X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এই যোগ্যতায় আমরা বিশ্বকাপে যাচ্ছি?

রেজানুর রহমান
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৫আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৫

খেলায় লড়াই করে হেরে যাওয়া আর অসহায় আত্মসমর্পণের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। খেলায় হার-জিত দুটোই থাকে। যে দল ভালো খেলে সে দলই জিতে। আবার এমনও হয় ভালো দলও সব খেলায় জিতে না। তবে ভালো দল কখনও খেলার আগেই হারার মানসিকতা দেখায় না। খেলার মাঠে অসহায় আত্মসমর্পণ করে না। লড়াই করে হারে। লড়াই করে হারার মধ্যেও একটা কৃতিত্ব আছে। কিন্তু অসহায় আত্মসমর্পণের মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই; বরং লজ্জা আছে।

আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখে কথাগুলো মনে পড়লো। অনেকেই বলেন, ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। হ্যাঁ, এটা ঠিক ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তাই বলে কোন দলে পারফরম্যান্সের একটা ধারাবাহিকতা থাকবে না তা কি করে হয়? এশিয়া কাপে খেলতে গেলো বাংলাদেশ। ক্রিকেটে এশিয়ার ৬ দেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান আর নেপাল। প্রথম পর্বে বাংলাদেশ শ্রীলংকার সঙ্গে প্রথম খেলায় শোচনীয়ভাবে হারলো। বাংলাদেশের খেলা দেখে মনেই হয়নি ক্রিকেটে দেশটির একটি ঐতিহ্য আছে। যে দেশের মানুষের ক্রিকেটের সঙ্গে গভীর সখ্য আছে। ক্রিকেট হাসলেই দেশটির মানুষেরাও হাসে। রাজনৈতিক দলাদলির কারণে দেশটিতে বিভক্তি আছে। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এক অর্থে এটাই ক্রিকেটের শক্তি। কিন্তু বাংলাদেশ কি এই শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে? এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স দেখে তা মনে হচ্ছে না। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে শ্রীলংকার সঙ্গে অসহায় আত্মসমর্পণের পর আফগানিস্তানের সঙ্গে দুর্দান্ত এক লড়াইয়ে অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ।

ফলে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে টিকে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সুপার ফোরের প্রথম খেলায় আবার সেই অসহায় আত্মসমর্পণ। পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারলো না। শ্রীলংকার সঙ্গে যেভাবে হেরেছিল তার চেয়েও লজ্জাজনক হার হলো পাকিস্তানের সঙ্গে। আফগানিস্তানের সঙ্গে আগের খেলায় বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম বলেই আউট। তার দেখাদেখি আরও তিন ব্যাটার মাঠে নামার আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেন মাত্র। মাঝখানে পরাজয়ের স্রোত ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তারাও শেষ পর্যন্ত পরাজয় ঠেকাতে পারলেন না। বাংলাদেশের শেষ উইকেটটি নেওয়ার পর পাকিস্তানি বোলারের ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখে তিনি অবাক। ভাবটা এমন– ওরা খেলতে না জানলে আমি কী করবো। ‘আজব’ তো...।

হ্যাঁ, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ‘আজব’ শব্দটি বেশ মানানসই। আমরা কথায় কথায় বলি আজব দুনিয়া। বাংলাদেশের ক্রিকেট দুনিয়ার সঙ্গে ‘আজব’ শব্দের একটি মিল রয়েছে। সকালের সূর্য দেখে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের সকালটা দেখে সহজেই আন্দাজ করা যায় না বিকালটা কেমন হবে। এশিয়া কাপের কথাই ধরুন। গ্রুপ পর্বের প্রথম খেলায় শ্রীলংকার সঙ্গে এমনভাবে হারলো, মনেই হয়নি বাংলাদেশ নিয়মিত ক্রিকেট খেলে। পরের খেলায় আফগানিস্তানকে এমনভাবে পর্যুদস্ত করলো, তখন মনে হলো হ্যাঁ বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলে। আবার পরের খেলায় অর্থাৎ সুপার ফোরে পাকিস্তানের সঙ্গে দাঁড়াতেই পারলো না। পাকিস্তানের সঙ্গে লজ্জাজনক হারের পর মনে হয়েছিল মান-সম্মান রক্ষার জন্য হলেও পরের খেলায় শ্রীলংকাকে নিশ্চয়ই পরাস্ত করবে বাংলাদেশ। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। আবারও শ্রীলংকার মুখোমুখি দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ। আবারও সেই লজ্জাজনক হার। চিরাচরিত ব্যাটিং ব্যর্থতা। লজ্জায় মাথা নুয়ে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশের লড়াকু ক্রিকেটাররা। লজ্জায় ডুবলো গোটা বাংলাদেশের মানুষ।

এখন প্রশ্ন হলো– কেন ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই অবদমন? আর মাত্র ১ মাস পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসবে ভারতে। এশিয়া কাপের লড়াইকে দুর্দান্ত একটা প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ হারের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে। এশিয়া কাপেই যদি বাংলাদেশের এমন করুণ অবস্থা হয় তাহলে বিশ্বকাপে তো বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারবে না। এজন্য দায়ী কে? যারা মাঠে খেলে তারা, নাকি যারা মাঠে তাদের খেলায় তারা?

‘আজব’ শব্দটি আবার উল্লেখ করতে চাই। নাজমুল হাসান পাপন আমাদের ক্রিকেট পরিবারের প্রধান ব্যক্তি। কয়েক দিন আগে একটি টেলিভিশনে তার বক্তব্য শুনে শুধু অবাক নয়, একটু হোঁচটও খেয়েছি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এশিয়া কাপের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে লিটন দাস যোগ দিতে পারেননি। ভাগ্যগুণে গ্রুপ পর্ব ডিঙ্গিয়ে সুপার ফোরে জায়গা পায় বাংলাদেশ। ততদিনে লিটন দাস সুস্থ হয়েছেন। তাকে পাকিস্তানে পাঠানো হয় দলের সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য। নাজমুল হাসান পাপনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, লিটন পাকিস্তানে যাচ্ছে নাকি? আমি তো জানি না। বোর্ড সভাপতির এই মন্তব্যই প্রমাণ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে হাঁটছে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে ঘিরে অন্যান্য দেশ যেভাবে নির্ভার, বাংলাদেশ সেখানে পথের দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আরেকটি ভিডিও সাক্ষাৎকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে তিনি বলেছেন, আমি যখন বোর্ডের দায়িত্ব নেই তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বেশ শক্তিশালী ছিল। মাশরাফি, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, সাকিব এদের বলা হতো পঞ্চপাণ্ডব। ওরাই তো আমাদের মূল ভরসা ছিল...।

ওই সাক্ষাৎকারে বোর্ড সভাপতি আরও অনেক কথা বলেছেন। সে সব কথা উল্লেখ করতে চাই না। শুধু পঞ্চ পাণ্ডবের কথা বলি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাকে মাঠের ক্রিকেটে আর না আনাই ভালো। কিন্তু তামিম, রিয়াদকে কেন আমরা অগ্রাহ্য করছি? বিশ্ব আসরে অভিজ্ঞতার অনেক মূল্য আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট বলে কথা। সেখানে অভিজ্ঞতাকেও মূল্যায়ন করা জরুরি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এখন তরুণদেরই গুরুত্ব বেশি। তাই বলে প্রবীণরা অর্থাৎ সিনিয়ররা অচ্ছ্যুতদের তালিকায় ঠাঁই পাবে? যে তরুণ ক্রিকেটার শূন্য রান করে মাঠ ছাড়ে তার জায়গায় একজন প্রবীণ ক্রিকেটারকে রাখলে খুব কি ক্ষতি হবে দলের? আমরা বোর্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দেখা যাক ক্রিকেট বোর্ড শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয়। ক্রিকেটের জয় হোক।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাঁচতে হলে জানতে হবে
বাঁচতে হলে জানতে হবে
টিফিনের টাকা জমিয়ে দুই হাজার পথচারীকে স্যালাইন-পানি দিলেন ৫ শিক্ষার্থী
টিফিনের টাকা জমিয়ে দুই হাজার পথচারীকে স্যালাইন-পানি দিলেন ৫ শিক্ষার্থী
রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না: সালেহউদ্দিন আহমেদ
রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না: সালেহউদ্দিন আহমেদ
ক্লপের সঙ্গে টাচলাইনে মতবিরোধ নিয়ে সালাহ, ‘কথা বললে আগুন লাগবে’
ক্লপের সঙ্গে টাচলাইনে মতবিরোধ নিয়ে সালাহ, ‘কথা বললে আগুন লাগবে’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ