X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নদী ও নারীর আহত সময়

রাবেয়া রাবু
১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৫৮আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৫৮

রাবেয়া রাবু নদী ও নারী, দুইয়ের মাঝে এক অভিন্ন আর্তনাদ লুকায়িত। দু’জনে আহত হয়, আক্রান্ত হয়, তবু সয়ে যায়। তবে প্রকৃতির দিকে তাকালে দেখা যায়, নদীও জবাব দেয়। ভাঙনের মাধ্যমে, নিরব থাকার মাধ্যমে। আবার কখনও কখনও সবকিছুকে আছড়ে ফেলবার মাধ্যমে। নারীর ক্ষেত্রেও তাই। যার প্রমাণ, নারীরা শিক্ষার আলোক মশাল হাতে বিচারকের আসন পর্যন্ত পৌঁছলেও এখনও তাঁদের প্রতিবন্ধকতার পথ ফুরোয়নি। তবে তারা সবটাই জয় করেছেন এবং করে চলেছেন।

এসব হটিয়ে সময়ের আলোচিত বিষয় হলো, সমাজের ভারসাম্যহীন নারীরা। পারিবারিক উদাসীনতায় স্নেহ ও ঘর বঞ্চিত এইসব নারীদের আশ্রয় হয় ফুটপাত, টার্মিনালে। গাছতলায় কিংবা ফ্ল্যাট-বাড়ির তলায় এদের জায়গা না হয়ে ওইসব জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার কারণ ঝুটা-এঁটো খাবারের সহজলভ্যতা। স্পষ্ট করে বললে, হরেক রকমের মানুষের যাতায়াতে কিংবা দয়ায় এসব স্থানে জুটে যায়। যা অন্য স্থানে দুষ্প্রাপ্য।

বেদনার বিষয় হলো, এসব নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন! কিন্তু যথাযথ বিচার তো দূরের কথা,এসব ধর্ষণের বিষয়ে থানায় ঠিকঠাক কোনও মামলাই হয় না। উল্টো এসব ধর্ষণের শিকার হওয়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রসবকৃত সন্তানকে দত্তক নিতে বহু দম্পতির দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ে। আর এই নারীরা থেকে যান অন্ধকারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ভাষায়, এসব নারীদের ধর্ষণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেন না তাই মামলাও হয় না।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২১ এর এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ২৪ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে মা হয়েছেন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। একটিতে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ‍পুলিশ। অপরটি বিচারাধীন। এসব ঘটনায় জন্ম হওয়া ২৪ নবজাতকের ৮ জনকে আদালতের নির্দেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে।

এই নারীরা জীবন সমুদ্রে সামান্য আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকে। অথচ সামান্য সুযোগে এই নারীদের ওপর কিছু জন্তু যৌনাস্ত্র ব্যবহার করছে। এরকম প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হলো, বান্দরবানের শাহী মসজিদ সংলগ্ন একটি ঘটনা। ২০১৯ এর দিকে একজন নারী সেখানে আশ্রয় নেন এবং কিছুদিন বাদে ভারসাম্যহীন নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। একজন ব্যবসায়ী তার দোকানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ধর্ষণকারীকে শনাক্ত করেন। নিরীক্ষণ দৃষ্টিতে দেখলে, দেশের প্রায় সবকটি বিভাগেই এমন বর্বরতার ঘটনা ঘটে চলেছে।

এদেশে সন্তান দত্তক নেওয়ার তেমন নিয়ম-রীতি নেই। তবে অভিভাবকত্বের একরকমের সুযোগ দেখা যায়। এজন্য কেউ আদালতের শরণাপন্ন হলে তা কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। যেমন, পারিবারিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার বিষয়গুলো। ভারসাম্যহীন এই নারীদের কাছ থেকে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন সচেতনতা নেই। তাছাড়া আগত শিশুর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সুস্থ্যতা বিবেচনায় আশ্রয় পাওয়া স্থানের মানুষজনেরাও বিষয়টিকে উৎসাহিত করেন।

বিষয়টিকে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখলে, নারীকে সমাজ কিংবা সময় আবারও শুধুমাত্র ভেদনযোগ্য জমিন হিসেবে সামনে আনছে সেটা স্পষ্ট হয়। যেখানে ঊর্বরতায় ফেলে যাওয়া বীজে সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রপট হিসেবে জাহির করা হচ্ছে। যেখানে সন্তান পেটে আসা এবং সন্তান প্রসব করিয়ে কাউকে গছিয়ে দিতে পারলেই যেন দায়িত্ব শেষ!

কিন্তু কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করছেন না কেন এরকম ভারসাম্যহীন নারীকে ধর্ষণের শিকার হয়ে পেটে সন্তান ধারণ করতে হলো। সরকারি-বেসরকারি কিছু মুখস্থ সংবাদ-সংলাপ ছাড়া এদের আগলে রাখার তেমন কোনও নজির নেই। কখনও কখনও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও এমন যৌনাস্ত্রের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হতে শোনা যায়। সব মিলিয়ে সামাজিক প্রেক্ষাপটে এদের অবস্থা নজিরবিহীন ও নিম্নগামী।

এরকম অবস্থায় সকলের সচেতনতা জরুরি। তবে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, পারিবারিক আলিঙ্গন। বিস্তৃত অর্থে, যেহেতু এই নারীরাও কোনও না কোনও ঘরে, কারো না কারো গর্ভে জন্মেছেন সেহেতু সেই সব মানুষদের পারিবারিক আবহে এদের গ্রহণ জরুরি। তাহলেই মিলবে সমাধান, মিলবে মুক্তি।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

[email protected]

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ