X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের ফলাফলের ওপর মেগা-প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব!

ড. প্রণব কুমার পান্ডে
২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৩৯আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৩৯
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ‘বাংলাদেশ প্রাইম মিনিস্টার পিনস রি-ইলেকশন পুশ অন মেগা-প্রজেক্টস’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে পুনর্নির্বাচনের প্রচারের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে এই রূপান্তরমূলক মেগা-প্রকল্পগুলোকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৌশলগত ফোকাসের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

যদিও প্রতিবেদনে কিছু বিশেষজ্ঞ নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সূচকগুলোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তবু তারা এই উদ্যোগগুলোর গভীর এবং বিস্তৃত প্রভাবকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ফলে, একটি অপরিহার্য প্রশ্ন উঠে এসেছে: এই প্রকল্পগুলো কি সত্যিই নির্বাচনি ফলাফলে একটি রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলবে? তবে সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি অনুমেয় যে এই প্রকল্পগুলো ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা দিতে পারে।

অভূতপূর্ব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ দ্বারা সংজ্ঞায়িত এই বিশ্বে বাংলাদেশ অগ্রগতি ও উন্নয়নের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকার ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং পদ্মা সেতুতে ট্রেন সেবা চালু করার মতো প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেছে।  ১১ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির বৃহত্তর উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অটুট নিষ্ঠার প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই বিস্ময়টি শুধু ঢাকার বহুবর্ষজীবী যানজটের সমাধানই করবে না, বরং তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে উদ্ভাসিত অগ্রগতির বিস্তৃত বর্ণনার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।

গর্ব ও দৃঢ়তার সঙ্গে শেখ হাসিনা এটাকে জনগণের জন্য উপহার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রূপান্তরমূলক যাত্রার প্রতীক হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে দারিদ্র্যের খপ্পর থেকে তুলে এনে বৈশ্বিক মঞ্চে সাফল্যের অগ্রযাত্রায় নিয়ে গেছেন। উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো এজেন্ডার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েই একমাত্র স্থাপনা নয়। এটি ছাড়াও অত্যাধুনিক বিমানবন্দর টার্মিনাল এবং পদ্মা সেতুতে ট্রেন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া,  কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেলটি আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এই প্রকল্পগুলো শেখ হাসিনার প্রবৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণের যুগের সূচনা করার জন্য অদম্য প্রতিশ্রুতির ফসল। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি ভোটারদের কাছে শক্তিশালী বার্তা প্রদান করছেন। ৭৭ বছর বয়সে, তিনি কেবল বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারীনেত্রী হিসাবেই প্রতিষ্ঠা পাননি, বরং অগ্রগতির আলোকবর্তিকা হিসাবে বাংলাদেশকে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে কাজ করে চলেছেন।

অবকাঠামো, শক্তি, এবং প্রযুক্তির ওপর এই কৌশলগত ফোকাস একটি দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে, যা স্বল্পমেয়াদি লাভকে অতিক্রম করে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক ফল নিশ্চিত করে। এই স্তম্ভগুলোর ওপর সরকারের গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করার প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে। এটা প্রতীয়মান যে বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু উন্নতিশীল নয়, বৈশ্বিক মানদণ্ডকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কার্যকারিতার ফুটে উঠেছে। এই মেগা-প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের লভ্যাংশ শুধু দেশের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করছে না, বরং বিশ্ব পরিমণ্ডলে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে মজবুত করছে। এই সাফল্যের গল্প শুধু পরিসংখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে কৌশলগত ও অগ্রসর চিন্তাশীল শাসনের শক্তির একটি জীবন্ত প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, এই রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুরুত্ব এমন একজন নেতার উদাহরণ হয়ে রয়েছে, যিনি জাতির সীমাহীন সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে পারেন। মেগা-প্রকল্পের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে শুধু তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক লাভের জন্য নয়, বরং এটি ছিল একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতিতে বহুমুখী ঢেউ লেগেছে। চিত্তাকর্ষক জিডিপি পরিসংখ্যানের বাইরে, মেগা-প্রকল্পে গুরুত্ব প্রদানের ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অগণিত মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়েছে। দারিদ্র্যের মাত্রা কমানোর এই সমন্বিত প্রচেষ্টা নিছক পরিসংখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি একটি সরকারের নাগরিকদের জীবন উন্নত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাস্তব প্রমাণ হিসেবে রয়ে যাবে।

এই উদ্যোগগুলোর সামগ্রিক প্রভাব এমন একজন নেতার নেতৃত্বের প্রাণবন্ত চিত্র এঁকেছে, যিনি কেবল সমৃদ্ধির কল্পনাই করেন না, বরং সক্রিয়ভাবে সেই কল্পনার বাস্তবায়ন করেছেন।

এই উচ্চাভিলাষী মেগা-প্রকল্পগুলোর দ্বারা চালিত ইতিবাচক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানাকে অতিক্রম করে বৃহত্তরভাবে বিশ্বের কাছে একটি শক্তিশালী উন্নয়নের অনুস্মারক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং আশা এবং সম্ভাবনার একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এটি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করেছে যে অটল সংকল্প, স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে উদীয়মান অর্থনীতিগুলো কেবল তাদের নিজেদেরই অর্থনৈতিক অবস্থার স্থিতিশীলতাই রক্ষা করেনি, বরং বৈশ্বিক মঞ্চে অগ্রগতির আলোকবর্তিকা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প নিজস্ব উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে, যা স্পষ্ট করে যে অগ্রগতির চাবিকাঠি কেবল প্রচুর সম্পদের মধ্যেই নয়, বরং বিচক্ষণ নেতৃত্ব এবং রূপান্তরমূলক উদ্যোগের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতির মধ্যে নিহিত রয়েছে।

বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পগুলোর প্রভাব কেমন হবে সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে।  এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সুবিন্যস্ত যাতায়াত থেকে শুরু করে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে উন্নত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পর্যন্ত বাস্তব সুবিধাগুলো কেবল মানুষের দৈনন্দিন জীবনকেই বদলে দিবে না, বরং গর্ব ও আশাবাদের একটি সম্মিলিত অনুভূতিও জাগাবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের এই ঢেউয়ের প্রভাব নিছক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার বাইরেও পৌঁছাবে। কারণ, এর মাধ্যমে দেশের অগ্রগতির প্রতি সরকারের উৎসর্গের একটি বাস্তব প্রচেষ্টা প্রকাশ পেয়েছে। ফলে, এটা প্রত্যাশা করা যায় যে আসন্ন নির্বাচনে ভোটাররা এমন একজন নেতাকে সমর্থন করবে যিনি এই ধরনের বিশাল পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন গত ১৫ বছর ধরে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রার মাধ্যমে এমন একটি নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যিনি বিশ্বাস করেন সত্যিকারের অগ্রগতি বক্তৃতা দিয়ে নয়, বরং বাস্তব ও রূপান্তরমূলক কর্মের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

ফলে, এই মেগা-প্রকল্পের সুবিধাগুলোকে আগামী নির্বাচনে পুঁজি করা শুধু বিচক্ষণতা নয়, ক্ষমতাসীন দলের জন্য অপরিহার্য। ভোটারদের কাছে এই রূপান্তরমূলক উদ্যোগ সম্পর্কে তথ্য প্রচার করার জন্য সরকারি দলকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে জনসাধারণ তাদের দৈনন্দিন জীবনে এই প্রকল্পগুলোর বাস্তব প্রভাব বুঝতে পারে। এই মেগা-প্রকল্পগুলোর ইতিবাচক ফলাফল এবং দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাগুলো কার্যকরভাবে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিয়ে ক্ষমতাসীন দল তাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বোধ তৈরি করতে পারে। এই স্বচ্ছতা শুধু দলের বিশ্বাসযোগ্যতাই বাড়াবে না, বরং দলের নেতৃত্ব দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করবে।

উপসংহারে বলা যায় যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মঞ্চে বাংলাদেশের আরোহণ দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং কৌশলগত বিনিয়োগের রূপান্তরকারী শক্তির প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মেগা-প্রকল্পগুলো শুধু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানকে উন্নীত করেনি, লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে আশাবাদ জাগিয়েছে। সুতরাং, এটি প্রত্যাশিত যে ভোটাররা এই উদ্যোগগুলো তাৎপর্য স্বীকার করবে এবং আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে তাদের সমর্থন প্রদান করবে।

লেখক: অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ