X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

উন্নয়নের চৌরঙ্গীতে পঞ্চাশে বিশ্বজয়

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২৩আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:১৫

হায়দার মোহাম্মদ জিতু তথ্য প্রযুক্তির এই শতকে সবার হাতেই একটি বা দুটি করে স্মার্টফোন আছে। হরেক রকমের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ আছে। কাজেই যেমন খুশি তেমন সাজো প্রক্রিয়ায় কিংবা চটকদার তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে খুব একটা বাধা নেই। কিন্তু বিপদ হলো, এই সুযোগের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু, কিশোরী ও নারীরা। সামাজিকভাবে হেয়  হওয়ার পাশাপাশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপি নেতা আলালের প্রলাপ তেমনি এক উদাহরণ।

কোথাও কোথাও শোনা যায়, এই মন্তব্য কিছু সময় আগের। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এতে এক ধরনের চোরা গিমিক আছে। তা হলো, মন্তব্যটি যদি কিছু দিন পূর্বেরই হয় তাহলে কেন দলীয় নেতাকর্মীরা পূর্বেই একে প্রতিরোধে সরব হলেন না? নাকি ভাইরাল না হলে আজকাল দায়িত্ববোধ জাগে না? যদিও এরইমধ্যে একে প্রতিরোধে কিছু মামলার খবরও জানা গেছে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে শেখ হাসিনার সৌন্দর্য হলো, এসব বাতুলতা কিংবা পাগলের প্রলাপ তাঁকে ছোঁয় না। বাঙালির স্বপ্ন পূরণে দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় তাঁর পথ খেই হারিয়ে ফেলে না। বরং তাঁর কর্ম-দর্শন বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসহীন মনোজগৎ থেকে টেনে অসীম সাহসিকতায় নিয়ে গেছে উন্নয়নের চৌরঙ্গীতে। যার অনন্য উদাহরণ খাদ্য ঘাটতির মতো খাদের কিনারা থেকে দেশ আজ বৈদেশিক বাণিজ্য কাঠামোয় উঠে এসেছে। বৈশ্বিক সংকটে প্রতিবেশীসহ বিশ্ব রাষ্ট্রসমূহের পাশে দাঁড়াবার হিম্মত দেখাচ্ছে।

প্রতিবেশী কিংবা ভিনদেশি সহযোগিতার কৌশলগত খাঁচা থেকে বেরিয়ে পেঁয়াজ, কোরবানির গরু, মাছ উৎপাদনসহ নিজেদের সক্ষমতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব সূচকে প্রায় সব ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ দেশের স্বাধীনতার বয়স মাত্র ৫০ বছর। যার আবার অর্ধেকের বেশি সময়জুড়ে অযাচিত শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল। হাস্যরসের বিষয় হলো, এরপরও কেউ কেউ দেশ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। অথচ খোদ আমেরিকায় কর ব্যবস্থা চালু করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৫০ বছর। চালাতে হয়েছিল দমন, নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড। সেসব মেলালে আমাদের দেশের বয়সই কিন্তু মাত্র ৫০।

আরও বিস্তৃত অর্থে বললে, এই যে এত অল্পতেও ঘুরে দাঁড়ানো, এর সবটাই বাঙালির আত্মবিশ্বাস শেখ হাসিনার সাহসের ফসল। তাঁর নেতৃত্বের কারণেই দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বের ১০টি দরিদ্রতম দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিছু সময় পূর্বেও যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮৮ শতাংশ, বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা ছিল ৮৮ শতাংশ, সেখান থেকে বাঙালির আত্মবিশ্বাস শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ হওয়ার পথে। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)-এর তথ্য মতে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ এই দেশ বিশ্বে ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।

বিজয়ের এই ৫০ বছরের পথে মত-পথ ভিন্নতা থাকতে পারে, থাকবেই। কিন্তু বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে হওয়া উন্নয়ন যজ্ঞকে সুস্থ ব্যক্তি মাত্র অস্বীকার করতে পারবে না। এই সেদিন অর্থাৎ ২০০৫-০৬ সালেও যেখানে দেশের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার, সেটা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫৫৪ ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে শূন্য দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১ বিলিয়ন ডলারের কম, সেটা আজ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২শ’ ২৭ মেগাওয়াট। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.০২ তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই যে অদম্য অভিযাত্রা তাতে সবাই যে শেখ হাসিনার পক্ষে হাতে তালি দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তা কিন্তু নয়। বরং তাঁকে বাধা দিয়েছেন নানা চোরাগোপ্তা এবং মৃত্যুঝুঁকি দিয়ে। এক পদ্মা সেতুই তার অনন্য উদাহরণ। যেখানে মিছেমিছি দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব সংস্থাগুলো। ট্র্যাজেডি হলো, এরকম চরম মুহূর্তেও কিছু অংশ পাশে না থেকে মজা দেখবার জন্য বানরের হাতে লাঠি তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল। আক্ষেপের কথা হলো, জাতির মর্যাদার প্রশ্নে যে কখনও কখনও আপন স্বার্থ সম্ভাবনাকে ভুলে জাতীয় ঐক্য করতে হয়, সরকারের পাশে দাঁড়াতে হয়, সেই সাংস্কৃতিক শূন্যতা এখানে এখনও রয়ে গেছে।

আনন্দের বিষয় হলো, বাঙালির বেহুলা শেখ হাসিনা এই চরম সংকটকেও সামাল দিয়েছেন। যা বাঙালিকে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নয় বরং কলঙ্ক লেপনের হাত থেকেও বাঁচিয়েছে। বিজয়ের এই ৫০ বছরে সময়ের আরেক সাফল্য হলো, দেশের যুদ্ধাপরাধী এবংজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা। এসবই সুশাসনের ইঙ্গিত।

বিজয়ের এই বাতাবরণে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি দিগ্বিদিক উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। অর্থনৈতিক মুক্তির এ বিষয়টিকে আরও টেকসই এবং যুগোপযোগী করতে এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক শিষ্টাচার। এক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষাই প্রথম এবং প্রাথমিক। কারণ, বিংশ শতকে প্রকাশের মাধ্যম অজস্র। তাছাড়া জনসংখ্যার এই স্রোতে জনে জনে পাহারা দেওয়া মুশকিল। তবে এটা মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, যেকোনও প্রকাশই পারিবারিক শিক্ষা, রুচি এবং সংস্কৃতিবোধ প্রকাশ করে। কাজেই পারিবারিক সম্মান রক্ষার দায়িত্ব ব্যক্তির নিজেরই।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
খেলাফত শ্রমিক আন্দোলনের নেতার জন্য থানা ঘেরাও, মুক্তি না দিলে হরতাল
খেলাফত শ্রমিক আন্দোলনের নেতার জন্য থানা ঘেরাও, মুক্তি না দিলে হরতাল
পূজার অনুষ্ঠানে হামলায় আহত ৩, গ্রেফতার ২
পূজার অনুষ্ঠানে হামলায় আহত ৩, গ্রেফতার ২
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
কালুরঘাটে হচ্ছে নতুন সেতু, ভিত্তিপ্রস্তরে থাকছে না প্রধান উপদেষ্টার নাম
কালুরঘাটে হচ্ছে নতুন সেতু, ভিত্তিপ্রস্তরে থাকছে না প্রধান উপদেষ্টার নাম
সর্বশেষসর্বাধিক