X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুতিনের কর্তৃত্ব কি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ জুন ২০২৩, ২০:১১আপডেট : ২৫ জুন ২০২৩, ২১:০১

টানা কয়েক মাস ধরে ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করে আসছিলেন। তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে আক্রমণ করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন।

এক ভিডিওতে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের সেনাদের মৃত্যুর জন্য মস্কোকে দায়ী করেছেন প্রিগোজিন। ভিডিওতে তার পেছনে নিহত সেনাদের মরদেহ স্তূপ করে রাখা ছিল। এক চিঠিতে তিনি শোইগুকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন ইউক্রেনের রক্তাক্ত রণক্ষেত্রে হাজির হওয়ার জন্য। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহরের যে রণক্ষেত্রে তার ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা লড়াই করে মরছে, সেটি পরিদর্শন করতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন।

প্রিগোজিন-শোইগু বিরোধ আসল বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু পুতিনের ব্যবস্থা–যা পশ্চিমা ধাঁচের সরকারের তুলনায় অনেকটা অটোমান রাজদরবারের মতো– সেখানে এই বিরোধ খুব গুরুত্ব পায়নি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চূড়ান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ক্রেমলিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেক গোষ্ঠীর বিরোধ নিরসন করেছেন।

এটি বিভাজন ও শাসনের পুরোনো কৌশল। অতীতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রিগোজিন নিজেকে অনুগত মিত্র হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাশকতার চেষ্টা। একটি ব্যাখ্যা অনুসারে, শোইগুর বিরুদ্ধে প্রিগোজিনের প্রকাশ্য বিরোধের জন্য ক্রেমলিনের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

শুক্র ও শনিবারের নাটকীয় ২৪ ঘণ্টা প্রমাণ করছে, ক্রেমলিনের সঙ্গে প্রিগোজিনের কোনও চুক্তি যদি হয়েও থাকে, তা আর বিদ্যমান নেই। প্রিগোজিন যা দাবি করেছিলেন তা হলো শোইগুর অপসারণ এবং পুরো জেনারেল স্টাফকে বাতিল করা। শনিবার রাতে প্রিগোজিন ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি রক্তপাত এড়াতে মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়া যোদ্ধাদের ঘাঁটিতে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে ওয়াগনারের একটি সাঁজোয়া কলাম ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ায় প্রবেশ করে। এ সময় তারা তেমন কোনও প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। রোস্তভ-অন-ডন নামের শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন তারা দখল করে। এরমধ্যে ছিল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক জেলা কমান্ডের সদর দফতর এবং ইউক্রেনে কথিত বিশেষ সামরিক অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম কেন্দ্র।

আতঙ্কিত রুশ জেনারেলরা প্রিগোজিনকে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। রাজধানী মস্কোর রাজপথে নামানো হয় সাঁজোয়া যান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় অভ্যন্তরীণ হামলার আশঙ্কায়। পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে, রাস্তা খনন করা হয়।

এই নাটকীয় পরিস্থিতি ১৯৯১ সালে কেজিবির কট্টরপন্থি অংশের ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই সময় তারা ভেঙে পড়া কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কয়েক মাস পর পতন হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। 

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আবারও হবে কিনা বলার মতো সময় এখনও আসেনি। প্রিগোজিন কোনও শান্তিপ্রিয় মানুষ নন। ইউক্রেনে রাশিয়া যাতে আরও কঠোর অভিযান পরিচালনা করে, তার পক্ষপাতী তিনি। শোইগুর বিরুদ্ধে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করার অভিযোগ তুলেছেন প্রিগোজিন। গত বছর ইউক্রেনে রুশ সেনাদের পিছু হটা নিয়েও ক্ষুব্ধ তিনি।

গত দুই দিনের নাটকীয়তার পর পরিণতি যা-ই হোক না কেন, ২০০০ সালের পর থেকে পুতিনকে সবচেয়ে দুর্বল দেখাচ্ছে। ইউক্রেনে আক্রমণের সিদ্ধান্ত তার রাজনৈতিক জীবনের বড় কৌশলগত ভুল হিসেবে হাজির হচ্ছে। হয়তো একদিন এই ভুলের কারণেই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।

শনিবার সকালে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন পুতিন। প্রিগোজিনের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তিনি এই ভাষণ দেন। তিনি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন এবং মস্কোতে সন্ত্রাস দমন ব্যবস্থা সক্রিয় করেন।

এই বিদ্রোহের অবসান খুব দ্রুত হলেও আগামী কয়েক মাস এর প্রভাব থাকবে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় রসদ জোগাবে এবং নেতৃত্ব দিতে পুতিনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

এর সব কিছুই ইউক্রেনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ সম্ভাবনা তৈরি করছে। ওয়াগনার যোদ্ধারা লুহানস্ক ও ডনেস্ক অঞ্চলে মোতায়েন ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় এদের অনেকেই রাশিয়ায় ফিরে এসেছে। এই সুযোগে বাখমুতের কয়েকটি সড়ক ইউক্রেনীয় সেনারা দখল করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা কিছু এলাকাও ইউক্রেন পুনরুদ্ধার করেছে শনিবার।

রাশিয়ার নিয়মিত সেনাবাহিনীর তুলনায় ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা অনেক বেশি শৃঙ্খলাপরায়ণ ও দক্ষ বলে যুদ্ধে প্রতীয়মান হয়েছে। আপাতত রণক্ষেত্র থেকে তারা অদৃশ্য হয়ে গেছে।

জুন মাসে ইউক্রেন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করে পশ্চিমা অস্ত্র ও ট্যাংক নিয়ে। তাদের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা। তাদের অগ্রগতি ধীরগতিতে হচ্ছে। রুশ সেনারা মাইন পুঁতে রেখেছে, ট্যাংকবিধ্বংসী পরিখা খনন করেছে এবং ইউক্রেনের অগ্রগতি ঠেকাতে বিমান ও কামান হামলা চালাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করতে শুরু করেছিলেন যে যুদ্ধ হয়তো অচলাবস্থার দিকে গড়াচ্ছে, হয়তো ৬০০ মাইল রণক্ষেত্র ডি ফ্যাক্টো সীমান্ত হিসেবে থেকে যাবে।

প্রিগোজিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিদ্রোহ এই হিসাব পাল্টে দিয়েছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে খারিজ করে দেওয়া হবে বোকামি। কিন্তু ইউক্রেনের পক্ষে রুশ প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে গেছে। রণক্ষেত্রে রুশ সেনাদের মনোবল যদি ভেঙে যায়, তারা যদি লড়াইয়ে অনাগ্রহী হয়, তাহলে ইউক্রেন দ্রুত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

পুরো ইউক্রেনকে দখল করে রাশিয়ার সঙ্গে পুনরায় একীভূত করার পুতিনের স্বপ্ন বাস্তব হয়নি। এটি একজন স্বৈরাচারের কল্পনা হিসেবে হাজির হয়েছে: দুর্বল গোয়েন্দা, অকল্পনীয় চিন্তা, করোনার সময় চরম বিচ্ছিন্ন থাকা। রাশিয়ার এখন প্রায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে, কিয়েভের বিরুদ্ধে তাদের জয় পাওয়া অনেক দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে।

/এএ/এমওএফ/
টাইমলাইন: ওয়াগনারের বিদ্রোহ
২৫ জুন ২০২৩, ২০:১১
পুতিনের কর্তৃত্ব কি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে?
সম্পর্কিত
ইসরায়েলি পণ্যবহনকারী যেকোনও দেশের জাহাজে হামলা হবে: হুথিদের হুমকি
কেন কাশ্মীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না মোদির বিজেপি?
গাজায় যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করবে ইসরায়েল: গ্যালান্ট
সর্বশেষ খবর
যতক্ষণ দেশবাসী পাশে আছে, কাউকে পরোয়া করি না: শেখ হাসিনা
যতক্ষণ দেশবাসী পাশে আছে, কাউকে পরোয়া করি না: শেখ হাসিনা
সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু, ২৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু, ২৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
ডলারের দাম বৃদ্ধির সুফল মিলবে তো?
ডলারের দাম বৃদ্ধির সুফল মিলবে তো?
বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু
বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন