X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতি তো বিরূপ হবেই!

সারওয়ার-উল-ইসলাম
০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:১৫আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:১৭

সারওয়ার-উল-ইসলাম মানুষ যখন নিজের ক্ষতি নিজেই করে, তখন প্রকৃতির বিরূপ হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। না, এটা কোনও কবি বা মহাজ্ঞানীর কথা না, এটা বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি সচেতন মানুষেরই উপলব্ধি মাত্র।
আমরা সচেতন বা অসচেতনভাবে নিজেদের ক্ষতি করে চলেছি। জানি ধুলাবালুতে আমাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে। তারপরেও আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি।
সভা-সেমিনারে গিয়ে বক্তব্য রাখছি বা বক্তব্য শুনছি, তারপরেও সচেতন হচ্ছি না। আমরা পরিবেশ বিষয়ক নানা রকমের সম্মেলনে নিয়মিত অংশ নিচ্ছি দেশের বাইরে গিয়ে, তারপর দেশে ফিরে ভুলে যাচ্ছি, যা শিখে এলাম বিদেশিদের কাছ থেকে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে আমাদের দেশের পরিবেশবাদীরা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের লোকজন বিদেশে গিয়ে তাহলে কী শিখলো? বা তাদের কেনই বা বিদেশে পাঠানো হলো? তারা যদি দেশে এসে কার্যকর কোনও ভূমিকাই না রাখতে পারলেন।

আসলে সমস্যা কোথায়? আমাদের অজ্ঞানতা, নাকি দায়সারা দায়িত্বজ্ঞান। নাকি ‘নিজে বাঁচলেই বাপের নাম’ নীতি অনুসরণ?

‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’—এই নীতি কি আর এখনকার বাস্তবতায় খাটে? পরবর্তী প্রজন্ম কি নিজের অস্তিত্বের একটি অংশ নয়?

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের ভয়াবহতা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি চলছে। দেশ-বিদেশের নানা জরিপ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ আর সংবাদ পর্যালোচনা ছাপা হচ্ছে পত্রপত্রিকায়। টেলিভিশনের ‘টকশো’ গরম হয়ে যাচ্ছে আলোচকদের আলোচনায়। কিন্তু গলদ তো গোড়াতেই থেকে যাচ্ছে। কোনও সুষ্ঠু পদক্ষেপ বা পরিকল্পনা করে কি আমাদের কোনও কাজ হচ্ছে? সবাই কি পরিবেশ বিষয়ক আইন সম্পর্কে অবগত?

আমি কি জানি পরিবেশ আইন না মানলে আমার কী সাজা হবে? আমার দ্বারা পরিবেশ দূষিত হলে আমার নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আমার পরবর্তী প্রজন্মও মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত সেটা কি উপলব্ধিতে আছে আমার?

ব্যক্তি থেকেই তো রাষ্ট্র। রাষ্ট্র তার উন্নয়ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ভালো কথা, ঢাকায় মেট্রোরেল হলে যানজটের দুর্ভোগ থেকে জনগণ কিছুটা রেহাই পাবে, সেই লক্ষ্যে গত তিন বছর ধরে চলছে মিরপুরের প্রধান সড়ক ফার্মগেট থেকে আগারগাঁও হয়ে তালতলা-শেওড়াপাড়া-কাজিপাড়া হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পার হয়ে মিরপুর ১২ নম্বরে দিনরাত বিশাল কর্মযজ্ঞ। রাস্তার মাঝখানে খোঁড়াখুঁড়িতে মিরপুরবাসীর অবস্থা কতটা নাকাল, তা অন্য এলাকার মানুষ অনুধাবন করতে পারবেন না।

রাস্তার মাঝখানে খোঁড়াখুঁড়িতে আশেপাশের বাড়িঘরের মানুষ থেকে শুরু করে দু’পাশের ব্যবসায়ীদের জীবন ত্রাহি অবস্থা। ধুলাবালিতে ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে। দোকানগুলোতে বিশেষ করে ফার্নিচারের শোরুমগুলোতে ক্রেতা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। অনেকেই দোকানের স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন মুখে মাস্ক পরা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

তারপরেও মেনে নেওয়া যায়, দেশের তো উন্নয়ন হচ্ছে। একটু না হয় ঘরবাড়িতে ধুলা জমলোই। ব্যবসায়ীদের না হয় সামান্য ঘাটতি হলোই। শিক্ষার্থীরা না হয় মাস্ক পরেই গেলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেশের স্বার্থে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যাদের দিয়ে সরকার কাজ করাচ্ছে, তাদের কি দায়িত্বজ্ঞান নেই? কীভাবে কাজটা করলে ধুলাবালুর দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে জনগণ, সেই চিন্তা না করেই সরকারি কাজ জনগণ তাদের দুর্ভোগের কথা বলে বন্ধ করার সাহস পাবে না ভেবে দাপটের সঙ্গে করে চলেছে।

পরিবেশের কথা তোয়াক্কা না করেই রাস্তাঘাট কেটে মাটি যেখানে সেখানে ফেলে রেখে, বালু ফেলে রেখে কাজ শুরু করা হলো। গাড়ি সরু রাস্তায় চলাফেরা করতে পারছে কিনা সেদিকে খেয়াল নেই। মালপত্র ফেলে রাখার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল না করেই উন্নয়ন কাজ চলছে। ধুলাবালুতে শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, সেটা বড় কথা নয়, উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সেটা দেখানোই যেন মুখ্য বিষয়। কয়েকদিন পর পর ঘোষণা আসছে, অত সালের ওই মাস থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। আহ কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড! ধুলাবালুতে ফুসফুসের অবস্থা কাহিল, সেদিকে নজর নেই।

তবে অনেক দেরিতে হলেও আশার কথা হচ্ছে টনক নড়েছে। ঢাকার বাতাসের দূষণ নিয়ে সর্বত্রই যখন আলোচনা চলছে, তখনই মেট্রোরেল প্রকল্পের ঠিকাদারসহ আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ দূষণের দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উন্নয়নের কাজের সময় নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এ থেকে তো স্পষ্টই বোঝা যায়, সরকারের অগোচরেই উন্নয়ন কাজ দেখানোর একটি মহল ঢাকার বায়ুদূষণকে ত্বরান্বিত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে—এটা যখনই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল টের পেয়েছে, তখনই বিশেষ অভিযানে নেমেছে।

দেখা যাক, এ অভিযান কতদিন সক্রিয় থাকে। শুরুতেই বলেছি—মানুষ যখন নিজের ক্ষতি নিজেই করে, তখন প্রকৃতির বিরূপ হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

উন্নয়ন কাজ চাই আমরাও। উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে একটি জাতির সভ্যতার বিকাশ ঘটে। জনগণের জীবনমান উন্নত করার জন্য সরকার মেট্রোরেল করবে, ফ্লাইওভার করবে—সব ঠিক আছে। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে একটি প্রজন্মের ফুসফুসকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, সেদিকে যাদের খেয়াল রাখা উচিত, তাদের সচেতনতা আগে জরুরি। পরবর্তী প্রজন্ম তো আমাদেরই অস্তিত্বের একটি অংশ।

তাহলে কি বলতে পারি না—আমরা আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করছি। প্রকৃতির আর দোষ কী?

লেখক: ছড়াকার ও সাংবাদিক

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ