X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত পারলো কিন্তু বাংলাদেশ কেন পারছে না?

লীনা পারভীন
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:১৯আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:২৩

ভারত চাঁদকে জয় করেছে তাই বলে সবাই ছি-ছি করছে। সবার প্রশ্ন- কেন বাংলাদেশ পারছে না? একজন নাগরিকের দৃষ্টিতে এর কারণ অনুসন্ধানের জন্যই এই লেখা।

আমি মহাকাশ বিজ্ঞানী নই, কিন্তু একটি বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তা কাঠামো তৈরির জন্য বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না বলেই এই লেখাটা লিখতে সাহস করলাম।

ভারতের সঙ্গে আমাদের তুলনা কোনোদিক থেকেই চলে না। কারণ, অর্থনীতির হিসাবে ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশ এখনও উন্নত দেশেই পা দেয়নি। স্বপ্ন দেখছে কেবল। একজন মানুষ, যে অতি দরিদ্র থেকে সবেমাত্র দরিদ্র স্তরে উন্নীত হয়েছে, সে যদি নিজেকে একজন ধনীর সঙ্গে তুলনা করতে যায় তাহলে সেখানে বাস্তবতার চাইতে হতাশাই বেশি আসবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স মাত্র ৫২ আর ভারতের বয়স ৭০-এরও বেশি। ভারতের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের কোনও নাগরিক গোষ্ঠী দেশকে আবারও ব্রিটিশদের কাছে তুলে দিতে চায়নি, কিন্তু আমরা চেয়েছি। এ দেশীর রাজাকাররা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়ে গাদ্দারি করেছিল, আবার স্বাধীনতাকে মানতে না পেরে নিজের মাতৃভূমির পতাকাকে বিক্রি করার বাসনায় গাদ্দারির ফলাফল হিসেবে জাতির জনককে তাঁর পরিবারের বৃহৎ অংশসহ হত্যা করেছিল।

যদিও ভারত আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস এক নয়। তারপরও ভারতের একজন নাগরিকও নিজের দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি। পতাকার রঙ পাল্টাতে চায়নি।

ভারতের সঙ্গে তুলনা করতে হলে এই দেশের ইতিহাসকে তো ভুলে গেলে চলবে না। বহু সংবিধানে বিশ্বাসী মানুষেরা কখনও একই উদ্দেশ্যে চলতে পারে না। দেশ নিজে নিজে উন্নত হয় না। ভারত কীভাবে চন্দ্র জয় করলো সেই আলোচনা করে নিজেদের হীন করবেন অথচ চিন্তা করবেন না যে আপনি নিজেই কি চান যে একদিন আপনার দেশ গোটা বিশ্ব জয় করুক?  

ভারতের সংবিধানের যতগুলো সংশোধন বা পরিমার্জন হয়েছে তার বেশিরভাগ করা হয়েছে সর্বসাধারণের কল্যাণের স্বার্থে। শাসক শ্রেণির ইচ্ছার কোনও স্থান হয়নি। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কি বিরোধ নেই? ধর্মান্ধতা নেই? বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সব অর্থে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। তাদের বিশ্বাস, আদর্শ, নীতির সবটাই হিন্দু ধর্মকে কেন্দ্র করে কাজ করে। মুসলমান বিদ্বেষ তাদেরও আছে। ধর্মীয় দাঙ্গা তাদের দেশেও আছে, কিন্তু যে জায়গাটা অক্ষত বা অক্ষুণ্ন সেটি হচ্ছে রাষ্ট্রের বিবেচনায় দলীয় বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিতে না পারা। ভারত রাষ্ট্র হিসেবে তাদের মূল সংবিধান দ্বারা পরিচালিত সেখানে সরকারি দলের নিজস্ব বিশ্বাস বা মনোবাসনার প্রকাশ ঘটানো অসম্ভব।

ভারতের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার মাঠেই সীমাবদ্ধ। ক্ষমতায় বসলে সবাই ভারতপন্থি হয়ে যায় আর আমাদের দেশে? ১৯৭২ সালের সংবিধানকে যতবার কাটা হয়েছে জনগণের ইচ্ছা বা প্রয়োজনের প্রতিফলন ঘটেনি কোনোটাতেই। সরকারি দলের বিশ্বাস বা শাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য যখন যা মনে হয়েছে সেভাবেই পালটে দিয়েছে। সংবিধান মানে রাষ্ট্রের পরিচালনা পদ্ধতি অথচ আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের চরিত্রটাকেই পালটে দিয়েছে সংবিধান পালটে। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে ঢেকে দেওয়া হয়েছে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে। এই দেশে ধর্মভিত্তিক বিভাজন রাষ্ট্র স্বীকৃত।

মৌলবাদের আস্ফালনের পেছনের গল্পটা ভুলে গেলে তো চলবে না। ধর্ম থাকার কথা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সেটাকে করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিদেশনীতি সবকিছুতেই মেখে ফেলা হয়েছে মৌলবাদী চিন্তাধারাকে। বিজ্ঞান পাঠকে করে দেওয়া হয়েছে ঐচ্ছিক। ধর্ম ও বিজ্ঞানের মাঝে যে ব্যক্তিক বিভাজন ছিল সেটা মিলেমিশে এক হয়ে গেলো শিক্ষা ব্যবস্থায়, যার উদাহরণ হয়ে থাকবে হৃদয় মণ্ডলের ঘটনা।

রাষ্ট্র যেভাবে চিন্তা করবে তার নাগরিকরাও সেই লাইনেই চিন্তা করবে। আমাদের দেশে যারা বাংলাদেশের জন্মটাকেই মেনে নিতে পারেনি তারাই ক্ষমতায় ছিল বেশিরভাগ সময়। মানুষের মাঝে দেশপ্রেমের বিভাজন সেই দিয়েই শুরু। আপনি বাংলাদেশকে চাঁদে দেখতে চাইবেন কিন্তু সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে সেটাকেও বিশ্বাস করবেন। সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রকে আঘাত করবেন। তাহলে হবে কেন? বিজ্ঞান আর কূপমন্ডূকতা হাত ধরাধরি করে হাঁটবে না তো।

আমরা কি সবাই এক সুরে, এক বাক্যে আমাদের দেশকে ভালোবাসি- এই কথাটা বলতে পারি? এখনও কি আমরা নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে পারছি? ভারতে এমন একজন নাগরিক পাবেন না যে ভারতমাতার জয় চায় না। এমন একজনকে পাবেন না যারা ভারতের ক্ষতি হতে পারে এমন কোনও নীতিমালাকে সমর্থন করে টিকতে পারে।

সারা দেশে সরকার বিজ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত না করে ইসলামিক রাষ্ট্রের তকমা কিনে নিতে শুরু করলো। বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা বসে আছে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও কথা উঠেছে। এসব কেন করছে সরকার? ভোটের মাঠে ধর্মভিত্তিক মানুষের ভোটকে হারাতে  চায় না বলেই তো।  আমি কৃষিভিত্তিক গবেষণাকে হেয় করছি না, কিন্তু কৃষির পাশাপাশি গোটা বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে হলে আমাদের ভাবতে হবে আরও তিন ধাপ এগিয়ে গিয়ে। ভারতের বিজ্ঞানীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। কারণ, রাষ্ট্র কোনও সরকারকে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেয়নি। অথচ আমাদের? যেকোনও কাজের প্রথমেই সরকার হিসাব করে তার স্বার্থের কথা। জনগণ হিসাব করে তার নিজের কথা।

চিন্তার বিভাজন নিয়ে দেশের উন্নয়ন সফল হয় না। বিশ্বাসের বিভাজনের মাঝে হারিয়ে অগ্রগতির গল্পগুলো। কোনও বিজয়ের জন্য চাই বেশিরভাগের একই লক্ষ্য, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭১ সালে।  অথচ বিভাজন আমাদের পদে পদে। এমন বিভাজনের বিশ্বাসী হয়ে আপনারা যখন আমরা কেন চন্দ্র জয় করতে পারি না বলে আফসোস করেন, তখন সত্যি এটাকে দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু বলার থাকে না।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ