X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবিরাম মিথ্যাচার: চাই কঠোর আইন

প্রীতম দাস এবং ড. রায়হান জামিল
০৫ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:৪৬আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:৫৪

Pritom Das১.
বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মাস ডিসেম্বর।  এ মাসের দু’টি ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে এসে আমরা দেখছি, বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই বারবার মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, একাত্তরের শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। অতঃপর আরেক ডাকসাইটে বিএনপি নেতা, দলটির স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বললেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তান সরকারের বেতন-ভাতা খেয়ে নির্বোধের মতো মরেছেন।
যারা নিতান্তই স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভুগছেন, তারা বাদে বাকি সবাই মনে করতে পারবেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার হাত ধরেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতার ভাগীদার হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটির পেছনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো নেতাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ইতিহাসে পাতা উল্টে আরও আগে চলে গেলে বিএনপি নামক দলটির জন্মপ্রক্রিয়াও আমরা স্মরণ করতে পারবো। দলটির স্থায়ী কমিটির আর এক প্রতিপত্তিশালী সদস্য মওদুদ আহমদের বইপত্র থেকেই আমরা জানতে পারি, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে এবং ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে জিয়াউর রহমান ‘সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধী’ শক্তিসমূহের সাথে ঐক্য করেছিলেন [১]। কাজেই, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে খালেদা জিয়া এবং গয়েশ্বর রায়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যে আমরা অবাক হওয়ার মতো কিছু পাই না।
যা আমাদের বিস্মিত করে তা হলো, এত কিছুর পরেও, বাংলাদেশের ইতিহাসের মৌলিক স্তম্ভগুলোকে বারবার অবমাননা করা সত্ত্বেও কেবল রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে এসব ক্ষমার অযোগ্য অপরাধকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বিভিন্ন মহলের অনীহা।
ঠিক এই কারণেই মুক্তিযুদ্ধের এই পৌনঃপুনিক অবমাননা প্রতিরোধ করতে কার্যকর এবং কঠোর একটি আইন প্রণয়ন করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
২.
খালেদা জিয়া এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যা বলেছেন, তাকে কোনও বিচ্ছিন্ন বক্তব্য মনে করলে ভুল হবে। বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে, এটি তারই একটি অংশ।

বঙ্গবন্ধু ভালো করে ইংরেজি বলতে পারতেন না। এই জন্য তিনি ভুল করে তিন লক্ষের জায়গায় তিন মিলিয়ন বলে ফেলেছিলেন- এরকম একটি প্রচারণা আমরা সবসময়ই শুনে এসেছি। বিবিসির বাংলা বিভাগের সাবেক ডেপুটি চিফ সিরাজুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানেও একই রকম কথা আছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার বহু আগেই বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তিরিশ লক্ষ বাঙালি একাত্তরের নৃশংস গণহত্যায় নিহত হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ২০, ২১, ২২ ও ২৩ তারিখের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় বারবার এ খবর এসেছে। সোভিয়ের ইউনিয়নের  সংবাদপত্র প্রাভদা বাহাত্তরের ৩ জানুয়ারিতে একথা বলেছে। পরে বাংলাদেশ অবজার্ভার, মর্নিং নিউজ ও দৈনিক আজাদে ৫ জানুয়ারি, এবং দৈনিক বাংলাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে আসার আগেই ৬ ও ৯ জানুয়ারিতে একই খবর প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেছেন ১০ জানুয়ারি। এসব খবর যখন পত্রিকায় এসেছে, তখন নিজের বন্দিশালার বাইরে কী ঘটছে সেসব জানার কোনও উপায় বঙ্গবন্ধুর ছিল না। কাজেই তিন লক্ষের সঙ্গে তিন মিলিয়নকে গুলিয়ে ফেলার এসব হাস্যকর কাহিনী সত্যি হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

এবং তার বহু আগেই, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ জুন, ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, দশ লক্ষ বাঙালি সেই সময়ই নিহত হয়েছেন [২]। তাহলে দেখা গেল, তিন লক্ষকে ভুল করে তিন মিলিয়ন বানিয়ে ফেলার যুক্তি কোনোভাবেই ধোপে টিকছে না।

৩০ লাখ মানুষ আসলেই শহীদ হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা সেই সময়ের জনসংখ্যার যেসব পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, সেগুলোকে বিবেচনা করতে পারি। ১৯৬৯ সালের জুন মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ৬৯৮ লক্ষ। ওই সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিবেচনা করলে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হওয়া উচিৎ ৮০১ লক্ষ। কিন্তু ১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা পাওয়া যায় ৭৬৪ লক্ষ, অর্থাৎ অনুমিত জনসংখ্যার চেয়ে ৩৭ লক্ষ কম [৩]। অতএব, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং স্বাধীনতার পরে অন্যান্য কারণে মৃতদের সংখ্যা আমলে নিয়ে ১৯৭১ সালের গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা হিসাবে তিরিশ লক্ষ সংখ্যাটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত।  

পৃথিবীর সকল গণহত্যার ক্ষেত্রেই নিহতের সংখ্যা কত তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। স্মরণীয় গণহত্যাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা আমরা মনে করতে পারি। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিহতদের পরিসংখ্যান নাৎসিরা যেমন যত্ন করে রক্ষা করেছিল, তেমনটা অন্য কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। তার পরেও এত বছর পরে এসে নতুন গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, আমরা এতদিন যা জেনে এসেছি, প্রকৃতপক্ষে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি [৪]। ক্যাম্বোডিয়ার খেমার রুজ আমলের গণহত্যা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে, গণহত্যার বহু অপ্রকাশিত তথ্য বেরিয়ে আসছে। সেই জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব গণহত্যাকে অবমাননা করে কেউ কথা বলে না, যেমন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন।

বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে বিতর্ক আছে, এ কথা অবশ্য এক দিক দিয়ে মিথ্যা নয়। সেই বিতর্ক তারাই করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল, যারা একাত্তরের গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছে, তারা এই বিতর্ক করে। পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকরা, যারা গণহত্যায় প্রত্যক্ষ্য ভাবে অংশ নিয়েছে, তারা করে। পাকিস্তানের সেই সমস্ত মানুষ, যারা এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে কেবল ঘৃণাই ধারণ করে, তারা এই বিতর্ক করে। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা করে।

তাহলে খালেদা জিয়া কি স্বীকার করে নিচ্ছেন, তিনিও ওই সমস্ত গোষ্ঠীরই একজন?

৩.
Raihan Jamilমুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগের মুহূর্তে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী আল বদর বাহিনী। এর আগে ২৫ মার্চ থেকে শুরু গণহত্যার পুরো সময়টা জুড়েই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা অব্যাহত রেখেছিল তারা। এর উদ্দেশ্য একটিই, জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশে যেন কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। এত বছর পরে এসে ডিসেম্বর মাসেই গয়েশ্বর রায় বললেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের টাকা খেয়েছেন এবং ‘নির্বোধের মতো’ মরেছেন। গয়েশ্বর আরও বলেছেন, বুদ্ধিজীবীরা কেন দেশ ছেড়ে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেননি।
এটিও ধারাবাহিক ইতিহাস বিকৃতিরই একটি অংশ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলে আসছে অনেকদিন ধরেই। যাই হোক, দুই একটি উদাহরণ দেখলেই এসব মিথ্যাচারের স্বরূপটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীকে ১৫ ডিসেম্বর ধরে নিয়ে যায় আল বদর বাহিনী, মাওলানা মান্নানের নেতৃত্বে। আলীম চৌধুরীর পল্টনের বাসার নিচতলাতেই মাওলানা মান্নানের বাসা ছিল, কাজেই সেখানে পাকিস্তানি সেনাসদস্য এবং তাদের সহযোগীদের আনাগোনা হতো প্রতিনিয়ত। এসব কিছুর পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আলীম চৌধুরী গোপনে মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের সাহায্য করতেন, চিকিৎসা করতেন, সময়ে সময়ে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন [৫]। এগুলোও তো মুক্তিযুদ্ধেরই অংশ। সবাই নিশ্চয়ই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করবেন না; চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকৌশলীসহ প্রত্যেকেই তার নিজের জায়গা থেকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
শহীদ আলতাফ মাহমুদ, ২ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সর্বস্ব দিয়ে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য গান রেকর্ড করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেগুলো সীমান্তের ওপারে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন। সবশেষে, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাংক নিজের বাগানে পুঁতে রাখেন তিনি। যার খোঁজ পেয়েই তাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। ধরা পড়ার পরে, চরমতম নির্যাতনের মুখেও তিনি কোনও কথা বলেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তথ্য পাকিস্তানিদের জানাননি [৬]।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সঙ্গে ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ ছিল। দেশের ভেতরে যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে তিনি কলকাতায় পাঠিয়ে দিতেন। গণহত্যার প্রমাণ স্বরূপ আর্চার কে ব্লাডের বিখ্যাত তারবার্তাটিও তিনি তাজউদ্দীন আহমদের কাছে পাঠাবার চেষ্টা করেছিলে। সর্বোচ্চ ত্যাগের নমুনা হিসাবে নিজের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে দেন [৭]।

এরকম অসংখ্য প্রমাণ দেওয়া সম্ভব। বুদ্ধিজীবীরা দেশের ভেতরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। শহীদ ডক্টর আমিনুদ্দীন চাঁদা সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থক সহযোগিতা করতেন। ২৫ মার্চে নিহত ও নিখোঁজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের স্বজনদের যথাসম্ভব সাহায্য করেছেন অধ্যাপক গিয়াসুদ্দীন। সিলেট মেডিক্যাল কলেজে আহত বাঙালিদের চিকিৎসা করতেন ডাক্তার শামসুদ্দীন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এত বছর পরে তাদের সেই আত্মত্যাগকে ‘পাকিস্তান সরকারের টাকা খাওয়া’ বলে অপমান করলেন গয়েশ্বর রায়। এবং আমরা অক্ষম লজ্জায় তাকিয়ে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছি।

৪.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনী গোটা ইউরোপে নৃশংস গণহত্যা চালায়। আজ জার্মান পেনাল কোডের সেকশন ১৩০ এর ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ বলছে, নাৎসি বাহিনী পরিচালিত এই গণহত্যাকে কেউ অস্বীকার বা সামান্যীকরণ করার চেষ্টা করলে, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের অবমাননা করার চেষ্টা করলে কিংবা নাৎসি বাহিনীর কাজকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে [৮]।

চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গসহ ইউরোপের অনেকগুলো দেশে অনুরূপ আইন বলবত রয়েছে।  

বাংলাদেশেও গণহত্যা অস্বীকার ও সামান্যীকরণ বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা বিরোধী একটি আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ আইনে নিচের কাজগুলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে -

 ১) ১৯৭১ সালের গণহত্যায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য, প্রকাশনা, কার্টুন, ছবি ইত্যাদি;

২) বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের অবদানকে ছোট করার চেষ্টা;

২) শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও গণহত্যায় নিহত সকল শহীদসহ ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননাকর যেকোনও বক্তব্য বা কাজ;

৩) পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী শান্তি কমিটি রাজাকার, আল বদর, আলশামস বাহিনীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে যে গণহত্যা, নির্যাতন, লুটপাট চলেছে তাকে বৈধতা দেওয়ার যেকোনো চেষ্টা;

৪) মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যেকোনও অবমাননাকর মন্তব্য, প্রকাশনা, কার্টুন, ছবি ইত্যাদি।

আমরা আইনজ্ঞ নই। তবে সাধারণ দৃষ্টিতে যদি দেখা হয়, বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে এই কাজগুলো আমাদেরকে আহত করে, ক্ষুব্ধ করে।

অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ঘটনা এই যে, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তিমূলক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ তারা নেবেন। কমিশনের সুপারিশ পেলে আইন মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। যথাসম্ভব দ্রুত এই আইন প্রণয়ন করা হবেই বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

৬.

বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল, এবং দলটির সমর্থকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে মৌলিক স্তম্ভের ওপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, সেই মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা যে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়মিত অভ্যাস, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও গণহত্যাকারীরা যাদের রাজনৈতিক সহচর, তাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা কতটুকু? ইতিহাস বিকৃতির অপসংস্কৃতি কী আমরা মেনে নেবো? নাকি মুক্তিযুদ্ধের অবমাননার এই চর্চাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবো? 
বাংলাদেশ আজ এই প্রশ্নের সামনেই দাঁড়িয়ে।

তথ্যসূত্র:

[১] আহমদ, মওদুদ, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০০, ঢাকা, পৃ. ৭১

[২] রিমি, সিমিন হোসেন, তাজউদ্দীন আহমদ - ইতিহাসের পাতা থেকে, প্রতিভাস, ২০০০, ঢাকা, পৃ. ১৪২

[৩] রহমান, ড. মো. মাহবুবর, বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭-৭১, সময়, ২০০৩, ঢাকা, পৃ. ৩১০

[৪] Day, Matthew, Nazis may have killed up to 20m, claims 'shocking' new Holocaust study, The Telegraph, March 4, 2013

[৫] ইসলাম, রফিকুল, বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা, বাংলা একাডেমি, ১৯৭৩, পৃ. ১৬৬-১৭১

[৬] পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৪-৯৬

[৭] পূর্বোক্ত, পৃ. ১০৩-১০৬

[৮] German Criminal Code, Section 103 (3)

লেখক:
১. প্রীতম দাস, ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
২. ড. রায়হান জামিল, সহকারী অধ্যাপক, বিজনেস কমিউনিকেশন, কলেজ অফ বিজনেস সায়েন্স, জায়েদ ইউনিভার্সিটি, আবুধাবি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ