X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুসম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার সবচেয়ে বড় অর্জন

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:২৭আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:২৭

পৃথিবী ক্রমপরিবর্তনশীল এবং সেই সঙ্গে সম্পর্কও। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে রক্ত দিয়েছিল ভারতের সৈনিকেরাও। দেশটিকে স্বাধীন করার পেছনে ভারতীয়দের অবদান অনস্বীকার্য। ওই সময় থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে অন্য ধরনের হৃদ্যতা ভারতের। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কলকাতা সফরে ভাষণে বলেছিলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ সম্পর্ক এবং এটি চিরজীবী।’

১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সামরিক জান্তাদের শাসনামলে বৈদেশিক সম্পর্ক নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৯০ দশকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, যার একটি সংক্ষিপ্ত ছেদ পড়ে ২০০৬ সালে। এরপর ২০০৮ সালে গণতন্ত্র আবার প্রতিষ্ঠার পরে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক গত কয়েক দশক ধরে চলে আসা সম্পর্কের থেকে ভিন্নমাত্রা নেয়।

দুই দেশের হৃদ্যতা আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। গত ১৩ বছরে সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে এমন কোনও খাত নেই যেখানে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা নেই। পানি, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, সংস্কৃতির মতো প্রথাগত সহযোগিতার পাশাপাশি স্যাটেলাইট, নিউক্লিয়ার, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির মতো অগ্রসরমান খাতেও রয়েছে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৯ সালে শেষবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করেছেন। অন্যদিকে ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কভিন্দ এবং নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর একই বছর ঢাকা সফর এর আগে হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় সফরকালে ওই দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার পরে ৬ সেপ্টেম্বর দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। দুই দেশের মধ্যে সব খাতে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এ কারণে এই সফরে কম গুরুত্বপূর্ণ ৫ থেকে ৭টি সমঝোতা স্মারক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসাবে যাচ্ছেন একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল এবং বাণিজ্য বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন তিনি।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয়দের পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘মুজিব বৃত্তি’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে এ সফরে। এর আগেও বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় শহীদদের সম্মাননা দিয়েছে। এবার শহীদ পরিবারের সদস্যদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেবে বাংলাদেশ।

এবারের সফরে দীর্ঘমেয়াদি কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। এরমধ্যে কমপ্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট করার জন্য যৌথ সমীক্ষা জরিপ শুরু করার ঘোষণা আসতে পারে। এই চুক্তি সই হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি প্রায় ২০০ কোটি ডলারের, যা পাঁচ বছর আগে অনেক কম ছিল। এছাড়া জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার অঙ্গীকার করতে পারে দুই দেশ।

আঞ্চলিকভাবে অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশ দুটি এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। কাজেই আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য দেশ দুটির মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকা জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শ্রীলঙ্কায় চলমান সংকট নিরসনে উভয় দেশই তাদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল তার মধ্যে দেশের নেতৃত্ব কার হাতে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে চেয়েছিলেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে এবং ওই সময়ে ভারতের নেতৃত্ব এগিয়ে এসেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে নরেন্দ্র মোদিও একই পথ অনুসরণ করেছে।

১৩ বছরের এই বোঝাপড়া অব্যাহত রাখা এবং এটিকে আরও মসৃণভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিকতা রয়েছে উভয় দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এটি সম্ভব হয়েছে দুই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়ার কারণে। এই গোটা সময়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে ভারতে ২০০৯ সালে কংগ্রেস সরকারের মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার আসার পরে নেতৃত্বে আসেন নরেন্দ্র মোদি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফরে শীর্ষ নেতৃত্বের রাজনৈতিক বোঝাপড়া অব্যাহত রাখার বিষয়টি সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে। সম্পর্ক ধরে রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কী ভাবছে এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়াটা স্বাভাবিক। যদি জানতে চাওয়া হয় তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্তরও তৈরি থাকবে এটি ধরে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত পরিপক্ব। দুই দেশ একে অপরকে বোঝে। অন্যান্য দেশের মতো ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে, সহযোগিতা রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। আবার একই সঙ্গে কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে যে সুসম্পর্ক সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়। এই সম্পর্ক যাতে অব্যাহত থাকে সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবারের সফরে সবচেয়ে বড় অর্জন হবে দুই দেশের জন্য।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলা ট্রিবিউন।

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ