X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিছু কিছু ঘটনা পুলিশের নীতি-নৈতিকতার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:০৯আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:০৯

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের মর্যাদা ও সম্মান বাড়ানোর জন্য সদস্যদের তাগিদ দিয়ে আসছেন। তার মূল কথা, ‘ব্রুটালিটি বা নির্যাতনকে চিরতরে কবর দিতে হবে। জনগণের সঙ্গে মিশতে হবে, তাদের সমস্যা শুনতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। মানুষকে ভালোবাসলে তাদেরও ভালোবাসা পাওয়া যায়, করোনা আমাদের তা দেখিয়ে দিয়েছে।’

এই প্রচেষ্টা চলবে বলেই বিশ্বাস করি। কিন্তু এরমাঝেও কিছু ঘটনা ঘটে, যেগুলো বাহিনীর সদস্যদের নীতি-নৈতিকতার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেমনটা ঘটেছে সম্প্রতি কক্সবাজারে। সেখানে এক নারীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং সেই অভিযোগে এক এসআইসহ ৩ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার ও মামলা রেকর্ড করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাতে শহরের মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ার ব্যবসায়ী রিয়াজ আহমদের স্ত্রী রোজিনা আকতার এই ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়। পরে ৯৯৯ ফোন করে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক তাদের ওই সদস্যকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এরপর আরও দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি পুরোটা বলা প্রয়োজন বলেই উল্লেখ করতে হচ্ছে। ছিনতাইয়ের শিকার রোজিনা আকতার জানান, দোকানের মালামাল কেনার জন্য তিনি এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে ফিরছিলেন। বাসার কাছে আসার পর একটি অটোরিকশা নিয়ে এসে সাদা পোশাকধারী তিন পুলিশ সদস্য তার মাথায় পিস্তল ঠেকায়। এরপর টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে যেতে চাইলে তিনি একজনকে পেছন থেকে টেনে ধরেন। এ সময়ে পিস্তল দিয়ে তার শরীরে আঘাত করা হয়। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে দু’জন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। জনতার হাতে আটক এক পুলিশ সদস্যকে পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

ভালো দৃষ্টান্ত এই যে, পুলিশের হেল্প লাইন ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য পাওয়া গেছে এবং পুলিশ সদস্য হলেও তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখন দেখার পালা বিভাগের ভাবমূর্তির নামে এই নারী ও তার স্বামীকে যেন ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে ফেলা না হয়। পুলিশের অনেক সদস্য অনেক মানবিক, অনেক ভালো কাজ করেন, করছেন। কিন্তু মানুষের ধারণা ভিন্ন। কারণ, পুলিশ যে নিজেকে নানান ছাড়পত্রের অধিকারী ভাবে, তা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ জানে। পথে-ঘাটে, রাস্তার মোড়ে, ট্রাফিক সিগন্যালে, হাটে-বাজারে পুলিশের অনিয়মের অসংখ্য উদাহরণের মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে।

পুলিশ হলেই নিয়মের ঊর্ধ্বে নন– এ কথাটা পুলিশের মাথায় ভালো করে প্রবেশ করতে হবে। আইজিপি মহোদয় সেটাই চান। আইন রক্ষার ভার যাদের হাতে তুলে দিয়েছে রাষ্ট্র, তারাই যদি আইন নিজেদের হাতে তুলে নেন তাহলে মানুষ যাবে কার কাছে? পুলিশের একটা অংশের বিরুদ্ধে ঠিক এই অভিযোগই বারবার উচ্চারিত হয়। দায়িত্ব কাঁধে নিলে তা পালন করার শক্তি ও আন্তরিকতা থাকতে হয়, অন্যথায় এর অপব্যবহার হয়।

আগেও বলেছি, আবারও বলছি, পুলিশ অর্থেই অমানবিক বা অত্যাচারী নয়। অসংখ্য পুলিশ কর্মী আছেন, যারা এর উল্টো পথের পথিক, সমাজ তাদের মান্য করে। কিন্তু মানবিকতার চর্চা আরও পরিশ্রমসাধ্য। করোনাকালে পুলিশের মানবিক কাজ মানুষ দেখেছে। কিন্তু টেকনাফের ওসি প্রদীপ, কিংবা কক্সবাজারের এই ঘটনা, সিলেটের এসআই আকবরের কাণ্ড মানুষকে ভিন্ন চিত্রও উপহার দেয়, মানুষকে ভীত করে।

একটা ধারণা স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দফতর অভিযুক্ত সদস্যদের গুরুদণ্ড না দিয়ে লঘুদণ্ড দেয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ফৌজদারি মামলার অপরাধ করলেও বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দিয়েই ইতি টানা হয়। কক্সবাজারের ঘটনায়ও দেখার পালা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়, নাকি বিভাগীয় সাজার নামে সবকিছু মানুষের নজরের আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারপর কৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করা হয়। এই চর্চা অব্যাহত থাকলে বাহিনীর সদস্যদের অনেককেই অপরাধের চর্চা থেকে বের করে আনা কঠিন হবে।

সরকারের যত সংস্থা আছে তাদের মধ্যে পুলিশের কাজ সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। তাই তাদের সতর্কতা বেশি প্রয়োজন। যদি সদস্যদের একজনের মাথায়ও এমন ধারণা পাকাপোক্ত হয় যে, নাগরিকের প্রাণের আবার মূল্য কী তাহলে বুঝতে হবে সদস্যদের ওরিয়েন্টশনে বড় ঘাটতি আছে। পুলিশ সদস্যদের অনেকে হৃদয়হীন বা অপরাধপ্রবণ– সমাজের নানা স্তরে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়াও অনেক। এসব কিন্তু আজকের বিষয় নয়। ঐতিহাসিক কাল থেকে হয়ে আসছে। আচমকাই পুলিশের একাংশ এমন হয়ে পড়েনি। অবশ্যই এর পরিবর্তন প্রয়োজন। এখানে রাজনীতিরও যোগ আছে। সুবিধা অনুযায়ী পুলিশকে ব্যবহার করার রাজনৈতিক প্রবণতা থাকলে বাহিনীর ভেতরের কেউ কেউ অভব্যতা করবেই।

আমাদের মতো দেশে পুলিশের ক্ষমতা অনেক, বলতে গেলে সীমাহীন। কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া প্রতিটি পেশার মানুষকে আরও বেশি সচেতনতার চর্চার মধ্যে থাকা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল বাংলাদেশে পুলিশ সদস্যরা সেটাই ভাববেন আশা করি।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ