X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ

মোহাম্মদ এ. আরাফাত
১৬ জুন ২০২২, ১৭:১৩আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৭:১৩

২০২০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার অন্ধ অনুসারীরা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্পিত অভিযোগ আনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, নির্বাচনে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু অঘটন/ ঘটনাকে ঘিরে তারা বায়বীয় অভিযোগ তোলে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।

রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে সেগুলো হলো–

১. পোল ওয়াচারদের (পোলিং এজেন্ট) ভোট গণনার সময় থাকতে দেওয়া হয়নি।

২. মৃত মানুষও ভোট দিয়েছেন।

৩. দালাল মিডিয়া এবং হাইটেক করপোরেটরা ট্রাম্পের মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত করেছে।

৪. দালাল মিডিয়া পুরোপুরি বাইডেনের পক্ষে কাজ করেছে, ভোট কারচুপির বিভিন্ন সংবাদ দালাল মিডিয়া প্রচার করেনি।

৫. অতিরিক্ত মেইল ইন ব্যালট পাওয়া গেছে, যেগুলো ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পরও সংগ্রহ করা হয়েছে।

৬. ট্রাম্পের পক্ষের অনেক ভোট গণনা করা হয়নি।

 

এতে অনেক মানুষ বিভ্রান্তও হয়। অনেকে এতটাই বিভ্রান্ত হয় যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবনে (ক্যাপিটল বিল্ডিং) আক্রমণ করে বসে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস তথা সংসদ ভবনে জড়ো হয় এবং পুলিশের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে, তারা কেউই সন্ত্রাসী ছিল না। তারা ছিল উগ্রবাদী রিপাবলিকান সমর্থক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্ধ অনুসারী। তারা তাদের সংকীর্ণ চিন্তা থেকে বিশ্বাস করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে চুরি করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো হয়েছে এবং আমেরিকা আসল আমেরিকানদের হাত থেকে অন্যদের হাতে চলে যাচ্ছে।

কিন্তু, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব অপপ্রচারের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজ (civil society) এবং গণমাধ্যম গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের ভিত্তিতে হেডলাইন করেনি বা টেলিভিশন টকশোতে বসে আন্দাজনির্ভর কথা বলেননি। প্রতিটি বায়বীয় অভিযাগ তারা সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখে এবং যথাযথভাবে verify করেই তারপর তা প্রচার করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তারা আসল সত্যটাই তুলে ধরেছে।

অথচ, আমাদের সুশীল সমাজ এবং বেশ কিছু গণমাধ্যম নির্বাচন কেন্দ্রিক অপপ্রচারগুলোকেই বেশি তুলে ধরে এবং verify না করেই হেডলাইন করে দেয়। যেখানে কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে গণমাধ্যমের কাজ হলো তা খতিয়ে দেখে সত্যটা তুলে ধরা, সেখানে আমাদের কিছু গণমাধ্যম মিথ্যা অভিযোগগুলোকেই শিরোনাম করে এবং মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করে। সুশীল সমাজের একটি অংশ নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই আন্দাজনির্ভর কথা বলতে থাকে এবং মানুষের মনে একটি ভালো নির্বাচনের বিপক্ষে নেতিবাচক ধারণা (perception) তৈরি করে দেয়।

আমাদের গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ যতদিন না দায়িত্বশীল এবং সত্যনির্ভর হবে, ততদিন এ দেশে ভালো নির্বাচন করেও তা প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন হবে। দেশের কিছু গণমাধ্যম এবং নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা বলা সুশীল সমাজের একটি অংশ, তারা আসলে গণতন্ত্রবিরোধী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সবকিছু সুন্দরভাবে হওয়ার পরেও একেবারে শেষের দিকে বিচ্ছিন্ন কিছু হট্টগোলকে কেন্দ্র করে পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে কিছু গণমাধ্যম এবং কিছু কিছু সুশীল। এই হট্টগোলটি কোনও বিষয়ই হতো না, যদি বিরোধী পক্ষ জিতে যেত। নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে গেলেই এদের সুর পাল্টে যায়।

এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে কিন্তু তলে তলে তারা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট। সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই তাদের কাজ। আমাদের নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয়ে যায়, গণতন্ত্র যদি শক্ত ভিত্তির ওপর না দাঁড়ায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি যদি আবার আনা যায়, তাহলে কাদের লাভ? চিন্তা করে দেখুন।

 

লেখক: চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ