বিএনপি ভালোই পারে। এর কারণ আসলে তাদের ঢাকা-লন্ডন দ্বন্দ্ব।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী।  

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যশের ছবিটি ছেড়ে দিলেন কারিনা!
যশের ছবিটি ছেড়ে দিলেন কারিনা!
গাম্বিয়ার কৃষি খাতে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির বিষয়ে আলোচনা
গাম্বিয়ার কৃষি খাতে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির বিষয়ে আলোচনা
গাছবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ ইজিবাইকযাত্রী নিহত
গাছবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ ইজিবাইকযাত্রী নিহত
মুসলিমদের একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুসলিমদের একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ