X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীরা দেশে ফিরে কী ব্যবসা করবেন?

সাইফুল হোসেন
১১ মার্চ ২০২৪, ২০:০৩আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৪, ২০:০৩

সম্প্রতি একটি সেশনে অসংখ্য প্রবাসী আমার সঙ্গে অনলাইনে সংযুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে তারা দুঃখ-বেদনা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। তাদের অধিকাংশই শঙ্কিত যে দেশে ফিরে তারা কী করবেন? তাদের কথা মনে রেখে আজ আলোচনা করতে যাচ্ছি– দেশে ফিরে প্রবাসীরা কী করতে পারেন সে বিষয় নিয়ে।

অনেক কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে কাজ করে দীর্ঘ ৫ বা ১০ বছর পরে দেশে ফিরে কোথায় বিনিয়োগ করা যায় সেই চিন্তাতো সবার থাকবেই। বিনিয়োগ কোথায় করবেন সেই বিষয় নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে আমার পরামর্শ হচ্ছে– আপনি যা আয় করেছেন সবাইকে দেওয়ার আগে নিজের নামে ২০, ৩০ বা ৫০% সঞ্চয় করবেন, বাকিটা রাখবেন পরিবারের ভরণপোষণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করার জন্য। আর হ্যাঁ, আপনার নামের যে টাকাটা থাকবে সেটার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে একমাত্র আপনার হাতে।

দেখার বিষয় হচ্ছে দেশে আপনি কী নিয়ে আসছেন, অনেক টাকা পয়সা নাকি খালি হাতে। টাকা পয়সা হাতে থাকলে খুব ভালো, না থাকলে কপালে দুঃখ আছে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

সম্প্রতি অনলাইনে সংযুক্ত এক সেশনে কথা হচ্ছিল সৌদি প্রবাসী এক ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আয়ের পুরো টাকাটা পরিবারের চাপে তাদের দিতে বাধ্য হচ্ছেন। নিজের হাতে কিছুই থাকছে না। এই অবস্থা যদি হয় অর্থাৎ যদি পরিবারের লোন শোধ করতে, ভরণ পোষণ, শিক্ষা, আরাম-আয়েশ, সবকিছুর ব্যাপারে যখন সব অর্থ  খরচ করে ফেলবেন তখন হাতে কত টাকা থাকছে আর, বেশি কিছু থাকছে না। যদি কিছু থাকে তবে সে টাকা দিয়ে দেশে কিছু করার চেষ্টা করা যাবে যদি কিছু না থাকে তবে বিদেশে যেভাবে নিঃস্ব গেছেন সেভাবে খালি হাতে ফিরে এসে বিদেশ যাওয়ার আগে যা করতেন বিদেশ থেকে এসেও তা-ই করবেন। তাছাড়া তো কোনও উপায় নেই। আপনি যদি আর্থিকভাবে শূন্য হয়ে থাকেন সেই দোষ তো আপনার নিজের অজ্ঞতার, অন্য কারও নয়।

আপনি বিদেশ থাকা অবস্থায় যে টাকা আয় করেছেন সেই টাকা কীভাবে খরচ করেছেন সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনার ইনকামের একটা বড় অংশ সঞ্চয় করবেন, যা আগেই বলেছি। বাকি টাকা চলে যেতে পারে পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের খরচে। আমি কাউকে অবজ্ঞা করতে বলছি না। নিজের টাকার ওপর আপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে এবং টাকা কী কী উপায়ে খরচ হচ্ছে তা আপনাকে পুরোপুরি জানতে ও বুঝতে হবে।

বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরে আপনার হাতে প্রচুর টাকা থাকলে সেই টাকা কীভাবে খরচ করবেন, কাকে দেবেন সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু অসংখ্য মানুষ যারা বিদেশ থেকে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরে আসছেন তারা পরিবারে নিগৃহীত হচ্ছেন, কারণ যার হাতে টাকা নেই তার কি মূল্য আছে! হাতে টাকা না থাকলে পরিবারের কেউ আপনার কাছে কিছু প্রত্যাশা করবে না। আর সেজন্য দেখা যাচ্ছে বাবা-মা, ভাই-বোন তাকে অনাদর করছে, স্ত্রী তাকে অবহেলা করছে।

কিন্তু যখন আপনি ভালো একটা অ্যামাউন্ট নিয়ে দেশে ফিরবেন তখন সেই অনাদর আর থাকবে না, যদি থাকেও তাহলে আপনার টাকার শক্তি আপনাকে হেল্প করবে উঠে দাঁড়াতে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আসার সময় যেই টাকাটা নিয়ে এসেছেন সেটা আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন কী করবেন সেটা আলোচনার বিষয়–

প্রথমত, বিদেশে যাওয়ার আগে যে কাজ করতেন সেটা করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, আপনি বিদেশে যে কাজ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সেটা দেশে করা সম্ভব হলে করতে পারেন। তৃতীয়ত, বাবার পেশায় যুক্ত হতে পারেন।

চতুর্থ, টাকা থাকলে যেকোনও ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন।

মনে রাখতে হবে যদি ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তাহলে সেখানে ঝুঁকি আছে। কিন্তু  প্রথম তিনটাতে বিশেষ কোনও ঝুঁকি নেই। যদি জীবনে ব্যবসা না করে থাকেন তাহলে ব্যবসা করা কঠিন। ব্যবসা কোনও সহজ বিষয় নয়। ব্যবসা করলে প্রথমে বুঝতে হবে কোন ব্যবসাটা করবেন। যে যেটা বলে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে না। টাকা অন্যের হাতে দিয়ে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করবেন না, কারণ যে আপনজনকে ব্যবসা করতে দেবেন তার অদক্ষতা ও অসততার কারণেই কষ্টের টাকাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

আর বিদেশে থাকাকালীন যতটুকু পারেন আয় করে টাকাগুলো নিজের আয়ত্তে রাখুন। বিদেশে থেকে বিশ্বাস করে আপনজনদের দিয়ে ব্যবসার দেখভাল করে লাভবান হতে পারবেন না। দেশে ফিরে যে ব্যবসাটা আপনি ভালো বুঝেন সেটা শুরু করতে পারেন। আমার মনে হয় শুরুতে ঝুঁকি আছে এমন ব্যবসায় যাওয়ার দরকার নেই।

আপনার যে এলাকা সেই এলাকাতে কি ধরনের ব্যবসা করা যায় সেটা দেখলে ভালো হবে।

আপনি ‘টি স্টল’ দিতে পারেন আধুনিকভাবে, মুদি দোকান দিতে পারেন, বড় করে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দিতে পারেন, এলাকা থেকে ফসল কিনে বাজারে বিক্রি করতে পারেন, দেশে কোনও পণ্য কিনে বিদেশে পাঠাতে পারেন। কোন ব্যবসা করবেন সেটা মূলত পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। আপনার এলাকার উৎপাদিত পণ্য, সেই এলাকার সুযোগ সুবিধা, অবকাঠামো– এগুলো বুঝে নিয়ে কাজ করবেন। আমি নির্দিষ্ট করে কিছু বলবো না। তবে যে ব্যবসাটাই করবেন আগে ভালোভাবে শিখে নেবেন। ব্যবসার ভেতরে ঢুকবেন। এই ব্যবসা করে আপনি কীভাবে পয়সা আয় করবেন, সেটা চিন্তা করবেন। কোথা থেকে মাল কিনবেন, কোথায় বেচবেন, কত দামে বেচবেন– এসব হিসাব-নিকাশ করে যদি দেখেন লাভ হবে তাহলে আপনি শুরু করতে পারেন।

এখানে একটা গাইডলাইন আছে– পুরো টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন না, একটা অংশ দিয়ে করতে হবে। তারপর অনেক লাভজনক মনে হলে টাকার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যবসায় লাগাতে পারেন, বাকি ৫০ শতাংশ রেখে দেবেন নিরাপত্তা হিসাবে সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে। কিন্তু ভুলেও কেউ বেশি মুনাফা দেবে এই ভরসায় কারোর কাছে ইনভেস্ট করবেন না। যে টাকাটা আপনার থাকবে কেউ শেয়ার মার্কেট ব্যবসার বুদ্ধি দেবে, যেহেতু আপনি শেয়ার মার্কেট বুঝেন না, যাবেন না। যদি বোঝেন তাহলে যেতে পারেন। আপনি আপনার কথা চিন্তা করুন। বিদেশে থেকে শূন্য হাতে ফিরবেন না। সবার কাছে মর্যাদা হারাবেন। অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নেবেন।

লেখক: কলামিস্ট; ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ