X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেতা সুরক্ষা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৪আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৪

আমরা রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যাই, আইনি বিষয় থাকলে উকিলের কাছে যাই। ডাক্তার ভিজিট রাখেন, উকিল ফি রাখেন। কিন্তু তারা কেউই তাদের গ্রাহককে এই টাকা গ্রহণের বিনিময়ে কোনও রসিদ দেন না। আজ সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ‘ভোক্তা-অধিকার’ দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিবসে ভোক্তাদের অনেক অধিকার, তাদের সচেতনতা, সরকারের কর্তব্য, ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব নিয়ে যখন আমরা কথা বলছি, তখন এই ছোট কিন্তু সব স্তরের মানুষকে স্পর্শ করে এমন একটা বিষয় সামনে আনা জরুরি আলোচনার জন্য।

পণ্য বা সেবা কেনার প্রতিটি স্তরে বাংলাদেশের মানুষ অন্যায় ও অন্যায্যতার শিকার। এবং এর একটি বড় কারণ হলো আমরা এই সত্যটি সমাজে প্রতিষ্ঠিতই করতে পারিনি যে ভোক্তা অধিকার আসলে মানবাধিকার। দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বেশ কিছু আইন রয়েছে কিন্তু নিজেদের অধিকার ও আইন সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। যারা বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা দ্রব্য ব্যবসার কাজে লাগান তারা হলেন ক্রেতা আর তা নিজের ব্যক্তিগত ভোগে ব্যবহার করলে তিনি হন উপভোক্তা। তথ্য বলছে, উপভোক্তাদের ৯৭ শতাংশই পণ্য ও সেবা সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল এবং তারা কেনার সময়ে ঠিকভাবে জিনিসের মান যাচাইও করেন না, দামও বোঝেন না। অর্থনীতির সূত্র অনুসারে, এটি বৈষম্য এবং সেটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে বাজার ব্যবস্থায় অসঙ্গতি সৃষ্টি হয়, আর্থিক বিপর্যয় দেখা দেয়। ভোক্তা ও সচেতন নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি হঠানো সম্ভব হবে।

প্রতিবছরই এই দিবসটিতে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। যে কথাটি বারবার উচ্চারিত হয় তা হলো জনসচেতনতা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমন অনেক আইন করা হয়েছে, যেগুলো তুলনামূলক জনগণের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত। এরমধ্যে প্রধান হলো ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার আইন। ভোক্তাকে তার অধিকার বুঝে নিতে হবে। ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন হলে অভিযোগ করতে হবে। প্রতিকার বুঝে নিতে হবে। এর পাশাপাশি তথ্য অধিকার আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইন মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া ও তার অধিকার নিশ্চিতে বড় দুটি আইন।

নিঃসন্দেহে ভোক্তা অধিকার আদায়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ পথ হচ্ছে ভোক্তাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন থাকা বা তাদের সচেতন করা। কিন্তু এটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে এই দিবস পালন আসলে অর্থহীন। ক্রেতার সচেতনতার ওপরে প্রশাসনিক সাফল্যও অনেকাংশে নির্ভর করে। পণ্য ও সেবার দাম ও মানে ন্যায্যতা আনতে সরকারি সংস্থাসমূহের দক্ষতা, কার্যকারিতা, নৈতিকতা, সাম্য, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বাড়লে মানুষ প্রশাসনের প্রতি আস্থাশীল হয়।

তাই প্রশ্নটা যতটা ক্রেতা সচেতনতার, তার চেয়ে বেশি ক্রেতা সুরক্ষার। যেখানে আসল-নকল বা দামের মারপ্যাঁচে প্রতিনিয়ত মানুষকে ঠকতে হচ্ছে, সেখানে শুধু জনসচেতনতার কথা বললে বিষয়টি ভিকটিম ব্লেমিংয়ের পর্যায়ে চলে যায়। সবখানেই ভোক্তা বঞ্চনার হার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ভেজাল পণ্য, ওষুধের সঙ্গে আছে দাম কারচুপি, ওজনেও কারচুপি। নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে বাজার ঠাসা। তাই এমন একটি দিবসে সরকারের ভূমিকাটি বড় আকারেই সামনে আসে। যারা ভোক্তা অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেন তাদের সহযোগিতায়ও সরকারের ভূমিকা বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বীকৃত।

বাজারে গিয়ে পণ্য কেনার পাশাপাশি মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটা করছে বেশুমার। সেবা ক্রয় করছে, লেনদেন করছে মোবাইলে। ক্রেডিট কার্ড একটি বড় বাস্তবতা। ব্যাংকের সেবা, ডাক্তারের ভিজিট, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চার্জ,  সন্তানের কোচিং সেন্টারের ফি, স্কুলের বেতন ও নানাবিধ ফি, উকিলের ফি প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজ করছে অস্বচ্ছতা। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্রেতার সুরক্ষা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এরকম হরেক কিসিমের পণ্য ও সেবা নিয়ে অভিযোগ যাচাই করে টাকা ফেরত বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার একটি সহজ পদ্ধতি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটিই হতে পারে বড় আকারে ক্রেতার সুরক্ষার পদক্ষেপ।

ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা অর্জনের পথ মসৃণ করে রাখা, গুটি কয়েক বড় ব্যবসায়ীর জন্য একচেটিয়া বাজার সৃষ্টি করে রাখা, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণ, সরকারি সংস্থাগুলোর ধনিক শ্রেণি ও ব্যবসায়ী প্রীতি একটি ভোক্তাবিরোধী পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথটি করতে হবে সরকারকেই।

ক্রেতা সুরক্ষাকে ঠিকমতো বাস্তবায়িত করলে প্রশাসনের প্রতিও মানুষের আস্থা বাড়বে, তেমনি অন্যদিকে ক্রেতাদের সচেতনতার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হলে সরকারও উপকৃত হবে। ক্রেতাসুরক্ষা রক্ষায় সরকারের দায় অনেক। জাল বা ভেজাল জিনিস সম্পর্কে ক্রেতাকে সচেতন করা সরকারি দায়িত্ব। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে অনেকে ক্রেতাসুরক্ষা বিষয়ক জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি অনেক দিনের। সরকারের পাশাপাশি বাণিজ্য ও শিল্প সংস্থাগুলোও এগিয়ে এলে ক্রেতাসুরক্ষার ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

শুরুতে চিকিৎসা ও আইনি সেবার দুটি স্তরের প্রসঙ্গ তুলেছি। আশা করি সমাজের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর চিকিৎসক ও আইনজীবীরা নিজেরাই উদ্যোগী হবেন বিষয়টির সুরাহা করতে।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ