X
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
১৮ বৈশাখ ১৪৩২

সিনেমার দিন দ্য ডে

মুন্নী সাহা
২৪ জুলাই ২০২২, ১৬:৫০আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ২১:৪৯

সবাই মিলে দলবেঁধে ‘দিন দ্য ডে’ দেখার হুজুগটা হঠাৎ করেই। মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম এবারের ছবিটাও দেখবো। কারণ, অনন্ত জলিল আর বর্ষার প্রথম ছবি থেকে যে কটা এখনও বাজারে, সব কটাই দেখা। প্রফেশনাল কারণেই।

ছবি বানিয়ে, হিরো- হিরোইন অনন্ত-বর্ষা শুরু থেকেই আলোচিত। কখনও অনন্ত’র ইংরেজি বলা, কখনও আজগুবি গল্প, কখনও কাঁচা গ্রাফিক্সে নানান কিছু দেখানোর কারণেও। কালে-কালে সময়ও কিন্তু কম পার করেনি আলোচিত এই ডিজিটাল হিরো। নানান সমালোচনায় এরা যেমন হিট, আবার এদের ট্রল বা নেগেটিভ আলোচনাকে পুঁজি করে আমরা সাংবাদিকরাও কম যাই না বা যাইনি...।  টিআরপি বাড়ানোর জন্য ওদের পিছু নিয়েছি, যেকোনও ইস্যুতে ওদের খবর করেছি।

আবার ওদের,  বিশেষ করে অনন্ত’র ইন্টারভিউ করতে গিয়ে আমাকে নিয়েও অনলাইন গরম হয়েছে। এই গরম হাওয়া অনিবার্য জেনেও অনন্ত-বর্ষা বরাবরই আমার সঙ্গে অমায়িক। অনন্ত তো ইন্টারভিউ দিতে এসেই বলেন– ‘আপা আপনি ভালোভাবে ছিল্লা দিবেন, ভয়ই তো লাগে!’ সত্যি বলতে কী, আমি অনেকবার অনেক ইস্যুতে ওদের স্টুডিওতে ডেকেছি, অনেকবার ইন্টারভিউ করেছি। সবাই বিনোদিত হয়েছেন, অনেকে বলেছেন আমি অনন্তকে পচানোর চেষ্টা করেছি ইত্যাদি ইত্যাদি!  কিন্তু একবারও অনন্ত-বর্ষা আমাকে বলেননি, ‘দিদি আপনার অনুষ্ঠানে আসবো না’। বরং ক্রিকেট, ফুটবল, রাজনীতি, সিনেমা, ঈদ, পূজা যেকোনও ছুঁতোয় তারা এসেছেন, কথা বলেছেন।

অনন্ত জলিলের মুভিগুলোর মতো ওদের ভেতরটা সারল্যে ভরা। এজন্যে এ জুটিকে আমি পছন্দ করি। ওরা জাত অভিনেতা-অভিনেত্রী নয় বা সিনেমার লোকও না। তারপরও শখে সিনেমায় নেমেছেন। সিনেমা নির্মাতা হিসেবে হাত পাকাচ্ছেন। সিনেমা একটা টোটাল ব্যাপার, মানে টাকা লগ্নি থেকে হিরো-হিরোইন নির্বাচন, গল্প, গান হিট হওয়ার কৌশল থেকে হালের প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডিং পর্যন্ত। আর মিডিয়ার প্রচার প্রোপাগান্ডা তো বিরাট ফ্যাক্টর। এবার অনন্ত-বর্ষার দিন দ্য ডে, ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায়। প্রস্তুতি থেকে মুক্তি পাওয়ার টাইমলাইন প্রায় তিন বছর। ঈদ উপলক্ষে দেশের প্রায় সবক’টা চ্যানেলে এই সিনে দম্পতি কথা বলেছেন। যতটা না ইরানের সঙ্গে মুভি বানানোর অভিজ্ঞতা, তার চেয়ে টিভি হোস্টরা অনন্ত জলিলের ইংরেজি পারঙ্গমতা, কেন এত টাকা ইনভেস্ট? বা  কেন নিজের বউই নায়িকা– এসব প্রশ্ন করে শো ভাইরালের চেষ্টা করেছেন।

অনন্তরা, ওদের মতো করেই হ্যান্ডল করেছেন। এত সবের মধ্যে এক অপমানজনক প্রশ্নের ট্র্যাপে পড়ে গিয়েছিলেন বর্ষা।  নিজেকে সামাল দিতে না পেরে, বিভিন্ন নায়িকাদের ইঙ্গিত করে উদাহরণ টেনে সাংবাদিকদের টিআরপি দিয়েছেন, ক্যামেরার সামনে কেঁদেছেন, অভিমানের কথা লিখেছেন। এতে অবশ্য বর্ষার লস হয়নি। সবাই  ধিক ধিক বলে ‘বর্ষা-অনন্ত’কে বর্জন করবে বলে একদিক থেকে দাবি এলেও টগবগে তরুণরা ব্যাপারটা অন্যভাবে নিয়েছেন। হ্যাঁ, টগবগে তরুণদের কথাই বলছি। যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার কারণে, কুল বা বরইয়ের চেয়ে স্ট্রবেরি বেশি চেনে। বিটিএস শোনে, তামিল মুভির কোন শটটা কোন হলিউড বা কোরিয়ান, চীনা ছবির নকল তা এক সেকেন্ডে বলে দেয়। অসুস্থ প্রতিযোগিতার সাংবাদিকতার, পারসোনাল অ্যাটাক, সীমা লঙ্ঘন বা অসংবেদনশীল অ্যাটিচুড ওদের বোঝাপড়াকে চ্যালেঞ্জ করে।  সে কারণেই হয়তো বর্ষার অনল বাক্যের বর্ষণে, ওই গ্রুপটা যুক্তিতে বর্ষার পক্ষ নিয়েছে। বাংলাদেশের শহর গ্রাম সবখানেই, এই গ্রুপ মানে ১৮ থেকে ২০ বয়সী,  তামিল- ইংলিশ-কোরিয়ান মুভি ভাজা ভাজা করে খাওয়া ছেলেমেয়েরা আছে বলেই আমার হিসেবে বলে। ফলে, আমাদের ঘরে যিনি বা যারা এ বয়সের,  রুচির প্রতিনিধি তাদেরই আবদার– দিন দ্য ডে দেখতে হবে...। কেন একজন নায়িকাকে এমন করে ইনসাল্ট করবে? কেন অনন্ত জলিলকে সারাক্ষণ ট্রল করবে? এসব তাদের কৌতূহল।

মূলত সেই আবদার মানে শ্রেষ্ঠ, শীর্ষ, মেঘমালাদের এসব প্রশ্নের মুখেই বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে সহকর্মী আর পরিবারের সদস্যরা মিলে দিন দ্য ডে দেখার আয়োজন করলাম। টিকিট কিনতে গিয়ে তো বিরাট ধাক্কা। টিকিট নেই। তাই অপেক্ষা করতে হলো। পরে, আগে ভাগে লোক পাঠিয়ে টিকিট নিলাম ২৩ জনের। পূর্ব পরিচয়ের রেশ ধরে অনন্ত-বর্ষাকে একটু অভিনন্দন জানানোর জন্যই ফোন করলাম, জানালাম আমাদের দিন দ্য ডে’র watch party’র কথা। মিডিয়ার বন্ধু এবং পরিবারের ইয়ং স্টাররা দিন দ্য ডে দেখবে শুনে অনন্ত-বর্ষাও মজা করে টিকিটের আবদার করলেন আমার কাছে।

শো শুরুর আগে পোস্টারের পাশে সেলফি তোলার হিড়িক দেখে আমরাও ফেসবুকে পোস্ট দেই– ‘আমাদের দিন the day...’। পোস্ট দেখে,  কমেন্টে বন্ধুরা বেশিরভাগই লিখছেন– অনেস্ট রিভিউ দেন, অনেস্ট রিভিউ চাই...।

এই অনেস্ট রিভিউ দেবার দাবি সংবলিত কমেন্টের অন্তর্নিহিত কোনও অর্থ থাকলেও থাকতে পারে! কিন্তু হলভর্তি শিক্ষিত ১৮/১৯/২০/২২ বয়সী দর্শকদের হৈ হুল্লোড়, ঠিক জায়গা মতো হাততালি বা স্লোগানে আমার তো নিসপিস করছিলো। ইশ! যদি হলের ভেতরে ২ ঘণ্টায় দর্শকদের এসব অভিব্যক্তি টিভি পর্দায় তুলে ধরতে পারতাম, তাইলে বেশ অনেস্ট রিভিউ হতো!

অনেস্ট রিভিউয়ের আর বেশি কী-ই বা হতে পারে?

গত ২-৩ বছর আমার তামিল, মালায়ালম ছবি দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। শ্রেষ্ঠ, শীর্ষ, জয়, আরাফদের সঙ্গে  বসে তামিল, হিন্দি,  মালায়ালম ছবি দেখতে দেখতে এক ধরনের গড় স্ট্যান্ডার্ড মাথায় সেট হয়ে গেছে। আমাদের ‘দিন the day’ নিয়ে সেই গড় স্ট্যান্ডার্ডটুকুও প্রত্যাশায় রাখিনি। মাথায় নিয়ে গেছি, যে A J ফিল্মস এর বাকিগুলার মতোই সারল্যের ভুলে ভরা কাঁচা কিছু দেখবো। গালাগাল দিতে দিতে, গাল দেবার আনন্দে বাসায় ফিরবো, তারপর একচোট, দুই চোট, হাজার চোট গল্প হবে, হাসাহাসি করবো। দেশের সিনেমাকে গাল দিবো, অবোধের গো বধ-এর আনন্দ নেবো।

নাহ! মোটেও তা হয়নি। অত গুড় আধ সের না। এবার AJ এর পরিশ্রম,  ম্যাচিউরিটি অন্য লেভেলে। দারুণ দৃশ্যায়ন, সিনেমাটিক অ্যাকশন, সরল সাসপেন্স– সব মিলে মনে হচ্ছিলো কোনও তামিল মুভি দেখছি। পুরোটা সময় তরুণদের হাততালি, আনন্দ, ফোড়ন কাটা এবং শেষে দর্শক সারিতে অনন্ত-বর্ষাকে প্রাণ খুলে অভিনন্দন জানানোর ভঙ্গিতে কোনও কপটতা ছিল না। এই অভিব্যক্তি অনুবাদ করে কপাল কুঁচকানো প্রযোজক মেকারদের বলি– আপনারা  ছবি বানান ‘কান’ এর জন্য, নয় তো অনুদানের জন্য।  আর অনন্ত-বর্ষারা, মন-প্রাণের আনন্দের জন্য এবং আনন্দ দেবার জন্য মুভি বানায়। লক্ষ্যটা যদি মানুষ হয়, মানুষের আনন্দ হয়, তাহলে বাংলা সিনেমার ‘দিন the day’ ফিরতে বেশি দিন লাগবে না।

অভিনন্দন দিন the day টিমকে।

লেখক: প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জনগণ নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না: আমির খসরু
জনগণ নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না: আমির খসরু
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
এক মোটরসাইকেলে চার যুবক, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচাপায় দুজনের মৃত্যু
এক মোটরসাইকেলে চার যুবক, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচাপায় দুজনের মৃত্যু
ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভে অংশ নিতে জনতাকে আহ্বান নাহিদ ইসলামের
ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভে অংশ নিতে জনতাকে আহ্বান নাহিদ ইসলামের
সর্বশেষসর্বাধিক