X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ আনন্দ কখনোই পুরনো হয় না

ফাহমিদা নবী
১৬ জুন ২০১৮, ১৭:১০আপডেট : ১৭ জুন ২০১৮, ১৩:২৬



ফাহমিদা নবী গতকাল শেষ রোজায় সারাদিন খুব গরম ছিল। কাজ গোছাতে হচ্ছিল। কারণ চাঁদ উঠলেই ঈদ! বাতাসে ছিল আগুনের আঁচ। ইফতারের আগমুহূর্তে আকাশ থেকে কেমন যেন আরামের সুবাতাস বইতে শুরু হলো। মনে হলো পৃথিবীর বুকে জান্নাতি বাতাস নেমে এসেছে। একমাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ আমাদের জন্য, আমাদের জীবনে রহমত, বরকত, ক্ষমা আর প্রশান্তি দান করেন। আরামের সেই বাতাস গায়ে মেখে আল্লাহর দরবারে সেই দোয়া চাই, যেন সবাই ভালো, সুস্থ থাকতে পারি।
আনন্দ কথাটা ভাবলেই, আনন্দে মন ভরে যায়। কত কী করতে ইচ্ছা করে। ঈদ মানেই সেই আনন্দ, যে আনন্দের বিশেষ কোনও নাম বা বিশেষণের প্রয়োজন নেই। ঈদ মানেই আনন্দ!
আজ ঈদ, সবার মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টেও যে মানুষটি আছে, তার মনেও আজ খুশির উচ্ছ্বাস। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।
আনন্দিত হই যখন দেখি, মা-বাবা-ভাই-বোন-ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজন, দূরে কাছে দেশে-বিদেশে যে যেখানে আছে সবাই ঈদের আনন্দে মুখর। সবার চোখেমুখে একধরনের মায়া। সবাই সবার দিকে খুশি মনে তাকাচ্ছে। সবার জন্য সবার ভীষণ আনন্দ কোনও ভেদাভেদ নেই।
এই সুখটুকু ভীষণ চোখের আরাম দেয়। মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে।
ইস এমনই যদি থাকতো সারাবছর, মাস, দিন, রাত!
কত ভালো হতো তাই না?
কোনও ঝগড়া বিবাদ নেই, রেষারেষি নেই, শুধুই দারুণ বোঝাপড়া। আমরা তো আসলে তাই চাই। চাই একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে। প্রতিদিনের চর্চাই তাই হওয়া চাই।
ঈদের ছুটির অপেক্ষার পালা শেষ করে কত ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে মানুষ বাড়ি যায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবে বলে। সেটা যে কতটা আনন্দের, ভাবতেই মন ভালো হয়ে যায়।
যেন আমি ঘুড়ি হয়ে যাই। তবে নাটাইয়ের সুতো হলো সেই টান, যে টানে মানুষ ঘরে ফেরে, স্বপ্ন দেখে, ভালোবাসতে পারে। সংগ্রাম করতে পারে, বাঁচতে শেখে।
চাঁদ দেখার পর, ঈদের বাকি কেনাকাটা, বিশেষ করে, চাঁদরাতে অনেক রাত পর্যন্ত দোকানে দোকানে ভিড়ে ঘোরাঘুরি, বিশেষ করে নতুন জুতো কেনার যে হিড়িক, আজও অন্যরকম আনন্দ দেয়।
মনে পড়ে, আমি আর সুমা তখন ছোট। আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম। আব্বা অনেক রাতে ফিরতেই তৈরি হয়ে যেতাম। তখন আম্মাও রান্না শেষ করে বসেছে মাত্র।

আব্বার কোলে আমি আর আম্মার কোলে সুমা রিক্সায় চেপে এলিফ্যান্ট রোডের জুতোর দোকানে জুতো কিনতাম। যদিও আমার জুতো কিনতে খুব বেগ পেতে হতো, কারণ আমার পায়ের মাপে জুতো কম পাওয়া যেতো। তারপরে সেই জুতো পাওয়ার পর সুখের সীমা থাকতো না। আহা কী দারুন দিনগুলো ছিল। সেই ছোটবেলা। পুরনো সেই ছোটবেলার ঈদ কেউ কি ভুলতে পেরেছে? দিন বদলেছে কিন্তু পুরনো ঈদের আবেদন আজো তেমনই রয়ে গেছে। কেউ সেই অভ্যস্ততা ভোলেনি, ভোলেনি ছোটবেলার ঈদ। একধরনের সুখ ভুলতে না পারাটা। সুখ মনে থাকে। দুঃখ ভুলতে চায় মানুষ। ঈদ হচ্ছে সেই প্রাণবন্ততা যা দুঃখ ভোলায়।
এ যুগের ছেলেমেয়েরাও আগের দিনের ঈদের সেই ঐতিহ্যকে পরিবারের নানী দাদীদের কাছ থেকে শুনে শুনে একই রকম ভাবে উৎযাপন করে। কিছু বিষয় কখনোই বদলায় না। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, রান্না বান্না করা, বাজার করা সব কিছুতেই আনন্দ আর আনন্দ। আনন্দে একাকার সবাই। আজকাল শহরের মানুষ ব্যস্ততায় অনেক কিছুই আগের মতো করে উঠতে পারে না, তবু চেষ্টা করে সেই ছোটবেলাকে ধরে রাখতে।

ঈদের দিন সকাল থেকে সে আনন্দ যেন আরও বেড়ে যায়। বাড়ির ছোট বড় সকলে মিলে দল বেধে ঈদের জামাতে যাওয়া, সেমাই খাওয়া, ঈদের সালামি, আরও কত কী!

সারাদিন মেহমান অতিথি নিয়ে ব্যস্ত থাকা, সব কিছুতেই আনন্দের যোগ।

আজকের যুগে সেই আনন্দগুলোর কিছু কিছু ভাগ হয়েছে। আগে যেমন ঘরের পাটায় বেটে মেন্দি দেওয়াটা দারুন ব্যাপার ছিল, এখন পার্লরে মেন্দি দেওয়ার চল এসে গেছে। ব্যস্ত জীবনের সহজ উপায়। আগে ক্যাসেট, সিডিতে নতুন গান শোনা হতো, এখন ইউটিউবে গান দেখা হয়, শোনা হয় কম। আগে হলে সিনেমা দেখতোই মানুষ। এখন অনেক চ্যানেল, হাতে রিমোট, কেউ সিনেমা, কেউ নাটক কেউবা গানের অনুষ্ঠানে চোখ রাখে। আগে ফেসবুক ছিল না, তাই সরাসরি দেখা হতো। আন্তরিকতা ছিল। এখন ফেসবুকে মানুষ অনেক বেশি সচল থাকে, আন্তরিকতার প্রলেপে ছবি আপলোড নির্ভরতায় আটকে গেছে। এটা সময়ের পরিবর্তন বা রূপান্তর দাবিও বলতে পারি। কেউ মেনে নিচ্ছে, কেউবা পুরনো চর্চায় অটল। তবু সবটাই ঈদের সরল আনন্দ।

আগের দিনে ঈদের মুহূর্তগুলো মনে আছে, কিন্তু এখনকার দিনের মতো প্রতি মুহূর্তের ছবি নেই, এই যা পার্থক্য। কিছু বিষয় মনেই এঁকে রাখা আছে যা ফেসবুকে নেই, যা এখন দূর্লভ। ছবি আর কিছু বিষয় হয়তো মনের গহিনে গভীরতায় নেই, কিন্তু ফেসবুকে আপলোড হয়।

হয়তো কিছুটা কৃত্রিমতা রয়েছে তবুও তা এক আনন্দ। অনেক কিছু বদলে গেলেও ঈদের আনন্দ আগের মতোই সুখের আর সরল উচ্ছ্বাসের। সেই উচ্ছ্বাস অনাবিল। এখনকার প্রযুক্তিতে সবাই সবাইকে খুঁজে পাই। দুরে থেকেও দুরে নয়। সেটা এক ধরনের আনন্দ। তাই প্রযুক্তিকে দূরের করা যাবে না। আর পথ হেঁটে কাছে রাখাটা নিজেস্ব উপলব্ধি।সেটাও করতে আলসেমি করা যাবে না। ভালোবাসাটা নিজের দায়িত্ব। দায়িত্ব প্রকৃতির মতো তা করতেই হবে।
সবার জন্য অসীম ভালোবাসা, ঈদের আনন্দ আরও প্রাণখোলা হোক, সুখে থাকুক সকল প্রাণ। এই শুভ কামনা। সকলকে জানাই ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
লেখক: সংগীতশিল্পী

 

/এমএনএইচ/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ