X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রূপান্তরের দ্বন্দ্ব এবং অদ্ভুত আঁধার এক!

রুহুল রবিন খান  
০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৩২আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:১৩

রুহুল রবিন খান গত ২৮ নভেম্বর ২০২১ তারিখে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম ঋতু। নজরুল ইসলাম ঋতু একজন রূপান্তরিত মানুষ। তিনি নজরুল ইসলাম থেকে ঋতু হয়েছেন। তাই তার এই বিজয় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, বিদ্যমান দ্বান্দ্বিক লিঙ্গ কাঠামোর বাইরে এসে নতুনত্ব বা বাস্তবতাকে গ্রহণের এই উদারতা প্রকৃত উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে লৈঙ্গিক পরিচয়ের চেয়ে মানবিকতা বড়, বহুর পরে আরও একবার তা প্রমাণিত হলো।

নজরুল ইসলাম ঋতুর জয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো (বিশেষ করে বাংলা গণমাধ্যমগুলো) খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে, যা খুব ইতিবাচক। প্রায় সব গণমাধ্যমেই নজরুল ইসলাম ঋতুকে ‘থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমি লক্ষ করেছি, এই গণমাধ্যমগুলোই সংবাদ পাঠক তাসনুভা আনান শিশিরকে নিয়ে লেখার সময় ‘ট্রান্সজেন্ডার’ লিখে থাকে, আবার কোথাও কোথাও কাউকে ‘হিজড়া’ হিসেবে উল্লেখ করে। এই ভিন্নতাকে আমি ‘জেন্ডার বা লৈঙ্গিক (সামাজিক বিনির্মাণ অর্থে)’ ডিসকোর্স থেকে দেখার চেষ্টা করছি।

পেশাগত কারণে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আমাকে কাজ করতে হয়। আমার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে, আমাকে সেক্স বা জৈবিক লিঙ্গ এবং জেন্ডার বা সামাজিক লিঙ্গ নিয়ে কথা বলতে হয়। খুবই হতাশা নিয়ে বলছি, দেশের পঁচানব্বই শতাংশের (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা) বেশি মানুষের সেক্স এবং জেন্ডার বিষয়ে ধারণা খুবই অস্পষ্ট বা নাই বললেই চলে। এখানে গণমাধ্যমের দায়িত্ব সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে এই লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে সহনশীলতা বৃদ্ধি করে সামাজিক সাম্যতা সৃষ্টি করা। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত- সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য-জ্ঞান না থাকার কারণে গণমাধ্যমগুলোর প্রচেষ্টা অর্থবহ হয়ে ওঠে না, এক্ষেত্রে জেন্ডার বা লিঙ্গ (সামাজিক) বিষয়ে আরও বিশদ আলোচনা সময়ের দাবি।

একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তার কোনও জেন্ডার বা লৈঙ্গিক পরিচিতি থাকে না, যা থাকে তা হলো জৈবিক (লিঙ্গ) পরিচিতি বা সেক্স। পরিচয় বহনকারী বাহ্যিক অঙ্গগুলো দেখে তার জৈবিক লিঙ্গ নির্ধারিত হয় যা কেবল এবং শুধু নারী, পুরুষ এবং আন্তলিঙ্গ বা ইন্টারসেক্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেক্স বা জৈবিক লিঙ্গ আজকের আলোচনার বিষয় নয়, পরে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা যাবে।

জৈবিক লিঙ্গ নির্ধারণের পরে শিশুটিকে প্রচলিত লিঙ্গ নির্দেশক দৈনন্দিন চর্চার মাধ্যমে পালন-পালন করা হয়। এই লিঙ্গ নির্দেশক দৈনন্দিন চর্চার মধ্য দিয়েই শিশুটির ওপর সামাজিক লিঙ্গ বা জেন্ডার আরোপিত হয়। ছেলে শিশুর জন্য পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে কাজ, কাজের ধরন ও উপকরণ যেমন নির্দিষ্টতা থাকে, ঠিক তেমনি থাকে মেয়ে শিশুটির জন্য। এই চর্চা কাঠামোর ব্যতিক্রম হলে যে শোরগোল সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী লিঙ্গের আবর্তন। অর্থাৎ নজরুল ইসলাম ঋতুর মতো অনেকেরই জন্ম হয়ে স্রেফ ছেলে শিশুর শারীরিক কাঠামো নিয়ে, সোজা কথায় ছেলে হিসেবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর বা বৈষয়িক বোধগম্যকালীন সময়ে বা বয়ঃসন্ধিকালের আশপাশের সময়ে যখন সেক্স বা জৈবিক লিঙ্গের পূর্ণতাদানকারী অঙ্গসমূহের পরিবর্তন লক্ষণীয়, তখন কেউ কেউ অনুভব করেন তার বাহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে মানসিক চাহিদা বা প্রত্যাশার কোনও মিল নেই। একজন ছেলে বা মেয়ে তার শরীরে বিপরীত সত্তার উপস্থিতি অনুভব করছেন। এই অনুভূতি একসময় প্রকাশ্যে চলে আসে, কখনও আংশিক কখনও সম্পূর্ণ বা একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে। এটাই রূপান্তরের দ্বন্দ্ব। যখন কেউ তার সামাজিকভাবে অর্পিত লিঙ্গ কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে বিপরীত প্রান্তে গিয়ে নিজেকে প্রকাশ করছে, তখন তাকে বলা হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী (লিঙ্গান্তর) লিঙ্গ। এটা নারী বা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে, যাদের ট্রান্সউইমেন বা ‘রূপান্তরকামী নারী’ এবং ট্রান্সম্যান বা ‘রূপান্তরকামী পুরুষ’ বলা হচ্ছে। যেখানে নজরুল ইসলাম থেকে ঋতু বা অন্য কোনও পরিবর্তিত ও নতুন নামের পুনর্জন্ম হয়।

ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গান্তরিত থেকে রূপান্তরকামী শব্দটি আমার বিশেষ পছন্দের। কারণ ‘রূপান্তরকামী’ শব্দটিতে একটি চলমান প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। আসলে এই রূপান্তরের কোনও পরিসীমা নেই, এটি সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। যিনি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান, কেবল তিনিই এই রূপান্তরের পরিসীমাটি জানেন, কখনও ব্যক্তি নিজেও জানেন না কতটুকুতে তিনি শেষ করবেন। কোনও নারী বা পুরুষ তার বাহ্যিক অবয়ব ও পরিধেয় পরিবর্তন না করে কেবল মানসিক বা আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে রূপান্তরিত বলতে পারেন আবার কেউ পরিধেয় পরিবর্তন করে, কেউ অস্ত্রপচারের মাধ্যমে নিজের অবয়ব পরিবর্তন করে রূপান্তরিত হতে পারেন। এটা ব্যক্তির একান্ত বিষয়- তিনি কীভাবে নিজেকে দেখতে চান! সুতরাং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি মানুষ নিজেকে কীভাবে দেখতে চান বা দেখবেন তা তার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেই সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সরকার ‘নং সকম/কর্ম-১শা/হিজড়া-১৫/২০১৩-৪০ সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ (Hijra) হিসেবে চিহ্নিত করিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিল’ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ ঘোষণা করে। এর আগে ২০২১ সালে সমাজ সেবা অধিদফতরের মাধ্যমে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন বাস্তবায়নে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেখানে কারা হিজড়া লিঙ্গের আওতায় পড়বে তার সংজ্ঞা প্রদান করা হয়। সংজ্ঞাটি নিম্নরূপ-

‘হিজড়া শব্দের ইংরেজি পরিভাষা হচ্ছে Transgender (ট্রান্সজেন্ডার)। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের দৈহিক বা জেনেটিক কারণে নারী বা পুরুষ কোনও শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, সমাজে এই জনগোষ্ঠী হিজড়া হিসেবে পরিচিত। এ নীতিমালার আওতায় হিজড়া বলতে সমাজে যিনি হিজড়া হিসেবে পরিচিত এবং যিনি নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিতে ইতস্ততবোধ করেন না তাকে বোঝাবে’।

তাহলে সংজ্ঞায় তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ- (১) হিজড়াকে ইংরেজিতে বলা হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার, (২) জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাদের দৈহিক বা জেনেটিক কারণে নারী বা পুরুষ কোনও শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, এবং (৩) সমাজে যিনি হিজড়া হিসেবে পরিচিত এবং যিনি নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিতে ইতস্ততবোধ করেন না। আমার মনে হয় পৃথিবীতে এইটি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত সংজ্ঞার একটি, যা অন্তদ্বান্দ্বিক। কেননা, ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী নয় বা তাদের দৈহিক-জেনেটিক ত্রুটি নাই। এখানে স্পষ্টত ইন্টারসেক্স বা আন্তলিঙ্গকে ত্রুটিপূর্ণ বলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভুল (অন্য লেখায় ব্যাখ্যা করবো, আজ শুধু জেন্ডার নিয়ে আলোচনা)। আবার বলা হচ্ছে ‘যিনি নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিতে ইতস্ততবোধ করেন না’, এটি একটি যথার্থ বাক্য। তবে, খুব কম ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি নিজেকে হিজড়া পরিচয় দেন বা দিতে চান। তাহলে প্রশ্ন আসে ‘হিজড়া’ কারা?

হিজড়া একটা কালচার বা সংস্কৃতি, একটি প্র্যাকটিস বা চর্চা। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান অঞ্চলে এই হিজড়া সংস্কৃতি বা চর্চার প্রচলন আছে। এর সমৃদ্ধ অতীত আছে এবং মিশ্র অভিজ্ঞতার বর্তমান আছে। ট্রান্সউইমেন বা রূপান্তরিত নারীদের একটি অংশ এই সংস্কৃতি বা চর্চার সঙ্গে যুক্ত। হিজড়া একটি সংঘবদ্ধ দলকে নির্দেশ করে, যারা গুরু-শিষ্য প্রথায় জীবনযাপন করে। বিয়ে বাড়ি, নতুন শিশু আছে এরকম বাড়িতে দোয়া বা বরদানের মাধ্যমে বকশিশ নেওয়া এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা জীবন ধারণ করে থাকে। প্রাচীনকাল থেকে তাদের একটি অংশ যৌনপেশার সঙ্গে জড়িত। যখন থেকে কোনও শিশু সন্তানের মাঝে রূপান্তরের (ছেলে শিশু মেয়ের মতো আচরণ করে) আচরণগুলো প্রতীয়মান হয়, তখন থেকেই তার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে অবস্থান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অনেকেই পালিয়ে বাঁচতে চায়, তখন এই গুরুর ডেরাগুলো একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এবং তারা হিজড়া সংস্কৃতি/চর্চায় ভিড়ে যায়।

কালের বিবর্তনে এই হিড়জা সংস্কৃতি বা চর্চা একটি সাম্রাজ্যবাদী পেশায় পরিণত হয়েছে। এখন গুরুদের ভূমিকা রাজার মতো, তাদের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী (সম্মান ও মর্যাদা ভেদে বিভিন্ন পদ আছে) সবই আছে। সাম্রাজ্য বাড়ানোর মতো তাদের এলাকা দখলের লড়াই আছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আছে। নতুনদের শিষ্যত্ব প্রদান করেই তাদের মাঠে নামিয়ে দেন টাকা তোলার জন্য, আর এই কাজের বিনিময়ে শিষ্যরা কেবল পেটে-ভাতে বাঁচতে পারে আর বিত্তবৈভবে বড় হতে থাকে গুরু (রাজা) ও তার নৈকট্যভাজনরা (মন্ত্রিপরিষদ)।

আজকের আলোচনা শেষ করবো ‘তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ডজেন্ডার’ নামক একটি প্রপাগান্ডা দিয়ে। তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ডজেন্ডার বলে কোনও কিছু অস্তিমান নেই, এটি একটি অলীক ডিসকোর্স। গণমাধ্যমের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে কিছু বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাধ্যমে এই কথিত ‘তৃতীয় লিঙ্গ’র জন্ম হয়েছে, যার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই। যেখানে প্রথম বা দ্বিতীয় লিঙ্গ বলে কিছু নেই, সেখানে তৃতীয় লিঙ্গ আসে কীভাবে! এই ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বলার মাধ্যমে কোনও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আছে কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই, তবে জ্ঞানহীনতার উপস্থিতি এখানে স্পষ্ট।

আমরা যারা এই ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বলছি, কেন বলছি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না নিশ্চিত। এই না পারাটাকেই আমি বলতে চেষ্টা করেছি ‘অদ্ভুত আঁধার’। এটা আসলে কোনও অন্ধকার না, এটা হতে পারে জানার ইচ্ছা স্থবির হয়ে যাওয়া। আমাদের হাতের কাছে তথ্যভাণ্ডার আছে, সিঙ্গেল ক্লিক বা এক চাপেই আমরা যেকোনও অজানাকে ভেদ করতে পারি এই ডিজিটাল বিশ্বে। কিন্তু আমরা তা না করে অনুকরণ বিদ্যায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। জীবনানন্দ থেকে ধার করে এই ক্রমিক অন্ধকারকে (নতুনকে জানার অনীহা) আমি বলি- ‘অদ্ভুত আঁধার’।


লেখক: জনসংযোগ ও যোগাযোগ কর্মকর্তা, বন্ধু সোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মজুরির ধান নিয়ে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
মজুরির ধান নিয়ে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
হামলার শিকার স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি অস্ত্রোপচার
হামলার শিকার স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি অস্ত্রোপচার
মুম্বাইয়ের হারের পর নিষেধাজ্ঞার কবলে হার্দিক
মুম্বাইয়ের হারের পর নিষেধাজ্ঞার কবলে হার্দিক
সর্বশেষসর্বাধিক