X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেট, তুই বড় অপরাধীরে...

রেজানুর রহমান
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৫১আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৫১

খেলায় কীভাবে লড়াই করে জিততে হয় সেটা আরেকবার দেখিয়ে দিলো শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। আফগানিস্তানের সঙ্গে হার দিয়ে এশিয়া কাপের এবারের পথচলা শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষ কোনও দেশই শ্রীলঙ্কাকে গোণার মধ্যে ধরেনি। অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়া দেশটির ক্রিকেট আর কতদূরই বা যাবে। এশিয়া কাপে খেলতে এসেছে এটাই তো বড় কথা। কিন্তু ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা যে শ্রীলঙ্কাই। বিশেষ করে টি-২০ ফরমেটে। সে কথা আবার প্রমাণ করলো দেশটির লড়াকু খেলোয়াড়রা। প্রায় হারতে বসা ফাইনাল ম্যাচটি অসাধারণ ক্রীড়া নৈপূণ্যে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে মাঠে নামে শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যার অবদান অনেক, তিনিই ফাইনালের খেলায় দলকে হতাশ করলেন। একে একে শ্রীলঙ্কা ৫টি উইকেট হারালো। টেলিভিশনের পর্দায় স্ক্রলে তখন পাকিস্তানের পক্ষেই দর্শক জরিপের রায় ভেসে বেড়াচ্ছিল। শ্রীলঙ্কা পারবে না। এমনই ধারণা সবার। অথচ সেই শ্রীলঙ্কা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। যদিও দর্শক জরিপে তখনও রায় বেশি দেখা যাচ্ছিল পাকিস্তানের পক্ষেই।

ব্যাটিংয়ে নামলো পাকিস্তান। ক্রিকেটের টি-২০ ফরমেটে ১৭০ রান টপকে যাওয়া পাকিস্তানের কাছে কোনও ব্যাপারই না। ব্যাটিংয়ের শুরুটা সেভাবেই করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু শ্রীলঙ্কার টিম স্পিরিটের কাছে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত পারলো না। পরাজয়ের সম্ভাব্য খাদ থেকে উঠে এসে শ্রীলঙ্কাই জিতে নিলো এশিয়া কাপের এবারের শিরোপা। এবার নিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো এশিয়া কাপ জিতল শ্রীলঙ্কা।

এশিয়া কাপের এবারের আসরটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কায়। দেশটি অর্থনেতিক সংকটে বিপর্যস্ত। নিজেরাই ভালো ভাবে চলতে পারছে না। খাদ্যের অভাব রয়েছে। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে এতগুলো দলকে আতিথেয়তা দেওয়ার সামর্থ্য কোথায়? অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নিজের দেশের বদলে খেলতে হলো অন্য দেশে। টুর্নামেন্টের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানের কাছে হার। পরের ম্যাচ বাংলাদেশের সঙ্গে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গেও পারবে না শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের সাথে হার মানেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। কিন্তু সহজেই বিদায় বলতে আসেনি শ্রীলঙ্কা। লড়াই করত এসেছে। সে কারণে অসাধারণ খেলোয়াড়ি বুদ্ধিমত্তা ও টিম স্পিরিটের শক্তিতে বাংলাদেশকে পরাস্ত করে ফাইনালের পথে এগিয়ে যেতে থাকলো শ্রীলঙ্কা এবং শেষ পর্যন্ত ফাইনালেও জয় পেলো।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন এবারের এশিয়া কাপে অর্থনৈতিকভাবে দুঃসময় অতিক্রম করা দুটি দেশ অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। শ্রীলঙ্কার কথাই যদি ধরি, অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া দেশটির খেলাধুলায়ও তো অস্থির পরিবেশ থাকার কথা। নিজের দেশে যে টুর্নামেন্টটি হবে বলে প্রায় সব কিছুই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল সেই টুর্নামেন্ট চলে গেলো মরুর দেশে। বিরাট এক হতাশা গ্রাস করার কথা শ্রীলঙ্কার, খেলোয়াড়দের মধ্যে। কিন্তু তারা ছিল খেলোয়াড়ি মনোভাবে অবিচল, দ্বিধাহীন। জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের সম্মান রক্ষাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সে কারণে টুর্নামেন্টের শুরুতে একটু হোঁচট খেলেও দলীয় শক্তিতে পরক্ষণেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দলীয় শক্তির কারণেই আবারও জিতে নিয়েছে এশিয়া কাপের শিরোপা।

আফগানিস্তানও বলতে গেলে অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত একটি দেশ। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রিকেট ততটা আগ্রহের বিষয় নয়। অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের মতো আর্থিক সুবিধাও তারা পান না। অথচ ক্রিকেটের জন্য তাদের আত্মনিবেদন অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য তো বটেই। এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলাটি যারা টিভি পর্দায় দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন টিম হিসেবে শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা কতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল। একক পারফরমেন্স নয় দলীয় পারফরমেন্সের প্রতিই প্রতিটি খেলোয়াড়ের ঝোঁক ছিল বেশি। যে কোনও মূল্যে দলকে জেতাতে হবে। দল মানেই দেশ। দেশকে সম্মানিত করতে হবে– এমন দলীয় মনোভাবই শ্রীলঙ্কাকে এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ে মূল শক্তি সাহস ও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক কোথায়? এশিয়া কাপে খেলতে যাওয়ার আগে কতই না আশা ভরসার কথা শোনা গিয়েছিল। এবার ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। শিরোপাও জিততে পারে এমন মন্তব্যও করেছিলেন অনেকে। অথচ সেই বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের একটি খেলাতেও জিততে পারেনি। অব্যাহত হারের হতাশা নিয়ে দেশে ফিরেছে। এজন্য বোর্ডের কাউকে অনুশোচনা অথবা প্রতিক্রিয়া দিতে দেখিনি। বরং বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি বলেছেন, এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স নিয়ে আমি মোটেই হতাশ নই। আমরা তো ওখানে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরকে প্রাকটিস ম্যাচ খেলতে পাঠিয়েছিলাম। কী হাস্যকর কথা। এশিয়া কাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি টুর্নামেন্টে শোচনীয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে এ কেমন যুক্তি দেখানো হলো? এশিয়া কাপ কি তাহলে বাংলাদেশের জন্য প্রাকটিস ম্যাচের অংশ? যদি তাই হয় তাহলেও প্রশ্ন আসে প্রাকটিস ম্যাচেও শোচনীয় হারের কারণ কী? এর ব্যাখ্যা কী?

এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার দিন ভিআইপি দর্শক সারিতে দেখা গেলো আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে। টিভি পর্দায় পাপন সাহেবকে বার-বার দেখানো হচ্ছিলো। তাকে যতবারই টিভি পর্দায় দেখলাম ততবারই একই প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। প্রশ্নটি হলো– এই যে তিনি খাদের কিনারে নেমে পড়া শ্রীলঙ্কা দলকে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিততে দেখলেন এর থেকে তিনি কি কোনও শিক্ষা অথবা বার্তা খুঁজে নিয়েছেন? যদি না নিয়ে থাকেন তাহলে তাকে একটু সহযোগিতা করি। শ্রীলঙ্কার ছেলেদের খেলা দেখে মাননীয় ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির কি একবারও প্রশ্নটা মাথায় আসেনি– শ্রীলঙ্কা পারলে বাংলাদেশ কেন পারে না? এর দায় কার? খেলোয়াড়দের নাকি বোর্ডেরও দায়-দায়িত্ব আছে?

প্রশ্নটা কঠিন না। তবে কেউ যদি কঠিন ভেবে এড়িয়ে যেতে চান তাহলেও বলার কিছু নাই। তবে এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার উত্তোরণ বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, আমরা এশিয়া কাপকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেব কি নেব না? কারণ আমরা তো টুর্নামেন্টটিকে ‘প্র্যাকটিস ম্যাচ’ হিসেবে ধরে নিয়েছি। কী হাস্যকর। ভাবতেই নিজেকে, নিজেদেরকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ক্রিকেট আর কতদিন এভাবে আমাদের অপরাধী বানিয়ে রাখবে? কতদিন...

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো।  

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ