X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের বারোয়ারি হিসাব

জোবাইদা নাসরীন
০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫০আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫০

এই বছরের অক্টোবর মাসটি নানা কারণেই বাংলাদেশের মানুষের জন‍্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হিসাব-নিকাশের খানিকটা ফয়সালা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ‍্যম এবং গণমাধ‍্যমে তিনটি বিষয় আলোচনায় ছিল। একটি ছিল– ক্রিকেট অঙ্গন। সেটিও রাজনৈতিক। রাজনৈতিক মনোযোগের পাশাপাশি সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ‍্যমেও উত্তপ্ত ছিল।

জাতীয় নির্বাচনের আর বাকি তিন মাস। এই মাসেই বাজবে নির্বাচনের বাঁশি। তবে গত মাসের শেষ থেকে একটা টান টান উত্তেজনা চলছে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নির্বাচনকেন্দ্রিক তাদের অবস্থানে অনড় আছে এখনও। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং সেটিকে কেন্দ্র করে তার বিদেশযাত্রার অনুমতি নিয়েও বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন মোড় নেবে বলে অনেকেই ধারণা করেছিল। এটি নিয়েও এক ধরনের টান টান উত্তেজনা ছিল। অনেকেরই ধারণা, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের ভেতরে ভেতরে এক ধরনের দেনদরবার চলছিল। এবং সেই দেনদরবারের মূল জায়গাই ছিল বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করার অনুমতি না দেওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে– সরকারি তাপ-চাপ বিএনপিকে সেভাবে গলাতে পারেনি। তবে বিএনপি গত তিন মাসে যেভাবে সরকার পতনের আন্দোলনের হুংকার দিয়েছিল সেভাবে এগোতে পারছে না। না পারার কারণ অবশ্য নানামুখী। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথাও বলেছেন। তবে সেটি কেমন হবে সেটির কোনও রূপরেখা জনগণের সামনে হাজির করতে পারেননি। সে কারণে মাঠের রাজনীতিতে তেমন জোশ এখনও তৈরি করতে পারছে না বিএনপি। তবে এ মাসটি এখনও হাতে আছে তাদের।

বিএনপির চূড়ান্ত শক্তি প্রদর্শনের সময় এখনই। তবে বিএনপি যে আন্তর্জাতিক চাপকে তাদের দিকে নিয়ে যাবে, সেটিও সম্ভব হচ্ছে না চূড়ান্তভাবে। কারণ, সবাই নিরপেক্ষ, সহিংসতাবিহীন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বললেও কেউ এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেননি।

তবে আপাতভাবে মনে হচ্ছে এখনও আশা ছাড়েননি বিএনপি নেতারা। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে। এ মাসেই জোর আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিতে পারে বলেই এতদিন বিএনপির নেতারা বলে এসেছেন। তবে বিএনপির নেতৃত্বের দুর্বলতা অনেকটাই যেন টান টান হয়ে দেখা দিচ্ছে। দলের একটা অংশ দেশের বাইরে থাকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার সংকট অনেকটাই যেন কাছ থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আগের মতো শরিক দলগুলোকে পাশে পাচ্ছে না বিএনপি। গত দুই বছর ধরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশলের অন‍্যতম ছিল বিএনপির জোট ভেঙে দেওয়া। সেই চেষ্টায় সফল হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির জোটভুক্ত ইসলামি দলগুলো এখন মাঠে আর বিএনপির সঙ্গে নেই। বরং বেশ কয়েক মাস আগে জামায়াতকে প্রকাশ‍্যে সভা করার অনুমতি এবং কারাগারে থাকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি বেশ কিছুটা চাপে ফেলেছে বিএনপিকে। তবে রাজনীতিতে যেহেতু শেষ বলে কিছু নেই, তাই শেষ পযর্ন্ত এই ইসলামি দলগুলো কোন জোটের সঙ্গে থাকবে সেটি এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে তাদের জোটভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে দুই পক্ষেরই।
 
সর্বশেষ আবার বেশ কিছু মাস থেকেই সবচেয়ে বেশি হাড় কাঁপানো ভয় তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি পরিবর্তনের ঘোষণা। এতদিন এটিকে জুজুর ভয় হিসেবে দেখলেও এখন যখন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে প্রয়োগ করার কথা বলছে তখন দুই দলের ওপর চাপ তৈরি করছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মাঝখানে শেখ হাসিনার বাইডেনের সেলফি অনেকের কাছে এই ভয়কে তাড়াতে কিছুটা মলম হিসেবে কাজ করলেও যুক্তরাষ্ট্র যে তার অবস্থান থেকে সরেনি তা বোঝা গেলো অল্প কিছু দিন পরেই। এরমধ‍্যেই গণমাধ‍্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আমলাদের মধ‍্যে যাদের সন্তানরা দেশের বাইরে অবস্থান করছে কিংবা পড়াশোনা করছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকার ভাবছে আমলাদের মধ‍্যে যাদের সন্তানরা আমেরিকায় পড়াশোনা করছেন, এই নির্বাচনে সরকারের পক্ষে তারা খুব বেশি ঝুঁকি নিতে যাবেন না। তাই বাইরে কিংবা বক্তৃতায় সেলফি রাজনীতি যতই করুক না কেন আওয়ামী লীগ ভেতরে ভেতরে ভিন্নভাবে সেটিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে।

ভিসা ইস‍্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপিও আন্দোলনের মাত্রা এবং কৌশল ঠিক করবে। সহিংসতার পথে যাওয়ার সুযোগ কম। আর সেটি কোনোভাবেই কাম‍্য নয়। এবং বিএনপির রাজপথের আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগকেও সতর্ক থাকতে হবে অনেক বেশি। কারণ, সেখানেও ভিসানীতির চাপ রয়েছে। তাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই অনেকটাই চাপে রয়েছে দুটো রাজনৈতিক দলই। হিসাব নিকাশের শেষ প্রান্তে এসে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না আসে তাহলে কীভাবে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ‍্য হিসেবে হাজির করা যায় সেই কৌশল এবং নীতি আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। বিষয়গুলো ক্রমশই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। তাই এই মাসের প্রতিটিক্ষণই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনই এই চিত্র পরিবর্তিত হতে পারে। জনগণকে এই সময়গুলো পার করতে হবে।

হিসাব অনুযায়ী এই মাসের শেষেই নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।  নির্বাচন  কমিশন থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে বলে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। তবে কবে হবে সেটি স্পষ্ট করে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে এ মাসেই অনেক চিত্র খোলাসা হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তবে এর বিকল্প হিসেবে তারা কী করবে সেটিও তাদের জনগণের কাছে বলতে হবে। এটি করতে না পারলে তাদের রাজনীতির বাকি কিছুই থাকবে না। হিসাবগুলো এখনও মেলানো কঠিন। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছে বলে অনেকেরই ধারণা। সেটির দিকে কি বিএনপি যাবে? সেই জটিল অঙ্কের হিসাব মেলানো হয়তো আমাদের কাজ না, তবে আমরা সেই সূত্রটি জানতে আগ্রহী।

লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়।
ইমেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ফুটবল লেখকদের ভোটে বর্ষসেরা ফডেন
ফুটবল লেখকদের ভোটে বর্ষসেরা ফডেন
চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন
চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন
টসে জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
টসে জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
কম শক্তির আবাহনীর বিপক্ষেও জিততে পারেনি মোহামেডান
কম শক্তির আবাহনীর বিপক্ষেও জিততে পারেনি মোহামেডান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ