X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলায় ‘লেখক অনুমোদনে’র দায়িত্ব নেওয়া এরা কারা?

কাবিল সাদি
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৩আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫১

ভাষার মাসকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে যথারীতি শুরু হয়েছে  ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’। পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়ছে দিন দিন। সারা বছর যে যেখানেই থাকুক, কাজ, ব্যস্ততা ও বয়সের ভার উপেক্ষা করে মিলিত হচ্ছেন মেলায়। উৎসবমুখর মেলায় উপস্থিত হচ্ছেন লেখকরাও। লেখকদের হাত থেকে তার অটোগ্রাফযুক্ত বই কেনা ও সঙ্গে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও অনেকের ভালো লাগার কারণ। আবার অনেকেই আসেন তার প্রিয় লেখককে একনজর দেখবেন বা তার সঙ্গে একটা ছবি তুলে যাবেন অথবা প্রিয়জনরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াবেন মেলায়।

বোঝাই যাচ্ছে, সবাই যে বই কিনতেই মেলায় আসবেন এমন নয়। তাদের বড় একটা অংশই দর্শনার্থী। এটিও যেকোনও মেলার সৌন্দর্য। তবে ইদানীং কিছু দর্শনার্থীর উদ্দেশ্য পুরোই ভিন্ন।

মনে হচ্ছে তারা মেলায় আসেনই কেবল ভাইরাল হতে। এদের মধ্যে রয়েছেন কিছু ইউটিউবার বা টিকটকার। আবার কয়েকজন ইউটিউবার কিংবা টিকটকার আছেন যারা আবার সদ্য ‘লেখক’ও হয়েছেন। এদের দুই শ্রেণির কাজই হলো যেকোনোভাবে ভাইরাল হওয়া এবং তাদের ফেসবুক বা ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট তৈরির উপলক্ষ তৈরি করা। যেখান থেকে তারা অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

এ বছরের বইমেলায় এমনই কিছু ঘটনা দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক দম্পতিকে একদল দর্শনার্থী ‘ভুয়া’ ধ্বনি দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দিয়েছেন। নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু হয়তো হতে পারতো। হিরো আলমকেও একইভাবে বের হয়ে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে আরেক লেখক তার বইয়ের প্রচারণার পদ্ধতি হিসেবে দর্শনার্থীদের নানা প্রশ্নজালে বিদ্ধ করে রীতিমতো ভাইরাল হওয়ার পথ খুঁজছেন। আবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি নিজেও হয়েছেন নাজেহাল। আর এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে বইমেলায় ভিড় জমাচ্ছেন পাঠকের পরিবর্তে এসব ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’। তারাও এসব কাজে তাদের প্রভাবিত করে যাচ্ছেন।

ফলে এবারের বইমেলার আলোচ্য বিষয় এখন আর বইয়ের মধ্যে নেই। এমনকি আগে দেখা যেত সোশ্যাল মিডিয়ায় বুক রিভিউ দিতো অনেক বিদগ্ধ পাঠক। এবার সেটাও দেখা যাচ্ছে না। কোন বই ভালো বিক্রি হচ্ছে কিংবা কোন প্রকাশনীতে পাঠকের উপচে পড়া ভিড়- এসব কিছুই নেই আলোচনায়।

এবারের আলোচনার বিষয় হলো,  কারা বইমেলায় এলেন আর কাদের বইমেলা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। যারা ‘ভুয়া’ ধ্বনি দিচ্ছেন তারাও যে পাঠক এমন নয়। বিভিন্ন ভিডিওগুলো দেখলে দেখা যাবে, এদের অধিকাংশই বই কিনেন না। অনেকে তো লেখকদের নাম পর্যন্ত জানেন না। তাহলে তারা কেন বইমেলার লেখক অনুমোদনের দায়িত্বে এলেন? এই প্রশ্ন তো করা যেতেই পারে। এরা আসলে কারা?

আবার এই যে ‘ভুয়া ধ্বনি’ সংস্কৃতি উত্থান হলো, এটিও আবার ব্যবহার হচ্ছে কোনও কোনও ব্যক্তিগত ঈর্ষার প্রতিফলন ঘটাতে। এতে প্রকৃত লেখক, প্রকাশকরাও আতঙ্কে আছেন। কারণ, কখন কার ঈর্ষার শিকার হয়ে তাদের ভুয়া ধ্বনিতে অপমানিত হয়ে মেলা ছাড়তে হয় তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

এসব ঘটনা বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির জন্যও অস্বস্তিকর হওয়ার কথা। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কোনও পদক্ষেপও চোখে পড়েনি।

বইমেলাকে আতঙ্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে এটি বন্ধেরও উপায় খুঁজবে কোনও সুযোগসন্ধানী মহল। আর সেটি সফল হলে জাতি হিসেবে আমাদের আরেকটি ব্যর্থতার পালক যুক্ত হবে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রতিবন্ধকতায়।

ইতোমধ্যে দেশের বিখ্যাত নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের বইয়ের দোকানগুলো পেশাদার ও চাকরির প্রস্তুতি পরীক্ষার বইয়ের দখলে চলে গেছে। নামে মাত্র কিছু দোকান এখনও সাহিত্যের বই বিক্রি করেন। বইমেলাতেই কেবল সৃজনশীল সাহিত্যপ্রেমী পাঠক- লেখকের একটি সমন্বয় ঘটে। সেটিও যদি বন্ধ হয় তাহলে মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা যে তলানিতে ঠেকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে এদের রুখে দেওয়ার জন্য। না হলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এই মিলনস্থলগুলো অথবা মেলার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে এসব কথিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের হাতে। তখন তারাই নির্ধারণ করবেন কার বই বা কোন লেখক বইমেলায় প্রবেশাধিকার পাবেন আর কারা পাবেন না। এই পরিস্থিতি হওয়ার আগেই তাদের লাগাম টানা জরুরি।

লেখক: নাট্যকার ও কলামিস্ট।

 [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ