X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাপাতি রাজত্ব

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২৮ এপ্রিল ২০১৬, ১২:২৩আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৪:৩০

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে খুবই নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সবাই বলছেন লোকটা কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সংস্কৃতিমনা মানুষ, গান বাজনা আর শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বাগমারা উপজেলায় তার গ্রামের বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য একটা গানের স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের ঘাঁটি। আহলে হাদিসওয়ালাদেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে রাজশাহীতে। তদন্ত চলছে। কে হত্যার সঙ্গে জড়িত তা সঠিক করে এখনও বলা যাচ্ছে না। অবশ্য শিবিরের দু’কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসলামিক স্টেট বা আইএস হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সাইট ইন্টালিজেন্স গ্রুপের পক্ষ থেকে এ নিয়ে টুইট করা হয়েছে। অনেকে জানেন, সাইটের মালিক হচ্ছেন এক ইহুদি মহিলা। পূর্বে ইসরায়েলের গুপ্ত সংস্থা মোসাদের সঙ্গে কাজ করতেন। এখন এ ওয়েবসাইটটা পরিচালনা করেন। জাপানি নাগরিক ও ইটালির নাগরিক হত্যার পরও এ ওয়েবসাইট আইএস এর সম্পৃক্ততার কথা বলেছিল।
ইসলামিক স্টেট আল কায়দা থেকে জন্ম নেওয়া একটা সংগঠন। তাই প্রথমে বলা দরকার আইএস বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনের অংশ। ইরাক আর সিরিয়ার সমাজে এর শেকড় গভীরে প্রোথিত নয়। এর কোনও জাতীয় প্রকল্পও নেই। হামাস, হিজবুল্লাহ’র মতো ইসলামিক স্টেট শক্তিশালী কোনও সংগঠন নয়। সাদ্দামের কিছু সৈন্য ও উড়া উড়া কিছু লোক এসে সিরিয়া ও ইরাকের কিছু জায়গায় আপাতত নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। আইএস ক’দিন সফল হয়েছিল কারণ তখন অন্যরা ব্যর্থ হয়েছিল বলে। এখন আইএস -এর সেই সফলতা নেই। সংকুচিত হয়ে আসছে তার সব কিছুই।
আসলে আইএস হচ্ছে কিছু সংখ্যক উগ্র মুসলমানের কালেকটিভ ম্যাডনেস। আন্তর্জাতিক চক্রের হাতের পুতুল হিসেবে কাজ করছে। তারা নাকি বাংলাদেশে জামায়াতুল মুজাহিদীন এর মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে। আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমই এখন আনসার আল ইসলাম নাম ধারণ করেছে। এই সংগঠনই এখন আল-কায়েদার বাংলাদেশ শাখা বলে নিজেরা দাবি করেছে এবং ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার দায় স্বীকার করছে। সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে রাজধানীতে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যারও দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম। এ কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার টুইটার বার্তায় আনসার আল ইসলাম দাবি করেছে।

আরও পড়তে পারেন: আবারও আইএসকে আলোচনায় আনলেন বার্নিকাট
আপাতত দেখা যাচ্ছে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল-ইসলাম, আহলে হাদিস ও হিজবুত তাহরীর এই চারটিই হচ্ছে গুপ্ত ইসলামিক অ্যাকটিভিস্টদের সংগঠন। ইসলামিক স্টেট বলুন আর আল কায়দা বলুন ঘুরে ফিরে এরাই। তারাই এ কথা স্বীকার করেছে। এ সংগঠনগুলোর বহু নেতা-কর্মী জেলে আছে, অনেকের ফাঁসি হয়েছে- সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের হাতে এ সংগঠনগুলোর আকার-আকৃতি সব কিছুই আছে। এরা হিজবুল্লাহও নয়, হামাসও নয়। এদের সংগ্রাম এবং উদ্দেশ্যও এক রকম নয়। চাপাতি দিয়ে ভিন্নমতের অনুসারীদের কুপিয়ে হত্যা কোনও ইসলাম নয়, দেশপ্রেমও নয়। এখন সরকারও নির্লিপ্ত, জনগণও চুপ। তাই হয়তো চাপাতি হত্যা বেড়ে চলছে। প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে এসব সংগঠনগুলোর হিম্মতের পরীক্ষা হয়ে যাবে।
মাহমুদুর রহমান ও তার ‘আমার দেশ’ পত্রিকা একটা সুদূর প্রসারি ষড়যন্ত্র হিসেবে আস্তিক-নাস্তিক এ দু’ভাগে দেশকে ভাগ করে সমগ্র জাতিকে বিরাট এক আত্ম কলহে লিপ্ত করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেই আল্লামা আহাম্মদ শফিকে হেফাজতের ব্যানারে মাঠেও নামিয়েছিলেন। বিবাদের সূত্রপাত করেছিলেন সফলভাবে। তার পরিণতিতে আজকে এতো হত্যাকাণ্ড। একজন নেত্রী’র ওপর থেকে টেনে নিচে নামাতে ব্যর্থ হয়ে মাহমুদুর রহমান এ কাজটা করার চেষ্টা করেছিলেন। এটা ছিল জাতির সঙ্গে তার বড় মোনাফেকি। মীর জাফরের কু-কর্মের ফলে জাতি প্রায় দু’শত বছর পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ ছিল। মাহমুদুর রহমানের এ অসৎ কর্মের ফল জাতিকে কতদিন ভোগ করতে হয় কে জানে!

আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশের বহু মানুষ বিচার পায় না: প্রধানমন্ত্রী

জাতিকে সর্বস্তরে বিভক্ত করে ফেলেছে। বিএনপির দেশকে বিভক্ত করেছিল ভারতকে নিয়ে। তারা ক্ষমতার থাকলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকবে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে বিকিয়ে দেবে। এটা রাজনৈতিক ইস্যু। আর মাহমুদুর রহমান জাতিকে বিভক্ত করতে চাইলেন আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু নিয়ে, যে ইস্যু জাতির গভীরে পৌঁছে  দিতে পারলে শত বছরের একটা কলহের গোড়া পত্তন করা যেত। কারণ এটা ধর্মীয় ইস্যু। এটা শিয়া-সুন্নির ইস্যুর মতো।

বাংলাদেশের প্রগতিশীল মহলের কাছে আবেদন জানাবো তারা যেন ধর্ম নিয়ে কোনও বাড়াবাড়িতে জড়িত না হন। যার সম্পর্কে গভীরভাবে জানি না তার সম্পর্কে কথা না বলাই উত্তম। গত শতাব্দীর ষাট দশকে ইন্দোনেশিয়ায় ৭ লাখ মানুষ হত্যা করেছিল নাহাদাতুল ওলামা। তারা প্রত্যেকে কলেমা পড়ে  মুসলমান, এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু নাহাদাতুল ওলামা তাদের কলেমা পাঠকে বিশ্বাস করেনি। সে রকম একটা পরিস্থতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বাংলাদেশে।

গণজাগরণ মঞ্চকে অবদমন করতে গিয়ে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে নাস্তিক আখ্যা দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান গংরা। তারাও কলেমা পড়ে প্রমাণ করা কঠিন হচ্ছে যে সব ব্লগার নাস্তিক না, তারা অনেকে মাহমুদুরদের চেয়েও বড় মুসলমান। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে জেল থেকে মাহমুদুরের মতো ভ্রষ্ট লোকের কলকাঠি নাড়ানোও বিচিত্র না।

আরও পড়তে পারেন: মাহফিল স্থগিত করলেন চরমোনাই পীর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কথা লিখতে গিয়ে গাফফার চৌধুরী সাহেব লিখেছেন, ‘উত্তাল রাজশাহী’। উত্তাল কই? আমিতো উত্তাল দেখিনা।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা নাকি ৩৫ হাজার আর শিক্ষকের সংখ্যা নাকি ১২শত। প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন খুব বেশি হলে দু’ হাজার শিক্ষার্থী আর সবমিলিয়ে শিক্ষক হবেন হয়তো দুইশত। কী হয়েছে ছাত্র সমাজের! কী হয়েছে শিক্ষক মহাশয়দের! স্বার্থ ছাড়া কি কোনও কাজ করা যাবে না? সম্মিলিত স্বার্থকে কি স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়তো নিরব নিস্তব্ধ। অথচ তারেক জিয়ার জন্ম-বার্ষিকীতে ১৭ জন শিক্ষক আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। আপনাদের জন্ম হয়েছিল কি তারেক বন্দনার জন্য? সহকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে কি আপনাদের কোনও দায়িত্ব নেই?

আসলে আমিই নির্বোধ। জাতি যে পর্যায়ে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে এখন জাতির পুনঃউত্থানের জন্য একজন আতাতুর্ক দরকার বা একজন শেখ মুজিব দরকার। প্রার্থনা করি আতাতুর্ক বা একজন মুজিবের আবির্ভাব হোক ।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও  কলাম লেখক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ