X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেম বিয়ে ও সমাজ

নাজনীন মুন্নী
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৪১আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫৪

বিত্তশালী বৃদ্ধরা গ্রামের গরিব ঘরের অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে করেন। আমাদের দেশের গ্রামবাংলায় এটি খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। সেই দৃশ্য যখন শহরে দেখা গেলো তখন একেবারেই মেনে নিতে নারাজ অনেকে। যদিও সাবেক একজন মন্ত্রী বিয়ে করেছিলেন তার অর্ধেকেরও কম বয়সী মেয়েকে।

‘ধনবান’ একজন ‘বয়স্ক’ মানুষ বিয়ের জন্য পছন্দ করছেন ১৮ বছরের তরুণীকে। অনেকের প্রশ্ন হলো- বয়স্ক যে কেউ একজন তরুণীকে বিয়ে করতে চাইতেই পারেন। কিন্তু পড়াশোনা করতে থাকা মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন তরুণী কেন বিয়েতে রাজি হলো?

বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন অর্থের লোভে এসব তরুণী বিত্তশালীদের বিয়ে করেন বয়সের কথা না ভেবে। এটা হয়তো কিছুটা সত্য, তবে আরও অনেক কারণ আছে।

এসময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে চোখ ধাঁধানো বিলাসিতার জীবন চোখে পড়ে তা অনেকের কাছেই লোভনীয়। সেই লোভনীয় জীবনযাপন করতে চায় এখন সবাই। এটা কি দোষ নাকি দোষ না– সেই আলোচনা আমরা বরং দূরে সরাই। তবে সেই বিলাসী জীবনের জন্য বাবার চেয়েও বড় কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়াটা কি লোভ নাকি ভালোবাসা– তর্ক এখন সেটি। যারা বিয়ে করছেন তারা বলছেন ভালোবাসা। যারা বাইরে থেকে ঘটনাটা দেখছেন তারা বলছেন লোভ।

একজন কেউ যদি একটা ভালো নিশ্চিত জীবনযাপনের জন্য কাউকে বেছে নেয় সেই লোভে কি পাপ আছে? মোটেই নেই। তা নিয়ে আলোচনাও শিষ্টতাবহির্ভূত। কিন্তু প্রায় ৪৫ বছরের বড় কাউকে বিয়ে করলে ভালো থাকা যায়– সেই বার্তা যখন আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দিতে থাকবেন তা ভীষণই আশঙ্কার।

স্কুল বা কলেজে পড়া মেয়েরা এসব জাঁকজমকে বেশি আকৃষ্ট হয়। একটি কম বয়সী সুন্দর মানানসই ছেলের চেয়ে একটা আইফোন তাদের কারও কারও কাছে বেশি লোভনীয়। সমাজের সংস্কারের চেয়ে গাড়ি, বাড়ি, টাকা, বিলাসী জীবন তাদের আকর্ষণ করে বেশি। কারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবা কিছুতেই তাকে এসব দিতে পারবেন না। কোনও কষ্ট ছাড়াই যদি সব পাওয়া যায় এবং তা পাওয়ার সোজা রাস্তা হিসেবে একজনকে (বয়সের পার্থক্য না ভেবে) বিয়ে করার পথ যদি আপনি দেখান, সেটা অন্যায়।

প্রেম বিয়ে কোনও নির্ধারিত রীতি মেনেই হতে হবে এমন নয়। এসব কোনও ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই। ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বড় হবে, আবার খুব বেশি বড় হতে পারবে না, স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স বেশি হতে পারবে না–এসব রীতি প্রচলন করেছে সমাজ।

যুগ যুগ ধরে সামাজিক এসব সংস্কার মানুষকে দমবন্ধ অনুভূতি দিয়েছে, দিচ্ছে। এই অচলায়তন ভাঙা অনেক সাহসের বিষয়। যারা এই সাহস পরিপক্ব মাথায় করেন তাদের সালাম।

জীবনসঙ্গী কেমন হবে তা বাছাই করার অধিকার একমাত্র যার জীবন তারই। সুখী জীবনযাপন করতে কাকে বেছে নেবেন, কার সঙ্গে স্বস্তিবোধ করবেন তা একান্তই একজন মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। তার রুচি, তার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বা এই সম্পর্ক বিক্রি করে খ্যাতিমান হওয়ার বাসনা অবশ্যই বিতর্ক আর ক্ষোভ তৈরি করে। প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে যেমন ব্যক্তিগত, তাতে কারও মতামত রাখার সুযোগ নেই। তেমনি নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় বা আচরণ, যা চার দেয়ালের ভেতরের, তা প্রকাশ্য করাটা অশোভন ও দৃষ্টিকটু।

এর বাইরে এসব ঘটনায় তরুণরা এক ধরনের হীনম্মন্যতায় পড়ছেন। এই দেশে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা কোনও তরুণের পক্ষে ৪০ বছরের আগে বিলাসী জীবন পাওয়া সম্ভব নয়। চল্লিশ বছর বয়সেও ৬৫ বছরে একজনের সম্পদের সমান সম্পদ অর্জন করতে পারবে না তারা।

যারা নির্ধারিত বয়সে একটা বিয়ে করতে চান তাদের জন্য এটা হতাশার। কারণ বিয়ের বাজারে এতদিন ভালো চাকরি, ধনী পরিবার, বিসিএস পাত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হতো। এখন ধনবান বয়স্কদের সঙ্গেও তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। যে  প্রতিযোগিতায় তাদের হেরে যাওয়ার আশঙ্কাই প্রবল। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে বইমেলা আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেকোনও বিষয়ে পরিমিতিবোধ জরুরি। একজন ১৮ বছরের তরুণ তার তরুণ মন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোকদেখানো আদিখ্যেতা করতে চাইবেন, নানান দৃষ্টিকটু আচরণ করবেন হয়তো, যা স্বাভাবিক। ৬৫ বছরে একজন পরিপক্ব মানুষ তাতে সমর্থন দেবেন নাকি তার ব্যক্তিত্ব ধরে রাখা উচিত সেটাও প্রশ্ন। এখন কেউ যদি এটিকে গর্ব হিসেবে নেন, অবস্থান ভুলে নানান কর্মকাণ্ড করতে থাকেন, তবে তা বিরক্তিকর। অন্যদের কিছু করার থাকে না এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া। যা আপনার ভালো লাগবে না সেটি এড়িয়ে চলুন। সেটাই ভদ্রতার শিক্ষা। কিন্তু অন্যের স্বাধীনতা, অন্যের অধিকার হরণ করে অপরাধী না হওয়াই শ্রেয়।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ