X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলা ট্রিবিউন-এ আমরা, আমাদের বাংলা ট্রিবিউন

তানজিমুল নয়ন
১৬ মে ২০১৬, ১১:৫৩আপডেট : ১৬ মে ২০১৬, ১২:০৩

তানজিমুল নয়নঈগলের ডানায় চেপে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো দুটি বছর। এ নিয়ে শুধুই আফসোস করার মানুষ নই আমি, বর্তমানের সঙ্গে অতীতকে যুগলবন্দি করে ভবিষ্যতের হাত ধরে হাঁটাই আমাদের আরাধ্য। তারপরও যখন পেছনে তাকাই, তখন দেখতে চাই আমাদের মূল্যবান সময়, জীবনীশক্তি, মেধা- সব কিছু বিনিয়োগ করে এই দুবছরে কী অর্জন করেছি আমরা?
বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমাদের চেষ্টা ছিল সংবাদে নতুন মাত্রা সৃষ্টি ও লক্ষ্য ছিল পাঠকের আস্থা অর্জন। আমরা ভোঁ দৌড় দিতে চাইনি, তবে ধীরে চলো নীতিও গ্রহণ করিনি। চলা শুরুর পর আমরা কখনও থামিনি, জোর কদমে এগিয়ে চলেছি প্রতিনিয়ত। সংবাদ প্রকাশ শুরুর আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা হয় আমাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা। তাই ‘টুবি অর নট টুবি’ নিয়ে ভাবতে হয় না আমাদের। সহজবোধ্য ভাষা আর শালীন উপস্থাপনায় নির্ভুল সংবাদ পরিবেশন বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি। এতে ভুলভাল হয়ে গেলে রোজ আমাদের কেউ না কেউ জরিমানা দেন কিন্তু হুকুম কখনও নড়ে না। গেল দুবছরে সস্তা জনপ্রিয়তার লোভও আমাদের কাবু করতে পারেনি। পাঠককে চমক দেওয়ার নামে গাল-গপ্পো মার্কা সংবাদ পরিবেশন, উড়ো খবর দেওয়া, কারও বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হেয় করা বা অতিরঞ্জিত খবরে কাউকে বড় করে দেখানোর মতো বিষয়গুলোতে শুরু থেকেই বিরত রয়েছে বাংলা ট্রিবিউন। দেশি-বিদেশি অনলাইন নিউজ পেপার ও টেলিভিশনের স্ক্রল দেখামাত্র নিউজ ব্রেক করার প্রতিযোগিতাতেও নেই আমরা। আগে সংবাদের উৎস ও সূত্র যাচাই করি, নিশ্চিত হয়ে তবেই সংবাদ আপ করি। এতে কখনও কখনও হয়তো অন্যদের তুলনায় খানিকটা পিছিয়ে পড়ছি সীমাবদ্ধতার কারণে; কিন্তু, এমনটা কখনও হয়নি যে, ভুল সংবাদ প্রকাশের কারণে আমাদের সংবাদ উঠিয়ে নিতে হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন: প্লিজ এই ভালোবাসাকে শাস্তি দেবেন না

একটা সাধারণ উদাহরণ দেই। রংপুরে গত ২১ এপ্রিল একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। টেলিভিশনগুলোর স্ক্রলে ও অনলাইন পোর্টালগুলোর ব্রেকিংয়ে তখন নিহতের সংখ্যা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা। দুজন থেকে ১০-১২ জন পর্যন্ত লেখা দেখা যায় একেক জায়াগায়। আমাদের প্রতিনিধি পুলিশের বরাত দিয়ে প্রথমে চারজন নিহতের খবর নিশ্চিত করেন। তাকে স্পটে যেতে বলি। তিনি ছুটে যান। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকেই তিনি জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও দুজন। দুপুরের পর তার দেওয়া তথ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আটজনে। এদিকে, টিভির স্ক্রল আর অনলাইনগুলোতে তখন কারও আট, কারও দশ, কারও বারো। যে মিডিয়াগুলো সকালে বারোজন নিহতের সংবাদ দিয়েছিল, সেগুলোর কোনও কোনওটা রয়েছে ওই অবস্থানেই, অন্যদের চলছে ঘষামাজা, এই বাড়াচ্ছে তো কিছুক্ষণ পরেই কমাচ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে আবারও সঠিক তথ্যের খোঁজে প্রতিনিধিকে ফোন দেই। তিনি জানান, ‘আমি হাসপাতালের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি, মর্গেও খোঁজ নিয়েছি।  অ্যাক্সিডেন্ট করা আরও চারজন আছেন খুবই মুমূর্ষু অবস্থায়, হয়তো মারা যাবেন যেকোনও সময়। কিন্তু, যতক্ষণ তাদের দেহে প্রাণ আছে, আমি তাদের নিহত বা মৃত বলতে পারব না ভাই। জীবিতকে আগাম মৃত সাজিয়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আগে ডাক্তার নিশ্চিত করুক, আমি তখন আপনাকে জানাব।’ আমি অবলীলায় তার ওপরে আস্থা রাখি। সত্যিই সেদিন ওই দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহতের সংবাদ সন্ধ্যায় আপডেট করতে হয়েছে আমাকে। হয়তো সকালে যেসব অনলাইন  ১২ জন নিহতের খবর দিয়েছিল, সন্ধ্যায় একশ’তে একশ’ মেলার খুশিতে বগল বাজিয়েছে, যেসব অনলাইন ঘষামাজা করে আগাম মৃত্যুর খবর দিতে পেরেছে, সেগুলোকে আপডেটেড অনলাইন ভেবে নিয়েছেন হয়তো অনেক পাঠক। আমরা হয়তো এখানে খানিকটা পিছিয়ে। কিন্তু, এই সংবাদটি দিয়ে যদি আমাদের একজন পাঠকও না বাড়ে তাতেও আমাদের দুঃখ নেই, বরং সান্ত¦না আছে আমরা সংবাদ পরিবেশনার প্রতিযোগিতায় নেমে নির্মমভাবে কোনও মুমূর্ষকে মৃত সাজাইনি। তার স্বজনদের প্রতি সহমর্মী থেকেছি। সবচেয়ে বড় ধর্ম মানবিকতাকে সম্মান দিয়ে আগাম কিছুই লিখিনি। চিকিৎসকের বক্তব্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি। তিনি নিশ্চিত করার পর সংবাদটি আপডেট করেছি। আমাদের সংবাদে মানবিকতার স্থান এতটাই ঊর্ধ্বে।

এমন সম্পাদকীয় নীতিমালা, দায়িত্বশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে গত দুবছর ধরেই পাঠকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি আমরা। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারসভা আমাদের করতে হয়নি; কিন্তু, ফেসবুক ও ফ্রেন্ডস অব ফ্রেন্ডস-এর কাছে সূত্র পেয়ে যিনি একবার এই পোর্টালে প্রবেশ করেছেন মত-দ্বিমত যাই থাকুক বাংলা ট্রিবিউনকে পছন্দ না করে পারেননি।

আরও পড়তে পারেন: সংখ্যাগরিষ্ঠের গ্লানি

বাংলা ট্রিবিউন-এর পাতায় সারাদেশকে এক সুতোয় গাঁথার কাজটা সম্পাদকের নির্দেশে আমার কাঁধে বর্তেছে দেড় বছর ধরে। রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন বিটে আমাদের বাঘা বাঘা রিপোর্টাররা কাজ করছেন, তুলে আনছেন ঘটনা ও ঘটনার নেপথ্যের চমকপ্রদ সব কাহিনি। শুরুতে তাদের সংবাদ সম্পাদনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম, কিন্তু ন্যাশনাল ডেস্কের ইনচার্জ হয়ে দেখি, এখানে চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। প্রতি মুহূর্তে দেশজুড়ে যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে, সেগুলোকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যভাবে তুলে আনা, তথ্যসূত্র নিশ্চিত করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, নিত্যদিনের ঘটনার বাইরে অমিত সম্ভাবনার যে বাংলাদেশ, তাকেও তুলে ধরা ন্যাশনাল ডেস্কের নিয়মিত কাজ। এর সঙ্গে ফিচার, এক্সক্লুসিভ, ফলোআপ, ইস্যু কম্পাইলের মতো নানা কাজ তো রয়েছেই।

সবচেয়ে জটিল প্রতিদিনের খবরগুলো তালিকাভুক্ত করে তা থেকে মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি নির্বাচন। এই সংবাদ পাঠানোর কাজগুলো করে যাচ্ছেন প্রতিটি জেলায় আমাদের নির্বাচিত একেকজন নিবেদিতপ্রাণ ও বিশ্বস্ত সংবাদকর্মী, যাদের স্বীকৃতি জেলা বা বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে। প্রকাশক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সদিচ্ছা ও সহযোগিতায় এরই মধ্যে দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় প্রতিনিধির মাসিক সম্মানীভাতা নিশ্চিত করতে পেরেছি আমরা।  তা অন্য যেকোনও অনলাইনের চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ বেশি। গত দেড় বছরে ন্যাশনাল ইনচার্জ হিসেবে এটিই আমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

আর প্রতিনিধি ও রিপোর্টারদের প্রতিটি সংবাদকে ২৪ ঘণ্টাজুড়েই নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী শৈল্পিক ও নির্ভুলভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করছেন আমাদের কিছু জাদুকরী সাব-এডিটর। মাঠের ও ডেস্কের এসব সংবাদকর্মীর এই যূথবদ্ধ প্রচেষ্টায় আজ বাংলা ট্রিবিউন দেশজুড়ে পেয়েছে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমের পরিচিতি। দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই বিশেষ মুহূর্তে এই দুপক্ষের প্রত্যেকের প্রতি ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ হিসেবে আমার অবিরল কৃতজ্ঞতা ও টুপিখোলা অভিনন্দন।

লেখক: ডেপুটি নিউজ এডিটর ও ইনচার্জ, ন্যাশনাল ডেস্ক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ
ভাটারায় ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা- মাসহ আরও তিনজন দগ্ধ
ভাটারায় ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা- মাসহ আরও তিনজন দগ্ধ
সর্বশেষসর্বাধিক