X
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পদ্মা সেতুতে অন্তর্ঘাত, অপকর্ম ও আইনের প্রয়োগ

মো. জাকির হোসেন
২৯ জুন ২০২২, ১৬:২৩আপডেট : ২৯ জুন ২০২২, ১৬:৪৩

বাঙালির সক্ষমতা, গর্ব ও মর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু। নানা চড়াই-উৎরাই, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর নির্মাণ রুখতে দুর্নীতির পরিকল্পিত মিথ্যা গল্প তৈরি করা হয়েছে। বিনা অপরাধে জেল খাটতে হয়েছে সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেনকে। মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী। এরপরও দেশি-বিদেশি অপরাধ সিন্ডিকেটের আশ মেটেনি। বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা একে একে সকল দাতা সংস্থা সরে যায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলে শুরু হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-হাস্যরস, অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে বলা হয় সম্ভব না। কিন্তু পিতা মুজিবের রক্ত যার ধমনীতে, মুজিব যার রাজনীতির গুরু, যার শিরায় শিরায় গুঞ্জরিত হয় সাহসী উচ্চারণ ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’, বাংলা ও বাঙালির প্রতি অতল ভালোবাসা যার রাজনীতির বীজমন্ত্র, সেই বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে নিজস্ব অর্থায়নে ‘কীর্তিনাশার বুকে কীর্তিগাঁথা’ বিশ্বের বিস্ময় পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্পাতকঠিন মনোবল, দৃঢ়তা ও দুরদর্শী নেতৃত্বের কাছে দেশি-বিদেশি মোড়লদের ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে।

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর অভিষেকও হয়েছে। আমাদের গর্ব ও মর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিনই সেতুতে অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধ, নানা অপকর্ম ও আইন লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। এসব পদ্মা সেতুর রক্ষা ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলেছে বৈকি। পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনায় আটক হয়েছে বায়েজিদ তালহা। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, বায়েজিদ নামের ওই ব্যক্তি নেতিবাচক মন্তব্য করে পদ্মা সেতুর রেলিং থেকে হাত দিয়ে লোহার নাট খুলতে খুলতে বলছেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের। আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। নাট খুইল্লা...’। সিআইডি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার দিনে প্রাইভেট কারে এক বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন বায়েজিদ তালহা। টোল প্লাজায় টাকা পরিশোধ করে সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার সময় ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী জায়গায় নামেন টিকটক ভিডিও তৈরির জন্য। তবে তার আসল উদ্দেশ্য ছিল, এই ভিডিও বানিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা। তাই পরিকল্পিতভাবে গাড়িতে থাকা টুলবক্সের সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রথমে তারা সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলে। পরে ঢিলা করে রাখা নাট হাত দিয়ে খোলার ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

ঘটনার সময় কায়সার নামে তার এক বন্ধু সঙ্গে ছিলেন। কায়সারকে খোঁজা হচ্ছে। বায়েজিদ ছাড়াও আরেক যুবকের ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, এই সেতুর নাট কিন্তু আমি হাত দিয়েই খুলেছি। এটা কিন্তু নেইনি আমি। লাগিয়ে দিলাম। ওই যুবকদের এমন কাণ্ড দেখে অনেকেই ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে, ওদের শাস্তি দাবি করেছেন। সরকারকে বিব্রত করতে পরিকল্পিতভাবে বায়েজিদের এই ভিডিও বার্তা ছড়ানো হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাদের ধারণা ভিডিও ধারণের পূর্ব মুহূর্তে যন্ত্র দিয়ে নাট-বল্টু খুলে রাখা হয়েছে। পরে হাত দিয়ে নাট-বল্টু খুলে সেই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। এমন আশংকার পেছনে কারণ হলো, বায়েজিদের পরিবারের একাধিক সদস্য বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এমনকি বায়েজিদও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বায়েজিদের পক্ষ অবলম্বন করে বিএনপির এক নেতা দাবি করেছেন, সেতুর নাট-বল্টু সংযোজনে ত্রুটি আছে যা সংশোধন করে ঝুঁকিমুক্ত করা উচিত। এমন বিশাল কর্মযজ্ঞে কোনও ত্রুটি থাকতেই পারে, এটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে নাট-বল্টুর ত্রুটির কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে তা খুলে নিয়ে টিকটক ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া কি স্বভাবসুলভ নির্দোষ মানসিকতা প্রকাশ করে?

বায়েজিদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে এটি সহজেই ধারণা করা যায় যে, তার কাজ নির্দোষ ছিল না। বরং সে অপরাধমূলক মানসিকতা নিয়েই এমন কাজ করেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে আরও কয়েকটি টিকটক ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। একটিতে দেখা যায়, শাড়ি পরা কয়েক নারী নানা অঙ্গভঙ্গী করে নেচে-গেয়ে টিকটক করছেন। অন্যদিকে, ২৬ জুন সন্ধ্যায় সেতুর ২৭ ও ২৮ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যে দু’জন মারা যায় সেখানেও পেছনের সিটে বসে একজন ভিডিও ধারণ করছিলেন, আর চালক পদ্মা সেতুতে অনুমোদিত সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটারের গতিসীমা লঙ্ঘন করে ১০৫ কিলোমিটার গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন।

২৬ জুন এর আরেকটি ঘটনা দিনভর সমালোচনায় ছিল। পদ্মা সেতুতে উঠে এক যুবকের মূত্রত্যাগের ছবি। একজন মূত্রত্যাগ করছেন আর মোটরসাইকেলে বসে আরেকজন ওই যুবকের ছবি তুলছেন। ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন নেটিজেনরা। সবার মন্তব্যে ছিল তীব্র ক্ষোভ। অনেকে তাদের ‘প্রতিবন্ধী’ বলেও মন্তব্য করেন। এ ছাড়াও পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল থামিয়ে সেলফি তোলা, সেতুর সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে কিংবা সেতুতে শুয়ে পড়ে ও সেতুর রেলিংয়ে বসে ছবি তোলা ও গল্প-গুজব করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। এতে একদিকে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। কাউকে কাউকে আবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেতু থেকে ফেসবুক লাইভ করতেও দেখা গিয়েছে। ব্যক্তিগত বাহনের যাত্রীরা তো বটেই, গণপরিবহন থামিয়েও সেতুতে নামছিল মানুষ। কিছু মানুষের এমন বিবেকহীন আবেগ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ লিখেছেন সবই তো হলো এখন বাকি থাকলো চটপটি, চা, পান-সিগারেট, বাদাম-বুটের দোকান বসানো। এসব আর বাকি থাকবে কেন? সেতুর ওপরে দাঁড়ানো বা ছবি তোলা নিষেধ থাকলেও অনেকেই মানছিলেন না। তাই সেতু কর্তৃপক্ষ পুনরায় গণবিজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছেন সেতুতে কী কী করা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে– পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। সেতুর ওপর যে কোনও ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনও ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।

পদ্মা সেতু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান তথা সংরক্ষিত এলাকা। এখানে উঠে নাট খুলে ফেলা, মূত্রত্যাগ, আড্ডা মারা, টিকটক, ফেসবুক লাইভ করা দূরে থাক অনুমতি ব্যতীত এতে প্রবেশ, অবস্থান এমনকি এটি অতিক্রম করারও সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কতিপয় কার্যাবলী প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণ ও দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৪ বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন সহ অন্যান্য আইনে রাষ্ট্রকে কোনও স্থান কিংবা এলাকাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২১ ও ২২ ধারায় বলা হয়েছে সরকার কোন স্থান কিংবা এলাকাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে ওই স্থান কিংবা এলাকায় প্রবেশাধিকার, অবস্থান কিংবা অতিক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এই ধারাসমূহে আরও বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি সংরক্ষিত স্থান বা এলাকায় প্রবেশ, অবস্থান কিংবা অতিক্রমের জন্য সরকারের অনুমতি প্রাপ্ত হলে সংরক্ষিত স্থান বা এলাকার জন্য সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক জারিকৃত প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে তিনি বাধ্য থাকবেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৩ ধারায় বলা হয়েছে ২১ ধারায় সরকার কর্তৃক ঘোষণাকৃত সংরক্ষিত স্থানসমূহ এবং ২২ ধারার সংরক্ষিত এলাকার জন্য নির্ধারিত আদেশ-নিষেধ ভঙ্গ করলে এর শাস্তি হিসেবে ২৩ ধারার বিধান অনুযায়ী ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনের ১৫ (১) ধারায় রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কতিপয় কাজকে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ১৫(৩) ধারায় এইসব অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

১৫ ধারায় যেসব কাজকে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো– দক্ষতা নষ্ট বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য কোনও কাজ করা অথবা নিম্নোক্ত সম্পদ বিনষ্ট করা: (ক) কোন সরকারি বা আধাসরকারি বা স্থানীয় সরকারের বা রাষ্ট্রায়ত্ব কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইমারত, যানবাহন, যন্ত্রপাতি বা অপরাপর সম্পত্তি; (খ) কোন রেলপথ, রাস্তা, খাল, সেতু, বন্দর, জাহাজ মেরামতের কারখানা, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার; (গ) রেলগাড়ি, জাহাজ বা উড়োজাহাজ; (ঘ) কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, বিতরণ বা সরবরাহে ব্যবহূত ভবন বা অন্যান্য সম্পত্তি বা কোন পয়ঃব্যবস্থা, খনি বা কারখানা; (ঙ) এই আইনে বা অন্য কোন আইনে নিষিদ্ধ বা সংরক্ষিত হিসাবে ঘোষিত কোন স্থান বা এলাকা এবং (চ) পাট, পাটজাত দ্রব্য, পাটের গুদাম, পাটকল, বা পাট বাঁধাই প্রেস। কোন ব্যক্তি ১৫ (১) ধারায় উল্লিখিত অন্তর্ঘাতমূলক কাজের জন্য দোষী সাব্যস্থ্য হলে তিনি মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড কিংবা ১৪বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

বিশেষ ক্ষমতা আইন ছাড়াও সেতুতে সংঘটিত কিছু অপরাধ-অপকর্ম দণ্ডবিধি আইনেও বিচার্য। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ২৬৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কর্তৃক জনসম্মুখে এমন কোনো কাজ করা, যার দ্বারা জনগণের বিরক্তি সৃষ্টি হয় এমন কার্য করাকে গণ উৎপাত বলে’। দণ্ডবিধির সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে কোনও ব্যক্তির অবৈধ কাজ যা জনসাধারণের উপদ্রব সৃষ্টির জন্য দায়ী, যা জনসাধারণের শারীরিক বা মানসিক আঘাত, বিপদ বা বিরক্তি সৃষ্টি করে তা গণ উৎপাত।

অতএব, কোনও ব্যক্তি যদি জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে মূত্রত্যাগ কিংবা চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে তাহলে তার এমন কাজ গণ উপদ্রব সৃষ্টি করেছে বলে গণ্য হবে। এরুপ কাজের জন্য দায়ী ব্যক্তি দণ্ডবিধির ২৯১ ধারা মোতাবেক বিনাশ্রম কারাদণ্ড যার মেয়াদ ৬ মাস পর্যন্ত হতে পারে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। টিকটকের নামে যারা পদ্মা সেতুতে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে, অশোভন শরীর প্রদর্শন করে ভিডিও করছেন তা-ও দণ্ডবিধিতে অপরাধ। দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি, অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করিয়া (ক) কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কার্য করে অথবা (খ) কোন প্রকাশ্য স্থানে বা সন্নিকটে কোন অশ্লীল গান, গাঁথা সঙ্গীত বা পদাবলী গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

পদ্মা সেতুতে অপরাধ-অপকর্ম ঠেকাতে সরকার আইনের প্রয়োগ শুরু করেছেন। নাট-বল্টু খুলে ফেলা বায়েজিদকে আটক করে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় মামলা রুজু করেছেন।

এই মামলায় আদালত ইতিমধ্যে বায়েজিদকে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। সেতুতে নিয়ম ভাঙা বা এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজাও দিয়েছেন। সেতুর সুরক্ষা ও মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীও নিয়মিত টহল দিতে শুরু করেছে। আইন প্রয়োগের পাশাপশি গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নিলে মূল সেতুর রেলিং ভেঙে যানবাহন নদীতে পড়ার ঝুঁকি আছে।

খবরে প্রকাশ গত ২৭ জুন সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ভায়াডাক্টের রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় পেঁয়াজবাহী একটি ট্রাক। এতে তিনজন আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চালক ও চালকের সহকারীর অবস্থা গুরুতর।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু বছর আগে আক্ষেপের সঙ্গে লিখেছিলেন ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।’ কবি নিশ্চয়ই তাঁর জীবদ্দশায় বাঙালির এমন কিছু ত্রুটি দেখেছিলেন যা দেখে কষ্ট পেয়ে এ মন্তব্য করে গেছেন। সে কলঙ্ক আমরা আজও মুছতে পেরেছি কি? সম্পদে ধনী হলেও মননে নিঃস্ব হয়ে পড়ছি না কি? পদ্মাসেতু বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সেতুতে নানা অপরাধ-অপকর্মের ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতেই হবে। নইলে বিশ্ব বলবে, আমরা উন্নত প্রযুক্তি করতে পারলেও তা ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করিনি। তদুপরি, ছোট ছোট ঘটনা থেকে বড় ঘটনা ঘটে। গোড়াতেই আটকাতে হবে। সেতুর নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশেই ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে। দুই পাশে থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরীক্ষায় ফেল করলে বিজয়োল্লাস বিষাদে পরিণত হবে।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৯৭ শতাংশে নেমেছে
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৯৭ শতাংশে নেমেছে
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে ডিএমপির প্রতিনিধিদল
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে ডিএমপির প্রতিনিধিদল
২০৩১ সাল পর্যন্ত ইয়ামাল বার্সেলোনার
২০৩১ সাল পর্যন্ত ইয়ামাল বার্সেলোনার
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের খালাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের খালাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
সর্বশেষসর্বাধিক