X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ রাসেল: স্তব্ধ গোলাপের জল আনন্দ

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪৪আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪৪

বাঙালির জীবনে উপকথা, গল্প, প্রবাদ-প্রবচন জুড়ে আছে বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের জীবন আখ্যান। দংশিত স্বামীকে সমাজ, সংস্কৃতি প্রত্যাখ্যান করলেও একক বেহুলা তাকে বয়ে বেড়িয়েছেন, জীবনের পুনঃস্বাদ জুগিয়েছেন। বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আখ্যানও তাই। ভুল ও ভোগে ভরা নব্য খরুচে সংস্কৃতির চোরা ফাঁদ এড়িয়ে সঞ্চয়, সমৃদ্ধির পথে সমগ্র বাংলাকে এককভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। এসবের মাঝেও পারিবারিক এক অসীম বেদনা তাকে সব সময় ঘিরে রাখে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিয়তি তার সর্বস্ব স্বজন কেড়ে নেয়। জণ্ডিস আক্রান্ত না হলে হয়ত নবান্নের কৃষকের হাসি, ছোট্ট গোলাপ শেখ রাসেল বেঁচে যেতে পারতেন। কারণ বড় বোন শেখ হাসিনার সাথে তার দেশের বাইরে যাবার কথা ছিল। যদিও এও সত্য, সময়টা অন্ধকার থেকে আরও গভীর অন্ধকারের পথে হাঁটতে পারতো। কারণ আবেগের জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর শেখ হাসিনাকেও আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তারই ধারাবাহিক পরিণতি একালের নৈতিক স্খলন, লোভ, প্রতারণা। বিস্ময়কর বিষয়, এত এত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানবাধিকার সংগঠন কেউ শিশু শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘টু’ শব্দ করেননি। এসব আসলে ক্ষমতার সঙ্গে নৈতিকতা, সততার চোখ বদলে যাওয়ার ফল। যার কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে একজন শিশুকে এত নারকীয়ভাবে হত্যা করা হলো তা নিয়েও কোথাও কোনও প্রতিবাদ সাড়া শব্দ হলো না।

নিরীক্ষার চোখে দেখলে, শেখ রাসেলকে হত্যার পরও যখন কারও কিছু হলো না মূলত তখন থেকেই দেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যা একধরনের নীরব বৈধতা পেয়ে যায়। সমাজবিজ্ঞান ও সাইকোলজি নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা কেস স্ট্যাডির বিষয়টি গুরুত্ব দেন। সেই বিবেচনায় শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ডের পূর্ব মুহূর্ত কত গভীর আতঙ্ক-আর্তনাদের ও অসহায়ত্ব সম্পন্ন ছিল তাও অনুভব, উপস্থান জরুরি। মায়ের কাছে যাবো এই বলার পর বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বজনদের লাশ মাড়িয়ে মায়ের পাশে গুলি করে হত্যা, এধরনের মানসিক ও শারীরিক সময় নিশ্চয়ই কোনও বাবা-মা তার সন্তানকে উপলব্ধি করতে দিতে চাইবেন না। কিন্তু এমনটাই ঘটেছিল শিশু রাসেলের সাথে।

ছোট্ট রাসেলসহ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে অনেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বিবেচনায় সীমাবদ্ধ রাখতে চান। এই জায়গায় দ্বিমত প্রদর্শন করতে হবে। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য হত্যাকাণ্ডগুলো ব্যক্তি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থেকেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বেলায় তা একেবারে শিশু রাসেল ও বঙ্গবন্ধুর অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ পর্যন্ত গেছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক দর্শন বাস্তবায়নে তাঁর পরিবারের একেবারে শেষ সদস্যটি পর্যন্ত যেন অবশিষ্ট না থাকে সেই পরিকল্পনা প্রদর্শিত হয়েছে। মূলত এটি ছিল পরাজিত ও শোষক শক্তির প্রতিশোধ।

পৌষ ফাগুনের হাসি শেখ রাসেলে শৈশবেই সকলকে নিয়ে থাকার একধরনের আগ্রহ দেখা গেছে। গাঁয়ে ফিরলে অন্য খেলার সাথীদের জন্য খেলনা, জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করা, তাদের সাথে বন্দুক দিয়ে খেলা, সেই খেলায় নেতৃত্ব দেওয়া ছিল নিত্য কাজ। মাছ ধরে আবার সেই মাছ ছেড়ে দেওয়া। সাইকেল চালাতে গিয়ে সাইকেলের চাকায় পা ঢুকে যাওয়া। তারপরও আবার ক’দিন বাদে অদম্য দুরন্তপনা। এসবই ছিল নিত্য সঙ্গী।

ওই ছোট্ট বয়সেও প্রবল দায়িত্ববোধ ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘুম-জাগরণে যুদ্ধ বিমানের শব্দ যেন বিলম্ব না করে সেজন্য তাঁর কানে তুলো গুঁজে দেওয়া। ভাবীদের আশপাশ ঘেঁসে থাকা, কারও কিছু লাগবে কিনা সেটা তদারকি করতেন। সেনা অফিসার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে আজ রাসেল শুধু এবং শুধুই ছবি, স্মৃতির আগুনে বোনের চোখে মৃত্যুহীন প্রাণ।

বাংলা ও বাঙালির জীবনে সকলের কনিষ্ঠ সন্তান বড় আদরের হয়। সাইকোলজিক্যালি বড়রা নিজেদের হারানো শৈশব সর্বকনিষ্ঠজনের মাঝে খোঁজেন। তাই শেখ রাসেলের ক্ষেত্রে ছিল এত আনন্দ-আয়োজন। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বজনদের পরম প্রাণভোমরা। একারণে এখনও বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ চালাতে গিয়ে তার প্রসঙ্গ এলে চোখ ভিজিয়ে ফেলেন, অনিরুদ্ধ আবেগে কণ্ঠ জড়িয়ে ফেলেন। দিক্বিদিক জুড়ে ভাইয়ের অনুভূতির অনুরণন খোঁজে ফিরেন।

কে জানে ছোট্ট রাসেলের জন্মের পর নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে প্রথমবারের শরীর মুছে দেওয়া কিংবা প্রথম ছুঁয়ে দেখার যে অনুভূতি তাই হয়তো শেখ হাসিনার জল-জ্যোৎস্নার কারণ। স্তব্ধ গোলাপ শেখ রাসেল এই জল আনন্দেই বেঁচে রইবেন।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ