X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

লেখকের রয়্যালটি কোথায়?

ইকরাম কবীর
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:১৮আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:২০

ইকরাম কবীর বইমেলা শুরুর প্রাক্কালে পত্রিকায় একটি খবর পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। খবরে বলা হয়েছে, অমর একুশে বই মেলার পরিসর প্রতি বছরই বাড়ছে। জাতি হিসেবে এর চেয়ে আর বেশি কি পাওয়ার আছে? গর্ব হয় যখন উপলব্ধি করি বিশ্বের সবচেয়ে উৎসবমুখর বই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় আমাদের এই দেশে। মেলার সময়টিও খুব উপযুক্ত। যে মাসে মায়ের ভাষা বাঁচাতে আমাদেরই যুবকেরা জীবন দিয়েছিলেন।
আরও ভালো লাগে জেনে যে আমাদের বইমেলা শুধু ঢাকায় নয়–সারা দেশে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। সারা দেশে এ মেলা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে আমি নিজে অনেক লিখেছি। এখন মনে হচ্ছে আমার শ্রম কাজে লেগেছে। দেশের অনেক জেলায় এখন বই মেলার আয়োজন করা হয়। আগামীতে আরও ছড়িয়ে যাবে। এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আমাদের সারা দেশ হয়ে উঠবে এক প্রকাণ্ড বই মেলা।
আমি যে খবরটি পড়ে এ লেখা লিখতে বসেছি সেখানে বলা হচ্ছে প্রতি বছর মেলায় বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে, প্রকাশকের সংখ্যা বাড়ছে এবং বইও বিক্রি বাড়ছে। বই বিক্রি থেকে মুনাফা বাড়ছে। গেলো পাঁচ বছরে বই বিক্রি পাঁচগুণ বেড়েছে।  

বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালে নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৫৯টি, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৭০০টি’তে। ২০১৬ সালে মেলায় নতুন বই এসেছিল ৩ হাজার ৪৪৪টি, ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৬৪৬টি। এবং ২০১৮ সালে নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৯১টি।

বছরের পর বছর বই বিক্রিও বেড়েছে। বাংলা একাডেমির হিসাব মতে, ২০১৪ সালে ১৬ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। তারপর ২০১৫ সালে বিক্রি হয়েছিল ২১ কোটি টাকার বই। ২০১৬ সালে তা ৪২ কোটিতে চলে গিয়েছিল। তারপর আরও বেড়েছে–২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ও ২০১৮ সালে ৭১ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

অবাক করা ব্যাপার নয় কি?

সবাই বলে দেশের মানুষ নাকি বই পড়ে না। তাহলে বই বিক্রি বাড়ছে কেমন করে? এ কথা শুনে অনেকে বলেন, সবাই বই কেনেন কিন্তু পড়েন না। আচ্ছা তাই-ই সই। কিনছেন, সাজিয়ে রাখছেন। তবে কিনছেন তো।

বাংলা একাডেমির বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে যে অংশগ্রহণকারী প্রকাশকের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর ৫৫০টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে, যা গেলো মেলার চেয়ে ৪৫টি বেশি।

খুবই উৎসাহব্যঞ্জক একটি ব্যাপার।

তাহলে সবই বাড়ছে। নতুন বইয়ের সংখ্যা, তাদের বিক্রি ও প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা। এর চেয়ে ভালো খবর আর কি হতে পারে? সমাজে এর কী প্রভাব পড়তে পারে? এর ফলে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে সমাজে? আমাদের দেশ কেমন করে উপকৃত হতে পারে?

বেশি বিক্রির অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে সবাই হয়তো বেশি পড়ছেন। অথবা বেশি না পড়লেও বেশি কিনছেন। কেনাবেচা বাড়ছে। প্রকাশকরা বেশি আয় করছেন। লেখকরাও কি তবে আয় করছেন?

বেশ ক’জন পরিচিত মানুষ এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বললাম। পড়ুয়ারা কী করছেন? অনেকেই জানালেন যে বই হয়তো বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু তা পড়া হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা বুকশেলফে সাজিয়ে রাখার জন্য কেনা হচ্ছে। বই এখন দেখানোর জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রইংরুমে থাকবে,না হয় লিভিংরুমে থাকবে।

কয়েকজন ক্রেতার সাথেও কথা হলো। তারা জানালেন, তারা কেনেন কিন্তু পড়েন না। তারা শুধুই কেনেন।

তবে বই বিক্রি হচ্ছে শুনেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। যারা পড়েন না, কিনলে হয়তো তারা কোনও একদিন শেলফে সাজিয়ে রাখা বই পড়বেন।

তবে এ ব্যাপারটি আমায় মনোকষ্টে তাড়িত করে যখন দেখি অনেক প্রকাশক লেখকদের কোনও রয়্যালটি দেওয়ার কথা ভাবেন না। গেলো বছর বাংলা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, মেলায় যত বই প্রকাশিত হয়, তারমধ্যে ৭০ ভাগ লেখক তাদের পুস্তক প্রকাশের জন্য প্রকাশককে অর্থ প্রদান করেন। তারপরই এই বইগুলো প্রকাশ হয়।  

বাকি ৩০ ভাগ লেখকের প্রতি প্রকাশকদের আগ্রহ থাকে। তাদের কাছ থেকে প্রকাশকরা অর্থ নিয়ে বই প্রকাশ করেন না। তাদের বই বের হয়, তবে তারা কখনোই জানতে পারেন না তাদের কতগুলো বই বিক্রি হলো।  হাতেগোনা এ কারণেই কয়েকজন লেখক আগে থেকেই প্রকাশকদের কাছ থেকে আগাম অর্থ নিয়ে নেন, যেন পরে এ নিয়ে আর কোনও দুশ্চিন্তা করতে না হয়।

প্রকাশকদের অর্থ দিয়ে বই প্রকাশ করার এই রীতি এ কথাই মনে করিয়ে দেয় যে যিনিই অর্থ খরচ করতে পারবেন তিনিই লেখক হতে পারবেন। ওই বইগুলোর দিকে একটু তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায় আমাদের প্রকাশনা জগৎ কতটা দুর্বল। লেখককে যে দেশে সম্মানী দেওয়া হয় না এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়, সে দেশের সাহিত্য নিশ্চয়ই ভোগান্তিতে থাকে। আমাদেরও হয়েছে তেমন অবস্থা।

কোনও না কোনোভাবে এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। কোনও এক কর্তৃপক্ষ বহাল থাকা উচিত এর পরিবর্তনের জন্য। অন্যান্য সব খাতে তো তা-ই হচ্ছে। এ খাতে নয় কেন? আমাদের একাডেমি প্রকাশকদের জন্য ব্যবসার সুযোগ করে দেয় এই বই মেলায় মাধ্যমে। একই সঙ্গে একাডেমির উচিত প্রকাশকরা যেন লেখকদের প্রকৃত পাওনাটুকু দিয়ে দেন তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া। না হলে একাডেমি কেন?

সরকার দেশব্যাপী অনেক কাজ করেছেন। সব খাতেই করেছেন। এ খাত বাদ যাবে কেন? সব খাতেই তো রেগুলারিটি কর্তৃপক্ষ আছেন। প্রকাশনার ক্ষেত্রে নেই কেন? লেখকরা যেন তাঁদের প্রকৃত পাওনা বুঝে পান তা দেখার কেউ নেই কেন?

সব দেখে যা বোঝা যায় প্রকাশকরা অনেক আয় করছেন। তাদের লেখকরা কি তার কিছুটাও পাচ্ছেন?

লেখক: গল্পকার

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হাফ ভাড়া নিয়ে তর্ক, কলেজশিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ
হাফ ভাড়া নিয়ে তর্ক, কলেজশিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ
মঞ্চ থেকে হলো জুমার আজান,  নামাজের পর বক্তব্য দেবেন নেতারা
মঞ্চ থেকে হলো জুমার আজান, নামাজের পর বক্তব্য দেবেন নেতারা
ঢাকার ৩৩টি লেকের পাড়ে সবুজায়ন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে
ঢাকার ৩৩টি লেকের পাড়ে সবুজায়ন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে
ভারত-পাকিস্তান সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়তে চায় না যুক্তরাষ্ট্র
ভারত-পাকিস্তান সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়তে চায় না যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষসর্বাধিক