X
রবিবার, ১২ মে ২০২৪
২৯ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদয়হীনরা মুসলিম নয়

লতিফুল ইসলাম শিবলী
০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৯:২৯আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৯:৩২

লতিফুল ইসলাম শিবলী হাজিদের মক্কা আর মদিনার বাইরে অন্য কোনও শহরে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল যেভাবেই হোক তায়েফ শহরে ঢুকবো। সৌদি কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে তায়েফে ঢোকাটা ছিল দারুণ এক অ্যাডভেঞ্চার। ছোটবেলা থেকেই মহানবী (সা.) জীবনের তায়েফ পর্বটি আমাকে বিশেষভাবে আলোড়িত করতো। আমি সারাজীবন কল্পনায় দেখার চেষ্টা করেছি কেমন ছিল সেদিনের সেই তায়েফ শহরটি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেছেন। তায়েফের সেইসব জায়গায় গিয়ে আমি আজন্ম দেখা সেই কল্পনাগুলো বাস্তবে খোঁজার চেষ্টা করেছি, অনুভব করার চেষ্টা করেছি সেই সব দৃশ্যকল্প যা আমাকে বহুবার ক্ষতবিক্ষত আর রক্তাক্ত করেছে । মহানবী (সা.) তায়েফবাসীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন শান্তির বাণী, বিনিময়ে তায়েফবাসী তার ওপরে চালিয়েছিল অত্যাচার। কেমন ছিল সেটা!
তায়েফবাসীরা একদল দুষ্টু ছেলেকে লেলিয়ে দিয়েছিল তাঁর পেছনে, তারা পাগল পাগল বলে নবী (সা.) পাথর ছুড়তে থাকলো... আমি তায়েফের হাইওয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেছি- তপ্ত দুপুর, তায়েফের রাজপথ, নবীজী (সা.) পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হতে হতে ছুটছেন, পেছন পেছন ধর ধর পাগল পাগল বলে ধাওয়া করছে দুষ্টু ছেলের দল; উড়ছে পাথর, ছুটছেন তিনি, রক্তে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে উনার পোশাক—সারা গা, ক্লান্ত অবসন্ন তিনি শেষে আশ্রয় নিলেন তায়েফের এক খেজুর বাগানে। জুতা খুলতে গিয়ে দেখেন গা গড়িয়ে পড়া রক্তে জমাট বেঁধে আছে নিজের পায়ের জুতা। এমন বিষাদময় করুণ মুহূর্তে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতালা আজাবের ফেরেশতা পাঠিয়ে হুকুম দিয়েছেন—পুরো তায়েফ শহরটিকে পিরিচের মতো উল্টিয়ে দিতে। তখন কী করলেন প্রিয় নবী (সা.)? আসমানের দিকে দুই হাত প্রসারিত করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলেন – ক্ষমা ক্ষমা ক্ষমা...ইয়া আল্লাহ তাদের অপরাধ তুমি ক্ষমা করে দাও...।
পথে কাঁটা বিছানো সেই বুড়ির সঙ্গে কী ব্যবহার করেছিলেন তিনি? আর সারা মক্কা জীবনে কত অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, সেই মক্কায় যখন বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করলেন কী ব্যবহারটা করেছিলেন সেই হৃদয়হীন মক্কাবাসীদের সঙ্গে? হ্যাঁ সেটা ছিল ভালোবাসা, ইসলামের বিজয়ের মূল শক্তিই ছিল- ভালোবাসা।
সেই ভালোবাসা আর ক্ষমা যেখানে নেই, সেখানে অবশ্যই ইসলাম নেই। এই সত্যটা খুব ভালোমতো জানে ইসলামের শত্রুরা। তারা ইসলামের লেবাসে এমন এক দানব সৃষ্টি করেছে যার নাম আইএস, এরা ইসলামের নামে এমন সব কাজ করছে যার সঙ্গে ইসলামের নবী (সা.) শিখিয়ে দেওয়া ভালোবাসা আর ক্ষমার সেই মহান শিক্ষার বিন্দুমাত্র নেই। জঘন্য নিষ্ঠুরতা আর কদর্যতা দেখিয়ে ওরা যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় অবশ্যই সেটা শয়তানের রাজ্য। আল্লাহ বলেছেন ‘নিরীহ মানুষকে যে হত্যা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলো (৫:৩২)।’ সিরিয়া, ইরাক, ফ্লোরিডার অরলান্ডো, ব্রাসেলস, প্যারিস, ইস্তাম্বুল, মিউনিখ, আর ঢাকার হলি আর্টিজানে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে যারা ইসলাম কায়েমের কথা বলে তারা আসলে ইসলামের শত্রু, অবশ্যই তারা মুসলিম নয়।

আইএস-এর কথিত খলিফা বাগদাদী মোসাদের এজেন্ট, এটা এখন সারা পৃথিবীর সবাই জানে। শুধু জানে না অপরিণত সদ্য কৈশোর পেরোনো কিছু বিপথগামী তরুণ। ইসলামের মহান ভালোবাসার বিপরীতে মুসলিম নামধারীদের হাত দিয়ে যতবেশি ঘৃণা আর নিষ্ঠুরতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যাবে, ততো বেশি বন্ধ করা যাবে ইসলাম নামক শান্তির গতিকে।

কমিউনিজমের পতনের পর পুঁজিবাদীদের একক বিশ্বব্যবস্থায় এখন ইসলাম একমাত্র প্রতিপক্ষ আদর্শবাদ হিসেবে হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। পুঁজিবাদী ভোগে হতাশ বিষণ্ন পশ্চিমা নাগরিকরা ইসলামের ত্যাগবাদী নিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থার প্রতি আগ্রহটাকে ভালো চোখে দেখছে না। আদর্শ হিসেবে পুঁজিবাদকে টিকে থাকতে হলে ইসলামকে মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে। এই মোকাবিলাটা যুদ্ধের ময়দানে হওয়ার মতো অবস্থায় মুসলিমরা নেই। হাজারও দল-মত বিভেদ তাদেরকে দুর্বল করে রেখেছে। যদিও পুঁজিবাদীরা ‘ওয়ার অন টেরর’ নাম দিয়ে যুদ্ধটা শুরুই করে দিয়েছে। গ্লোবাল পুঁজিবাদ এখন সারা দুনিয়ার সমস্ত যুদ্ধ ফ্যাসাদ মুসলিম অধ্যুষিত ভূমিগুলিতে লাগিয়ে রেখেছে। এইসব ফ্যাসাদ পুঁজিবাদকে আপাতত সুবিধা দিলেও সেই সুবিধা আর খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। কারণ বিশ্ব পুঁজিবাদ এখন তার চূড়ান্ত সংকটকাল অতিক্রম করছে। আদর্শবাদ হিসেবে ইসলামের শক্তি সম্পর্কে মুসলিমদের চাইতেও তাদের প্রতিপক্ষরা অনেক ভালো বুঝে, তাই এই আদর্শবাদকে যত বেশি কলঙ্কিত করা যাবে তত বেশিদিন পুঁজিবাদ তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে পারবে। জঙ্গিবাদ তথা আইএস তাদের সেই প্রজেক্ট যা দিয়ে তারা ইসলামি আদর্শবাদকে কলুষিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

গত বছর এফবিআই এর ‘স্ট্রিং অপারেশন’ নামে একটা জঙ্গি বানানোর প্রজেক্ট ফাঁস হয়ে গেছে। যেটা প্রকাশ করেছে মার্কিন স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারসেপ্ট’। সেখানে অডিও ভিডিও প্রমাণসহ প্রকাশ পেয়েছে কীভাবে ধর্মীয় বিধিনিষেধ না মানা মুসলিম তরুণদেরকে টার্গেট করে রিক্রুট করা হয়, এফবিআই-এর প্রশিক্ষিত আলেম তাদেরকে মনগড়া এক ইসলাম বুঝায়, তারপর তাদেরকে দেখানো হয় কীভাবে পাশ্চাত্য বিশ্ব মুসলিমদের প্রতি অবিচার করছে, তার ভেতরে তৈরি করা হয় প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা। তাকে ট্রেনিং অস্ত্রসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে আক্রমণের উপযোগী করা হয়। তারপর মিডিয়া আলোড়ন তোলার জন্য স্থান কাল পাত্র বুঝে ওদের দ্বারা জঘন্য সব ঘটনা ঘটানো হয়। পুরা প্লটটা নিজেদের হাতে থাকায়, কাউকে ধরা হয়, কাউকে হত্যা করা হয়, কাউকে লুকিয়ে রাখা হয় নেক্সট টার্গেটের জন্য। এমন এক উদাহরণ ছিল বাংলাদেশি ২১ বছর বয়সী ছাত্র নাফিস।

আল কায়েদা বানিয়ে, যাকে দিয়ে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়ানোর প্লট করা হয়েছিল। এফবিআই-এর এই সাজানো নাটকটা পরে ফাঁস হয়ে যায়।

গত দেড় দশক ধরে পৃথিবীব্যাপী ইসলাম যেভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, সেই জনপ্রিয়তাকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য এই আইএস নামক দানব তৈরি করে ইসলামের শত্রুরা আপাতত নিজেদেরকে সফল ভাবতেই পারে। কিন্তু মহা সত্য হলো- ঘৃণা প্রতিহিংসা নিষ্ঠুরতা আর মিথ্যার বিপরীতে নবী (সা.) এর শেখানো ক্ষমা ভালোবাসার আর সত্যের জয় হবে, এটাই পৃথিবীর ইতিহাস।

লেখক: গীতিকবি, কলামিস্ট

আরও খবর: অভ্যুত্থানচেষ্টা থেকে জঙ্গিনেতা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাসের হার কত?
এসএসসি ২০২৪পাসের হার কত?
ইন্দোনেশিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত
ইন্দোনেশিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত
অস্ত্র মামলায়  ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জাকির খানের জামিন বহাল
অস্ত্র মামলায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জাকির খানের জামিন বহাল
খুব কষ্ট হচ্ছে মামনি: পূজা চেরী
মা দিবসখুব কষ্ট হচ্ছে মামনি: পূজা চেরী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ