X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহাদাত দম্পতি বেকসুর, কসুর তবে কার!

উদিসা ইসলাম
০৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:০৩আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৩৫

উদিসা ইসলাম বহুদিন ধরেই আলাপের কেন্দ্রে আছেন ক্রিকেটার শাহাদাত দম্পতি। না, ক্রিকেটে বড় কোনও অর্জন দিয়ে নয়। তার বাসায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে আদালতে বিচারপ্রার্থী ছিলেন। একদিকে জাতীয় ক্রিকেটারের ইমেজ আরেকদিকে ন্যয়বিচার। মাঝখানে নিম্নবিত্তের প্রায় পরিচয়হীন শিশু। যে কিনা খাদ্য সংস্থানে বাসাবাড়িতে কাজ করতে এসেছে সেই বয়সে যে বয়সে আমরা আমাদের মধ্য বা উচ্চবিত্তের ‘শিশুদের জন্য হ্যাঁ’ বলো কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুর মানবিক দিকগুলো বিকাশের গল্পে বিশাল অংকের টাকা খরচ করে। সেই হ্যাপি। যাকে পাওয়া গেল আহত অবস্থায়। চোখে কালসিঁটে। ভুলে গেছি এরই মধ্যে। অবশেষে জানা গেল শাহাদাতের বাসার সেই গৃহকর্মী হ্যাপি নির্যাতনের সাথে শাহাদাত দম্পতির কোনও হাত ছিল না। অতএব বেকসুর খালাস। তবে কসুর কার?
গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কালশী এলাকা থেকে মারাত্মক আহত অবস্থায় মাহফুজা আক্তার হ্যাপী (১১) নামের এক শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর জানা যায়, শিশুটি ক্রিকেটার শাহাদাতের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো। বিষয়টি জানাজানি হতেই বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান শাহাদাত ও তার স্ত্রী। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই খন্দকার মোজাম্মেল হক নামে এক সাংবাদিক বাদী হয়ে শাহাদাত ও তার স্ত্রী নিত্যকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তী শাহাদাত বিচারের মুখোমুখি হন বটে কিন্তু আইনি লড়াই শেষে তিনি জয়ী হন। তাতে আপত্তির কিছু নেই। মহামান্য আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে নিশ্চিত হয়েছেন ক্রিকেটার শাহাদাত খেলতে জানেন, পেটাতে জানেন না। কিন্তু প্রশ্নটি ভিন্ন জায়গায়...
শাহাদাত দম্পতির বাসার এই কাজের সহযোগিতাকারী শিশুটিতো আহত ছিল, সেটা সত্য। তাকে আহত করেছিল কে বা কারা? যারা তাকে আহত করেছিলেন তারা কোথায়? যদি শাহাদাত দম্পতি বেকসুর হয়ে থাকেন তবে কসুরদারদের খুঁজে না পেয়ে এদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তদন্ত করা কর্মকর্তার সাজা কী হবে? তদন্তে তিনি কেন আসল দোষীকে না খুঁজে চার্জশিট দিলেন। আর সেই চার্জশিটে কী এমন ছিল সেখানে শাহাদাত দম্পতির নামে অভিযোগ গঠন হয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ নেওয়া শুরু হলো? বিস্তারিত রায়ে নিশ্চয় সেইসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে বলে আশা রাখছি।

এতগুলো প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন করে কোনও বিত্তবান সাজার মুখোমুখি হয়েছেন সেই নজির নেই বলে দাবি করছেন খোদ মানবাধিকারকর্মীরা। অথচ প্রতিবছর কী পরিমাণ গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছেন সে সংখ্যা ভয়াবহ। বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্ট্যাডিজের (বিলস) তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে গত পাঁচ বছরে ১৮২ জন নির্যাতিত গৃহকর্মীর মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪৩ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে মোট ৭৮ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্ট্যাডিজ (বিলস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহশ্রমিকদের কারোরই নিয়োগ চুক্তি নেই। তাদের গড় মজুরি ৫০৯ দশমিক ৬ টাকা। এরমধ্যে নিয়মিত মজুরি পায় ৬০ শতাংশ এবং অনিয়মিত মজুরি পায় ৪০ শতাংশ। এত অল্প মজুরিতেও নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে তারা। বকাঝকার শিকার হয় ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজ করে ৬৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যৌননিপীড়ন সহ্য করে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মানসিক হতাশায় ভোগে ৬৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ গৃহশ্রমিক।

এই চিত্রটা এত ভয়াবহ যে একটা মামলারও যদি আমরা ফলাফল না আনতে পারি তাহলেতো মানুষ ভাববেই যে আমরা যে ধরনের অপরাধ করছি এটা আমরা পার পেয়ে যাব, আমাদের বিত্ত দিয়ে ঢেকে ফেলবো, এটাই ঘটছে এবং দিনে দিনে এই ভয়ানক নির্যাতনটা বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ, গৃহকর্মী নির্যাতনের প্রায় প্রতিটি ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (খ) ধারায় মামলা হয়। কিন্তু এ আইনটিতে আসামিদের সাজা দেওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। এ আইনে কেবল দাহ্য পদার্থ দ্বারা পুড়ে গেলে সাজার সুযোগ থাকে। কিন্তু বেত্রাঘাত, গরম খুন্তি, লোহা, ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, গরম পানি ঢেলে দেওয়া এ আইন দিয়ে প্রাপ্য বিচার সম্ভব হচ্ছে না।

এই আইন দিয়ে সম্ভব না হলে কী হবে? এগুলো ঘটছে প্রতিনিয়ত তা অস্বীকার করবেন কিভাবে? কেন ঘটছে? নিজের কাছে প্রশ্ন করুন। আপনার বাসায় যে গৃহকর্মী তিনি শ্রমিক হলেও তাদের শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হয় না। ফলে তারা শ্রমিকের কোনও অধিকারই ভোগ করতে পারেন না। তাদের কোনও কর্মঘণ্টা নেই। ছুটি নেই। ঘুমানোর জায়গা নেই। ঠিকমতো বেতন পান না। আপনার নিরাপত্তার কথা ভেবে অনায়াসে তাদের আটকে রেখে বাইরে যান। সব মিলিয়ে তাদের যে মানবেতর জীবন, সেটার পর আপনার আমার সেবা করে যাচ্ছে তারা সেটাই অনেক বড় পাওয়া।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলা ট্রিবিউন

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ