X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

তোতাকাহিনি

ধ্রুব নীল
৩০ মার্চ ২০২১, ১৯:৫৬আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২১, ১৯:৫৬

ধ্রুব নীল
এক লোক খুব টেনশন নিয়ে দৌড়াচ্ছে। সামনে যাকে পাচ্ছে তাকে বলছে, ভাই আমার তোতাটা হারিয়ে গেছে! এক লোক বিরক্ত হয়ে বললো, ভাই! আমাকে বলছেন কেন? থানায় যান! রিপোর্ট করুন গিয়ে।

তোতা হারানো লোকটা মিনমিন করে বললো, ‘না মানে, বলতে চাচ্ছিলাম, তোতা দিয়ে আমার কাজ নেই। তবে ওই তোতার কথায় কিন্তু ভুলেও কান দেবেন না!’

দেশের আকাশে আগে উড়তো শকুন, এখন উড়ছে তোতা। আওড়ে যাচ্ছে শেখানো বুলি। বলতেই থাকবে। থামতে বললে লাভ হবে না। বোঝালেও কাজ হবে না। তোতাকে ধরে খাঁচায় পুরে রাখুন, একই কথা বলে যাবে। কারণ, চিন্তাভাবনা করে কথা বলার জন্য তো উন্নত মগজ লাগে। তোতার সেটা তৈরি হয়নি।

চিন্তার শক্তি সহনশীল করে, ধৈর্য ধরতে শেখায়, কখন কী করতে হবে সেটার অনেক বিকল্প পন্থা ভাবতে শেখায়। হুট করে মাথা গরম করতে শেখায় না। প্রচণ্ড ঘৃণা থেকে একটা কিছু করে ফেলার তাগিদ দেয় না।

তবে চিন্তাশীল হওয়া মানে যে কাউকে একেবারে ঘৃণা করা যাবে না তা নয়। ঘৃণা করাটা দোষের কিছু নয়। আমরা অনেকেই অনেক কিছু ঘৃণা করি। মাদার তেরেসাও হিটলারকে ঘৃণা করতেন। তিনি একবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উষ্মা নিয়ে বলেছিলেন, ‘একসময় আমার হৃদয়েও একটা হিটলার বাস করতো’। কিন্তু সেই ঘৃণার প্রকাশে মাদারা তেরেসা কিন্তু একটা খেলনা গাড়িও ভাঙেননি। কারণ, এই ঘৃণাটা যতই প্রকাশ করতে যাবেন, দেখবেন ততই আপনার সহনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে, ততই আপনার ভেতর বাড়ছে ‘সীমালঙ্ঘন’-এর প্রবণতা।

তোতা হারানো লোকটার কাছে যাই এবার। তোতাকে বুলি শিখিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। তোতাটা যে তার স্কুলের ছাত্র, এটা সবাই জানে। তার শেখানো বুলিতে যে গলদ আছে সেটাও জানা কথা।

কিন্তু ওই লোকটা জানে না যে তোতাকে বুলি শেখানোর প্রক্রিয়াটাই ভুল। তোতাকে বুদ্ধিমান বানাতে চাইলে সবার আগে তাকে খাঁচামুক্ত করতে হবে। তাকে তার চোখ দিয়ে বিশ্বটাকে দেখতে দিতে হবে। প্রয়োজনে টেলিস্কোপ কিনে দিয়ে মহাবিশ্ব দেখতে দিতে হবে। তারপর বলতে হবে, ‘এই দেখ বাছা, মহাবিশ্ব কত বিশাল। এটার কিন্তু সীমা-পরিসীমা নেই। এর তুলনায় আমাদের দুনিয়া অতি ক্ষুদ্র। তবে নিজেকে যতই ক্ষুদ্র মনে হোক, মহাবিশ্বের বিশালতার চেয়ে আমাদের জীবন কিন্তু অনেক বড়। আমরা কেন বড়? আমরা জানি আমাদের নাম মানুষ, একটা গ্যালাক্সি কিন্তু জানে না যে ওর নাম গ্যালাক্সি। সুতরাং জীবন একটা উপহার। হিংস্রতার চক্রে আটকে গিয়ে বেমক্কা মরে যাওয়ার জন্য এ জীবন নয় রে বোকা।’

তাই তোতা হারানো মানুষটাকে বলি, পাখিকে মারধর করে মুখস্থ বুলি আওড়াতে না শিখিয়ে সত্যিকারের কথা বলতে শেখান, এ ডাল ও ডালে উড়তে শেখান। কিচিরমিচির করতে দিন। মহাবিশ্বের বিশালতা থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্টের মতো জটিল তত্ত্ব বোঝার সুযোগ করে দিন। তবেই দেখবেন, তার ভেতর ইতিবাচক একটা বিভ্রান্তির জন্ম হবে, আর সেই বিভ্রান্তি থেকেই শুরু হবে প্রকৃত শিক্ষা। তারপর হঠাৎ একদিন সে উপলব্ধি করতে পারবে যে ধর্ম মানে স্কুল বা মাদ্রাসার একটি পাঠ্যপুস্তক নয়।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউল্যাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
ইউল্যাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
এভিয়েশন সিকিউরিটির নতুন ইউনিফর্ম উদ্বোধন
এভিয়েশন সিকিউরিটির নতুন ইউনিফর্ম উদ্বোধন
এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ ইসলাম
এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ ইসলাম
সর্বশেষসর্বাধিক