X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

তৎকালীন জোট সরকার ও হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায় ২১ আগস্ট

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
২১ আগস্ট ২০২২, ০০:০২আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ০০:০২

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা আরেকটি ন্যাক্কারজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবৈধ সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, ঠিক একইভাবে ২১ আগস্টেও তার পরিবারের সংশ্লিষ্টতা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, বিচার ও সাক্ষ্যপ্রমাণে পাওয়া যায়।

জিয়াউর রহমান যেমন ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড, তার পুত্র তারেক রহমান তেমনই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড।

২০০৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী। ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে দিনের আলোয় হামলা চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং আওয়ামী  লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকেও নৃশংসভাবে কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। এই সব বর্বর হত্যাকাণ্ড শুধু ব্যক্তি মানুষকেই হত্যা নয় পাশাপাশি দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে পরিচালনা করা হয়েছে।

কী নির্মম, কী বীভৎস! যারা ও যে দল এই দেশ স্বাধীন করলো তাদের ওপরই বারবার হামলা এবং সেই আগস্ট মাসেই। আগস্ট তাই আমাদের জন্য অভিশপ্ত মাস আর ঘাতকদের উল্লাসের মাস।

২১-এ আগস্ট শরতের শুভ্র আকাশ গ্রেনেডের ধোঁয়ায় বিবর্ণ হয়ে কালসে হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছিল জোট সরকার, জঙ্গিরা, তারেক রহমান ও তার হাওয়া ভবন। ক্ষমতার কী ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও কলঙ্কিত অপব্যবহার! যেন সভ্য সমাজে এই গ্রেনেড হামলার ধিক্কার জানানোরও ভাষা-শব্দ অভিধানে পাওয়া দুষ্কর। 

সেদিন ২১ আগস্ট ২০০৪, শনিবার; ৭ ভাদ্র, ১৪১১, শরৎকাল। বিকেলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় দলীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সারাদেশে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিল। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা।

বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ চেপে বিকেলে ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে আসেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে খোলা ট্রাকই ছিল সেদিনের প্রতিবাদ সভার মঞ্চ। ট্রাকে দাঁড়িয়ে সেদিন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রায় ২ ঘণ্টার মতো বক্তৃতা দিয়েছেন। পরে ৫টা ০২ মিনিটে সভার প্রধান অতিথি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুরু করেন। বক্তৃতা করেছিলেন প্রায় ২০ মিনিট, সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই নারকীয় গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড।

সে এক ভয়াল অবস্থা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১২টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আওয়ামী লীগ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আইভী রহমানসহ আরও ১১ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই শুরু হবে গণমিছিল। কিন্তু মিছিল আর হলো না।  গ্রেনেড হামলায় আচমকা আকাশ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেলো। শরতের বিকেল গ্রেনেড হামলায় প্রকম্পিত হয়ে গেলো। হামলায় চারদিকে ছোটাছুটি, প্রাণভয়ে মানুষজন দিগবিদিক দৌড়াচ্ছেন। গ্রেনেডের বিকট আওয়াজ আর বিস্ফোরণের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে আকাশ। আক্রান্ত মানুষের আর্তচিৎকার। থোকা থোকা রক্তস্নাত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ যেন মৃত্যুপুরী। মরণের নৃত্য যেন নেমেছিলো আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে। সেদিন আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা বিস্ফোরণের পর থেকেই পুরো ঢাকা হয়ে ওঠে এক আতঙ্কের নগরী।

নারকীয় সে হামলায় নিহত-আহতদের চিকিৎসায় কোনও সহযোগিতা করেনি জোট সরকার। পুলিশ বাহিনী কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী  লীগ নেতাকর্মী প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়। আহত রক্তাক্ত হাত-পা হারানো মানুষগুলোকে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা না করে উল্টো টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয় যাতে ঘাতকরা সহজে পালিয়ে যেতে পারে। এমনকি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করা হলেও আলামত নষ্ট করতে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ঘটনাস্থলের সকল আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। একইসঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত।

আহতরা যেন চিকিৎসা না পান সেজন্যও উপরের নির্দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের অলিখিত নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছিল। হামলার পর অগণিত আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে নেওয়া হলেও মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ড্যাবের ডাক্তাররা সেদিন চিকিৎসা দিতে আসেনি। ফলে আহত বেশিরভাগ নেতাকর্মী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিল।

এমন ভয়াবহ ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতাসহ ৫ জন এমপি আহত হলেও সরকারের কোনও মন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি এবং জোট সরকারের কেউ যায়নি আহতদের দেখতে। বরং ঢাকা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিডিআর নামিয়ে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করা হয়।

পরদিন সন্ধ্যার আগেই পোস্টমর্টেম শেষ হলেও নিহতদের লাশ গভীর রাতের আগে স্বজনদের দেওয়া হলো না। গায়েবানা জানাজার পর শোক-মিছিলেও হামলা করলো পুলিশ এবং বিএনপির ক্যাডাররা।

ঘৃণিত গ্রেনেড হামলা থেকে কোনোভাবে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারেন, তার সব চেষ্টায়ই করেছিল হামলাকারীরা। তার গাড়ির কাঁচে কমপক্ষে সাতটি বুলেটের আঘাতের দাগ, গ্রেনেড ছুড়ে মারার চিহ্ন এবং বুলেটের আঘাতে পাংচার হয়ে যাওয়া গাড়ির দুটি চাকা সে কথাই প্রমাণ করে। এটি ছিল একেবারে ঠাণ্ডামাথায় হত্যার পরিকল্পনা। তিন স্তরের বুলেট নিরোধক ব্যবস্থাসম্পন্ন মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটিই সেদিন শেখ হাসিনার প্রাণ বাঁচিয়েছিল। 

গ্রেনেড আক্রমণ ব্যর্থ হলে শেখ হাসিনাকে হত্যার বিকল্প পন্থা হিসেবে বন্দুকধারীদের তৈরি রাখা হয়। আর এই বন্দুকধারীরাই খুব হিসাব কষে নেত্রীর গাড়ির কাঁচে গুলি চালায়। এই গুলি বুলেটপ্রুফ কাঁচ ভেদ করতে ব্যর্থ হলে তারা গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। কিন্তু এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সব শেষে গাড়ির চাকা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় গুলির আঘাতে গাড়ির বাঁ পাশের সামনের ও পেছনের দুটি চাকা পুরোপুরি পাংচার হয়ে গেলেও চালক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই গাড়িটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ধানমণ্ডির সুধা সদনে নিয়ে যান। গ্রেনেড হামলার পরপরই শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ঘেরাও করে নামিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে আসেন। আর তখনই গাড়ির সামনের জানালা লক্ষ্য করে পর পর অনেকগুলো গুলি ছোড়া হয়। এ সময় তাকে ঘেরাও করে রাখা আওয়ামী সভাপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী মাহবুব স্পটেই মারা যান।

কোনোক্রমে শেখ হাসিনা গাড়িতে ওঠার পরপরই গাড়ি চালু করতেই পেছন থেকে বাঁ দিকের সিট লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। কোনোরকমে জীবন নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদনে বেঁচে ফেরেন শেখ হাসিনা।

গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা সমগ্র বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত করেছিল। তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি, বিএনপির এমপিরা সরাসরি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে অভিযোগ করে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। খুনিদের মিশন শেষ করার সব ব্যবস্থা করে পরের দিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছিলেন, উই আর লুকিং ফর শক্রস্। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা এও বলেছিল, শেখ হাসিনাই নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়ে হামলা করেছিল।

খালেদা জিয়া নিজে সংসদে বলেছিলেন, “উনাকে (শেখ হাসিনাকে) মারবে কে”। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পক্ষ থেকে এমন অবিশ্বাস্য কথাও ফলাও করে প্রচার করা হয় যে, আওয়ামী লীগ নিজেরাই জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।

ভয়াল গ্রেনেড হামলার ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক চারটি মামলা করা হয়। ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় এসআই ফারুক আহমেদ, শেখ হাসিনার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেন। ওই বছরের ২০ অক্টোবর একই থানায় আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাদী হয়ে অপর মামলাটি করেন। মামলাগুলো একত্রে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিন্তু হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের ওপর। তদন্তের শুরু থেকেই নানা গল্প সাজানো হয়। জোট সরকার বিচারপতি জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে এক সদস্যের এক তদন্ত কমিটি করেছিল, এই ‘লোক দেখানো’ তদন্ত কমিটিও কোনও সঠিক প্রতিবেদন দিতে পারেনি বরং বলেছিল পাশ্ববর্তী একটি দেশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের কমিশন সরকারের কাছে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে এই গ্রেনেড হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল বলে উল্লেখ করে। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা বলতে সে সময় ভারতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর অবৈধ সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও পরবর্তীতে তার স্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যেভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা ও পুনর্বাসন করেছিলেন তেমনিভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট চেষ্টা করেছে ২১ আগস্টের খুনিদের রক্ষা করতে। হামলাকারীদের একজন মওলানা তাজউদ্দিনকে পাকিস্তান পাঠানো হয়।

আবার চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক ও সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমি গ্রেনেড হামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার আভাস দিয়েছিলেন। সাক্ষী হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে রুমি বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগে থেকেই সবকিছু জানেন বুঝতে পেরে আমি কথা না বাড়িয়ে সেদিন তার অফিস ত্যাগ করেছিলাম।’

জেনারেল রুমি উল্লেখ করেন, হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী মাওলানা তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী নিজে নিরাপদে বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা সঠিক কিনা তিনি তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বেগম খালেদা জিয়া তাকে বলেন, ‘কোথা থেকে তুমি এই উদ্ভট তথ্য পেয়েছ। তাজউদ্দিন পাকিস্তানে না কোথায় গেছে সে ব্যাপারে তোমার মাথাব্যথা কেন?’ (সূত্র: দৈনিক সমকাল ২৩.৮.২০১২)

জেনারেল রুমির বক্তব্য ‘সাপ্তাহিক ২০০০’-এর এক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। জেনারেল রুমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছেও অনুরূপ জবানবন্দি প্রদান করেন। সন্দেহভাজনদের বিচারকাজের সঙ্গে সংশিষ্ট কর্মকর্তারাও রুমির এই বক্তব্যের কথা স্বীকার করেছেন। সাবেক গোয়েন্দা প্রধান অভিযোগ করেন, তাকে সেদিন গ্রেনেড হামলার তদন্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং এটা চাওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার ওপর নাখোশ হন এবং গ্রেনেড হামলার ইস্যু নিয়ে তার (রুমি) সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় তিনি তাকে তিরস্কার করেন। 

সাবেক গোয়েন্দা প্রধান বলেন, গ্রেনেড হামলার খবর পেয়েই তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু টেলিফোনে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে ফোন করেন। হারিছ অচেনা স্বরে তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে বলার আগেই ফোনটি কেটে দেন। সাবেক ডিজিএফআই প্রধান বলেন, পরে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফোন করেন। কিন্তু ঘটনা জানেন বলেই তিনিও ফোনটি কেটে দেন। (সূত্র: দৈনিক সমকাল ২৩.৮.২০১২ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস)

২০১৭ সালে ২১ আগস্ট তারিখে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এ হামলার সঙ্গে জড়িত। আমাকেসহ পুরো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতেই যুদ্ধক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীরা যে গ্রেনেড ব্যবহার করে, তা আমাদের সমাবেশে ব্যবহার করা হলো। হামলার পর পিন্টুর ভাই ও কারারক্ষীকে বিমানে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডি ৫ নম্বর রোডে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি। ওই বাড়িতে সে দীর্ঘদিন থেকে কী করছিল? ১ আগস্ট ওই বাড়ি ছেড়ে তারেক রহমান ক্যান্টনমেন্টের বাসায় যায়। হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট রাতে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়িতে কয়েকটি বড় বাক্স-পেটরা নামানো হয়। কিছু সময় পর সেগুলো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কী ছিল তাতে? সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতেই এই হামলা চালানো হয়েছিল। ট্রাকের গায়ে না লেগে গ্রেনেডটি যদি ভেতরে পড়তো তবে আমরা কেউ-ই বাঁচতে পারতাম না। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন, মোহাম্মদ হানিফসহ নেতারা মানববর্ম রচনা করে আমাকে রক্ষা করেছেন।’ (দৈনিক জনকন্ঠ, ২২ আগস্ট ২০১৭)

এসব বক্তব্য থেকে সহজেই পরিষ্কার হয় যে খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলা বিষয়ে জানতেন এবং হামলা থামাতে কোনও পদক্ষেপ নেননি।

গ্রেনেড হামলার পর প্রথমে এক ই-মেইলকে ঘিরে শৈবাল সাহা পার্থ নামের এক যুবককে ধরে এনে গ্রেনেড হামলায় অ্যারেস্ট দেখানো হয়। ভারতে পড়াশুনার কারণে পার্থকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। হামলার স্বীকারোক্তির জন্য পার্থকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর মগবাজার এলাকা থেকে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেছুর রহমানকে গ্রেফতার করে আওয়ামী লীগকেই দোষী করার অপচেষ্টা চালানো হয়।

২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে সিআইডি আটক করে। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়ার কাছ থেকে সিআইডি সাজানো জবানবন্দী আদায় করে। কিন্তু পরে প্রকাশ পায় জজ মিয়ার পরিবারকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন প্রতিমাসে মাসোহারা প্রদানের শর্ত দিয়ে এই সাজানো ভুয়া জবানবন্দী নিয়েছিল। পরিবারকে টাকা দিয়ে নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আসামি করে তাঁর কাছ থেকে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে সিআইডির স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনা ‘জজ মিয়া নাটক’ হিসেবে পরিচিত। জজ মিয়াকে বাড়ি কিনে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। ২০০৫ সালে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়–নানাভাবে নির্যাতন করা হয় এবং বিনা কারণে জজ মিয়া প্রায় চার বছর কারাগারে থেকে পরে মুক্তি পায় ২০০৯ সালে জুন মাসে।

জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে নেওয়া ১৫টি গ্রেনেড দিয়ে জনসভায় হামলা চালানো হয়। হাওয়া ভবনে তারেক রহমান, যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, আবদুস সালাম, হানিফ পরিহনের মালিক হানিফসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতা এবং মুফতি হান্নানসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের কয়েকদফা বৈঠকে গ্রেনেড হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেছিলেন। হাওয়া ভবনেই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বৈঠকও হয়। পরবর্তীতে যা মুফতি হান্নানসহ আটজন আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সত্য বেরিয়ে আসে।

মামলায় আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে আসে- দণ্ডপ্রাপ্ত রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিম হামলার আগে বনানীর হাওয়া ভবনে জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম ডিউক ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার হামলার পর জঙ্গিদের আশ্রয় ও দেশ ছেড়ে পালাতে সহায়তা করেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম হোতা জঙ্গি মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে জানান, ওই হামলায় তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছিলেন। ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান আরও জানান, তারেক জিয়া আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন। মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে যা বলা হয়েছে— ‘ ... আমরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার জন্য  মোহাম্মদপুরসহ আরও কয়েক জায়গায় গোপন মিটিং করি। আমরা ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভার সংবাদ জানতে পারি। সেখানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তারেক জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। আমি, মাওলানা আবু তাহের,  শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন আল মারফাজুলের গাড়িতে করে মাওলানা রশিদসহ হাওয়া ভবনে যাই। সেখানে হারিছ  চৌধুরী, লুত্ফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামের মুজাহিদ ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমকেও উপস্থিত পেয়েছি। কিছুক্ষণ পর তারেক জিয়া আসেন।

আমরা তাদের কাছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ  নেতাদের ওপর হামলা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাদের সহায়তা চাই। তখন তারা আমাদের সকল প্রকার প্রশাসনের সহায়তার আশ্বাস দেন। তারেক সাহেব বলেন যে, আপনাদের এখানে আর আসার দরকার নেই, আপনারা বাবর সাহেব ও আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবেন, তারা আপনাদের সকল প্রকার সহায়তা করবে। ১৮ আগস্ট আমি, আহসান উল্লাহ কাজল, মাওলানা আবু তাহের আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমণ্ডির সরকারি বাসায় যাই। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু, বাবর, মাওলানা তাজউদ্দিন কমিশনার আরিফ ও হানিফ পরিবহনের হানিফ উপস্থিত ছিল। আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন যে, কমিশনার আরিফ ও হানিফ সাহেব আপনাদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করবে এবং আমাদের সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। সে মোতাবেক ২০ আগস্ট মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল ও আহসান উল্লাহ কাজল আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে ১৫টি গ্রেনেড ২০ হাজার টাকা নিয়ে বাড্ডার বাসায় নিয়ে আসে। ২১ আগস্ট আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলা চালাই।’ (দৈনিক ইত্তেফাক ১০ অক্টোবর ২০১৮)

ভয়াল হামলার দীর্ঘ ১৪ বছর পর ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআইর সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইর সাবেক ডিজি ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ (পলাতক), মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক), মাওলানা শেখ আবদুস সালামসহ মোট ১৯ জন। আর যাবজ্জীবন দণ্ড পেয়েছে তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরীসহ ১৯জন।

পাশাপাশি, পুলিশের সাবেক আইজি খোদাবক্স চৌধুরী (কারাগারে), সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রহুল আমিন (কারাগারে), এএসপি (অব.) আবদুর রশিদ (কারাগারে) ও এএসপি (অব.) মুন্সি আতিকুর রহমানকে (কারাগারে) তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক (কারাগারে), সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা (কারাগারে), সাবেক আইজিপি শহুদুল হক (কারাগারে), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার (পলাতক), ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান (পলাতক) ও ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার খান সাঈদ হাসানকে (পলাতক) দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। যার কিছু অংশ এখানে ধরা হলো। আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে হালকা নাশতা করানো হবে’—এই উদ্ধৃতি দিয়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় হামলা করে। তৎকালীন রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে যুদ্ধে ব্যবহৃত স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটনা ঘটানো হয়।

প্রশ্ন ওঠে কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? শুধু আক্রমণই নয়, দলকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল ঘটনার আগে বিভিন্ন ঘটনাস্থলে এ মামলার আসামিরা অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সভা করে পরিকল্পিতভাবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে ঘটনার তারিখ ও সময় মারাত্মক সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা এবং শতাধিক নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে জখম করে। এই মর্মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের শাস্তি প্রদান যুক্তিসঙ্গত বলে এই আদালত মনে করেন। (দৈনিক কালের কণ্ঠ; ১১ অক্টোবর, ২০১৮)

যত দ্রুত সম্ভব এই ঘৃণ্য হামলার বিচারের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে রায় কার্যকর করা প্রয়োজন। যারা পলাতক আসামি তাদের যেকোনও মূল্যে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হোক। পাশাপাশি ২১-এ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়েও একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক যার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাকারীদের অপকর্মের বিশদ তথ্যসহ আরও সত্য উদযাটিত হবে। হাওয়া ভবন, জোট সরকারের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিদেশি রাষ্ট্রও জড়িত থাকলে তাও বেরিয়ে আসবে।

এই হামলায় কত টাকা খরচ করা হয়েছে, কারা গ্রেনেড কিনেছে, কীভাবে তা পরিবহন করা হয়েছে, জঙ্গিদের কীভাবে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে– সহ যাবতীয় সকল বিষয়ে সত্য উন্মোচন করা যাবে। 

২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত ও আহতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী।

 

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে: বিএসএমএমইউ ভিসি
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে: বিএসএমএমইউ ভিসি
দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে পুলিশ সক্ষম: আইজিপি
দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে পুলিশ সক্ষম: আইজিপি
প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম সেরা ফোডেন
প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম সেরা ফোডেন
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক